(বাঁ দিকে) নরেন্দ্র মোদী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
বাংলার গরিব মানুষের কথা ভাবুন। তাঁরা যাতে ভাল চিকিৎসা পরিষেবা পান, তার খেয়াল রাখুক কেন্দ্র। এই আর্জি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি দিল্লির তরফে নবান্নকে একটি চিঠি পাঠিয়ে বলা হয়েছে, রাজ্যে ‘জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন’ প্রকল্পের টাকায় তৈরি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের রং নিয়মমাফিক না হওয়ায় রাজ্যের প্রাপ্য টাকা দেওয়া হবে না। নবান্ন সূত্রে জানা যায়, ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির রং গেরুয়া করতে বলে কেন্দ্র। এ নিয়ে আগেই নিন্দা করেছেন মমতা। এ বার বকেয়া অর্থ মেটানোর আর্জি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই তিনি লিখেছেন, ‘‘আমি আন্তরিক ভাবে অনুরোধ করছি যাতে আপনি বিষয়টায় হস্তক্ষেপ করেন এবং বিশেষ একটি রং ব্যবহার নিয়ে আপত্তি মিটিয়ে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের টাকা পাঠানো হয়।’’ বাংলার গরিব মানুষ যাতে ভাল স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে বঞ্চিত না হন, তা নিশ্চিত করার আর্জি জানিয়েছেন মমতা।
বুধবারই কলকাতায় এসেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। রাজ্যের দুর্নীতি নিয়ে আঙুল তোলার পাশাপাশি মমতার উদ্দেশেও চ্যালেঞ্জ ছোড়েন। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বাংলার জন্য অতীতের তুলনায় বেশি বরাদ্দের পরিসংখ্যানও দেন। এর পরে বৃহস্পতিবার তৃণমূলের একাধিক নেতা এবং এক বিধায়কের বাড়িতে চলছে সিবিআই তল্লাশি। আর সেই দিনেই মোদীর উদ্দেশে চিঠি পাঠালেন মমতা। যদিও সেই চিঠির মূল বিষয়ের মধ্যেও রয়েছে কেন্দ্র বনাম রাজ্যের ‘রং’ রাজনীতি।
রং নিয়ে রাজনীতির অভিযোগ বেশ কিছু দিন ধরেই তুলেছে তৃণমূল। রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে রাস্তাঘাটের রেলিং থেকে শুরু করে সরকারি ভবন, সবই নীল-সাদা রং করায় তৃণমূল সরকার। রাজ্যের মুখ্য সচিবালয়ের রংও নীল-সাদা। পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের অর্থে বাংলায় সম্প্রতি তৈরি হয়েছে ৪৭৪টি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র। ৬৫টি ব্লক ও ২৮টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এগুলির রংও নীল-সাদা। এখানেই আপত্তি কেন্দ্রের। ‘জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন’ প্রকল্প নিয়ে কেন্দ্রের দাবি, প্রকল্পের ‘ব্র্যান্ডিং’ মানেনি পশ্চিমবঙ্গ সরকার। ‘ব্র্যান্ডিং’-এর মধ্যে প্রকল্পের নাম যেমন থাকে, তেমনই এই প্রকল্পে তৈরি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বাড়ির রংও রয়েছে। সেটা গেরুয়া। এই প্রকল্পের ৬০ শতাংশ টাকাই দেয় কেন্দ্র। বাকি ৪০ শতাংশ রাজ্যের। এখন রাজ্য শর্ত মানেনি অভিযোগে কেন্দ্রের অর্থের অংশ ৮২৬.৭২ কোটি টাকা রাজ্যকে দেওয়া হচ্ছে না বলেই নবান্ন সূত্রে জানা যায়।
এ নিয়ে রাজ্য মন্ত্রিসভার গত বৈঠকেই সরব হন মমতা। তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, বৈঠকে মমতা বলেছিলেন, ‘‘সব কিছু ওরা গেরুয়া করে দিচ্ছে। স্টেডিয়াম থেকে শুরু করে রেলস্টেশন, সরকারি বাড়ি— সব কিছু গেরুয়া করে দিচ্ছে। সব কিছুরই রাজনীতিকরণ হয়ে যাচ্ছে।’’ এর পরে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলের কর্মসূচিতে মমতা বলেন, ‘‘রাজ্যের প্রকল্পগুলোয় গেরুয়া রং না করলে টাকা দেবে না বলছে। কী সাহস!’’
রাজনৈতিক আক্রমণের পাশাপাশি, এ বার প্রশাসনিক ভাবে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে রাজ্যে সরকার যে সাধারণ মানুষকে সস্তায় স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে বদ্ধপরিকর সে কথার উল্লেখ করে গত বারো বছরে বাংলায় কী কী হয়েছে তা জানিয়েছেন। লিখেছেন, স্বাস্থ্যসাথী, শিশুসাথী, মাতৃমা, চোখের আলো প্রকল্পের সাফল্যের কথা। ‘জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন’ প্রকল্পের কাজও যে বাংলায় সুচারু ভাবে করা হয় তা-ও জানিয়েছেন। সেই সঙ্গেই লিখেছেন, ‘‘কেন্দ্রের দাবি মেনে এতগুলি ভবনের রং বদল করতে হলে অনেক টাকা খরচ হবে।’’ এর পরেই মোদীকে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করে গরিব মানুষের স্বার্থে বকেয়া অর্থ পাঠানোর আর্জি জানিয়েছেন।