অর্জুনকে কটাক্ষ দিলীপের
পাট শিল্পের ‘অজুহাত’ দিয়েই বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন অর্জুন সিংহ। ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদের দলত্যাগের আসল কারণ, তাঁর উপর শাসকদলের প্রবল চাপ। ওই চাপের কাছে অর্জুন আত্মসমর্পণ করেছেন বলে মন্তব্য করলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপের দাবি, ‘‘বাধ্য হয়েই তৃণমূলে গিয়েছেন অর্জুন।’’
রবিবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন ঘটে অর্জুনের। এর পর রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিক-সহ কয়েক জনের উপস্থিতিতে সাংবাদিক বৈঠক করেন অর্জুন। সদ্য বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া সাংসদ বলেন, ‘‘ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এসেছি। ভুল বোঝাবুঝিতে দল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছিলাম।’’
এর পরেই দলত্যাগের কারণ ব্যাখ্যা করে অর্জুন বলেন, ‘‘বিজেপিতে গিয়ে ব্যারাকপুরের সাংসদ হয়েছিলাম। কিন্তু রাজ্যে দীর্ঘ দিন ধরেই পাটশিল্পের সমস্যা রয়েছে। এই শিল্প অবহেলার শিকার হয়েছে। রাজ্যের ৬২টি জুট মিলের মধ্যে বেশ কয়েকটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আমি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে বোঝাতে চেষ্টা করেছি অনেক। তার আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত নভেম্বর মাসে পাটকল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়েছিলেন। এই শিল্পে নজর দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন তিনি। এই খবরটা পাওয়ার পর থেকে আমি লড়াই শুরু করে দিই কেন্দ্রের বস্ত্র মন্ত্রকের বিরুদ্ধে। আপাতত ২৫ শতাংশ আদায় করতে পেরেছি। কিন্তু ৭৫ শতাংশ বাকি রয়েছে। আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে যদি লড়াই না লড়তে পারি, তা হলে আমাদের আরও ক্ষতি হবে।’’
বিগত কয়েক দিন ধরেই বাংলার পাটশিল্পের জন্য নানা দাবিদাওয়া নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছিলেন অর্জুন। কয়েক বার দিল্লি উড়ে গিয়েও প্রশমিত হয়নি অর্জুনের ‘অসন্তোষ’। উল্টে প্রকাশ্যে কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের বিরুদ্ধেই তোপ দাগতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। সেই ঘটনাপ্রবাহই উস্কে দেয় অর্জুনের দলত্যাগের জল্পনা। যদিও দলত্যাগী অর্জুনের যুক্তি মানতে নারাজ দিলীপ। তিনি বলেন, ‘‘উনি বলেছেন, পাট শিল্পকে বাঁচাতে বিজেপি ছেড়েছেন। তৃণমূল পাট শিল্পকে বাঁচাতে পারবে? টিএমসি বাঁচবে কি না ঠিক নেই! কিছু একটা বাহানা তো দিতে হবে! ওঁর সঙ্গে এ নিয়ে দলের সর্বোচ্চ নেতারা কথা বলেছেন। পুরনো বাড়িতে গিয়েছেন, লজ্জা কিসের!’’
প্রায় তিন বছর পর পুরনো দলে ফিরে বঙ্গবিজেপির নেতৃত্বকে কটাক্ষ করে অর্জুন বলেছেন, ‘‘ঠান্ডা ঘরে বসে আর ফেসবুকে রাজনীতি হয় না।’’ পাল্টা জবাবে দিলীপ বললেন, ‘‘আমরা যদি ফেসবুকে রাজনীতি করি, তা হলে আমাদের ২০০ কর্মী খুন হলেন কী করে? উনি তৃণমূল ছাড়ার পর ওঁর বিরুদ্ধে একশোরও বেশি কেস হয়েছে। উনি কি ঠান্ডা ঘরে বসে কেস খেলেন? দলবদল রাজনীতির একটা অঙ্গ হয়ে গিয়েছে। কেই তাড়াতাড়ি যান, কেউ একটু দেরি করে। আসলে অর্জুন চাপে পড়ে চলে গিয়েছে। ওঁর একাধিক ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর পর হয়তো আর লড়াই করা সম্ভব ছিল না। প্রশাসনিক চাপ সহ্য করতে পারছেন না তাই সারেন্ডার (আত্মসমর্পণ) করেছেন।’’