কুণাল ঘোষ। —গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।
ধর্মতলায় গেরুয়া শিবিরের বুধবারের সভায় যে আশানুরূপ ভিড় হয়নি, তা ঘরোয়া আলোচনায় মানছেন বিজেপি নেতারা। তৃণমূল যাকে সভা শেষের অব্যবহিত পরেই বলেছিল, ‘ফ্লপ শো’। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ দাবি করলেন, বিজেপির ওই সভা ব্যর্থ হওয়ার দায়িত্ব দিলীপ ঘোষ, অনুপম হাজরা বা রাহুল সিংহদের নয়। এই দায় সুকান্ত মজুমদার এবং শুভেন্দু অধিকারীর।
শাসকদলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা অন্যতম মুখপাত্র বলেন, ‘‘শুভেন্দু, সুকান্তদের ছবি লাগিয়েই সভা করা হয়েছিল। তাই দায় তাঁদেরই। অনুপম, রাহুল বা দিলীপরা তো সেই অর্থে সামনের সারিতে ছিলেন না। অনুপম তো সভাতেই আসেননি।’’ যদিও বিজেপির বক্তব্য, এটা তৃণমূলের মতো ব্যক্তিভিত্তিক পার্টি নয়। বিজেপি সংগঠন নির্ভর দল। তবে কৌতূহলের বিষয় হল, কুণাল কেন দিলীপ, অনুপম, রাহুলদের কাঁধে ‘ব্যর্থতার’ দায় চাপাতে চাইলেন না? এর কোনও ব্যাখ্যা দেননি তৃণমূল মুখপাত্র। তবে রাজনৈতিক মহলের অনেকের মতে, রাজনীতিতে প্রতিপক্ষের মধ্যে অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরি করে দেওয়া পুরনো কৌশল। কুণাল সেই কারণেই হয়তো দু’জনের নামে দায় চাপাতে চেয়েছেন।
প্রসঙ্গত, কুণাল যে তিন নেতার নাম করে বলেছেন, তাঁদের দায় নয়, তাঁরা কেউই বিজেপিতে প্রথম সারিতে নেই। রাজ্য সভাপতি পদ থেকে দিলীপকে সরানো হয়েছিল ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের পরেই। সম্প্রতি তাঁকে সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাহুল সিংহ অনেক দিনই রাজ্য বিজেপিতে ‘কোণঠাসা’। আবার অনুপম কেন্দ্রীয় সম্পাদক হলেও তিনি গত কয়েক মাস ধরেই ‘বিদ্রোহী’। দলের রাজ্য নেতাদের বিরুদ্ধে খোলাখুলি আক্রমণ শানাচ্ছেন। এমন তিন জনকেই সভার ‘ব্যর্থতার’ দায় দিতে চাইল না তৃণমূল। বরং বন্ধনীর বাইরে রাখতে চাইল। যা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মত অনেকের।
বিধানসভায় তৃণমূলের উপমুখ্যসচেতক তথা বরাহনগরের তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায়ও সাংবাদিক বৈঠকে বিজেপির সভা নিয়ে কটাক্ষ করেছেন। তাপস বলেন, ‘‘ধর্মতলা বাংলার মানুষের আবেগের জায়গা। বিজেপি সেই আবেগের সঙ্গে মস্করা করতে গিয়েছিল। তার জবাব ওরা পেয়ে গিয়েছে।’’ পাশাপাশি, বুধবারের সভায় সুকান্তের বক্তৃতা নিয়েও তীব্র আক্রমণ শানিয়েছে তৃণমূল। ধর্মতলার সভাম়ঞ্চে সুকান্ত বলেছিলেন, ‘‘তৃণমূলের বিরুদ্ধে ঝান্ডাও থাকবে, ডান্ডাও থাকবে। তাতে তৃণমূল ঠান্ডা হয়ে যাবে।’’ বৃহস্পতিবার কুণাল বলেন, ‘‘বিজেপি যে ভাষা বোঝে, তৃণমূল যদি সেই ভাষায় কথা বলতে শুরু করে, তা হলে ঘরে-বাইরে বিপদে পড়তে হবে সুকান্ত মজুমদারকে।’’