বুধবার পার্লামেন্ট স্কোয়ারে মহাত্মা গান্ধীর মূর্তির সামনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
বাপুকে মিনতি
পার্লামেন্ট স্কোয়ারে মহাত্মা গান্ধীর মূর্তি দেখে হাঁটতে হাঁটতে দাঁড়িয়ে পড়লেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বগতোক্তি করলেন, ‘‘একটু প্রণাম করে যাই।’’ পরক্ষণেই তাঁর খেয়াল হল, ‘‘আরে, ফুল তো আনিনি! আগে জানলে একটু ফুল নিয়ে আসতাম।’’ কিন্তু বাঙালিকে কি ফুলের অভাবে দাবায়ে রাখা যায়? এ দিক-ও দিক খোঁজ করতে করতে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তারক্ষী কুসুমকুমার দ্বিবেদী আলগোছে মূর্তির পাশের পুঁচকে বাগান থেকে কয়েকটি ফুল তুলে আনলেন হাত বাড়িয়ে। পায়ের চটি খুলে মূর্তির পাদদেশে সেই ফুল অর্পণ করলেন মমতা। তার পরে অস্ফুটে বললেন, ‘‘বাপু, সংবিধানটাকে রক্ষা কোরো!’’
হাঁটো তো দেখি!
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এসে পড়ছেন বুধবার রাতে। বৃহস্পতিবার তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যাবেন অক্সফোর্ডের কেলগ কলেজে। তার আগে মঙ্গলবার বিকেলে দিদির হোটেলে এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করে গেলেন সৌরভের পত্নী ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়। সঙ্গে এসেছিলেন তাঁর নাচের দলের কয়েক জন সদস্যও। আগামী সপ্তাহে লন্ডনে নাচের অনুষ্ঠান রয়েছে ডোনা এবং তাঁর সঙ্গীদের। মমতার সঙ্গে সংক্ষিপ্ত সাক্ষাতে ডোনা পেলেন সোয়েটার উপহার। নিজেই জানালেন মমতা, ‘‘ভাবলাম ওকে কিছু একটা দিই। কিন্তু অত কম সময়ে আর কী পাব? ঠান্ডার জন্য একটা নতুন সোয়েটার এনেছিলাম। সেটাই ওকে দিয়ে দিলাম।’’ সোয়েটার উপহার দেওয়ার পাশাপাশি ডোনাকে বুধবার তাঁর সঙ্গে হাঁটতে যাওয়ার আমন্ত্রণও জানিয়েছেন মমতা। বুধবার স্থানীয় সময় বেলা ১২টায় হাঁটতে বেরোনোর কথা ছিল মমতার। ডোনা আপত্তি করেননি। কারণ, একে তিনি নৃত্যশিল্পী। ফলে পায়ের জোর রাখতে হয়। তার উপর এমনিতেই নাকি লন্ডনে প্রচুর হেঁটে বেড়ান। এত দিন ধরে আছেন। এমনিতেই সেন্ট্রাল লন্ডন তাঁর হাতের তালুর মতো চেনা। দিদির সঙ্গে হন্টনের অভিজ্ঞতা অবশ্য এই প্রথম।
মমতার সঙ্গে হাঁটছেন সৌরভের পত্নী ডোনা। —নিজস্ব চিত্র।
আমাদেরও আছে
হাঁটতে হাঁটতে বিগ বেনের সামনে এসে পড়লেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পরে টেমসের পার ধরে তিনি হাঁটতে থাকবেন। মাঝে একটা পার্ক পেয়ে একটু দৌড়েও নেবেন। আর একটু ব্যাক ওয়াক। কিন্তু বিগ বেন তো বিগ বেনই। এবং লেকটাউনের মোড়। মমতাকে সে কথা বলতে তিনি বললেন, ‘‘আমাদের ওখানে সব আছে। ইকো পার্কেও তো বিগ বেন আছে।’’
—নিজস্ব চিত্র।
চার মিনিট বাকি
সেন্ট জেমস কোর্ট হোটেলে শিল্প সম্মেলন শুরু হওয়ার কথা দুপুর দুটোয়। মিনিট দশেক আগেই পৌঁছে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেটা অবশ্য ‘খবর’ নয়। কারণ, মমতা সর্বত্রই সময়ের আগে পৌঁছে যান। ঘড়ির কাঁটায় সময় তো রাখেনই। বস্তুত, ঘড়ির কাঁটার খানিক আগেই পৌঁছোন। শিল্প সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা যখন এলেন, তত ক্ষণে হলঘর ভর্তি। চলে এসেছেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, শিল্পসচিব বন্দনা যাদব। আগে পৌঁছে গেলেও মমতা অবশ্য মঞ্চে ওঠেননি। নীচেই বসেছিলেন অভ্যাগতদের সঙ্গে। তবে পুরোহিত এসে গেলে যজ্ঞ শুরু করে দেওয়াই বিধেয়। তাই বন্দনা পোডিয়ামের সামনে দাঁড়িয়ে কর্মসূচি শুরু করে দিলেন। ঘোষণা শুরু করতেই মুখ্যমন্ত্রী বলে উঠলেন, ‘‘এখনও চার মিনিট বাকি কিন্তু!’’
সেন্ট জেমস কোর্ট হোটেলে মঙ্গলবার শিল্প সম্মেলনের আগে মমতা। —নিজস্ব চিত্র।
ছবি? সকলে এসো!
মঙ্গলবার শিল্প সম্মেলনের পরেই হাঁটতে বেরিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। খানিকটা বিগ বেন, খানিকটা সেন্ট জেমস পার্ক, খানিকটা ক্যাভালরি মিউজ়িয়াম, খানিকটা বাকিংহাম প্যালেস। যেখানেই যান, ভারতীয়েরা চিনে ফেলেন আর ছবি তোলার অনুরোধ করেন। একটা সময়ে তো আঁচল দিয়ে মুখই ঢেকে নিলেন। যাতে লোকে চিনতে না পারে। কিন্তু ভবি কি আর অত সহজে ভোলে। একে লন্ডনের রাস্তায় আটপৌরে শাড়ি আর হাওয়াই চটি। তায় সঙ্গে হাঁটছে একটা জটলা। সমাজমাধ্যমের যুগে কে কোথায় যাচ্ছেন, তা তো আর গোপন থাকে না। নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হলে আরওই থাকে না। ফলে লোকে তাঁকে চিনছেন এবং একগাল হেসে নমস্কার করে পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার অনুরোধ করছেন। তাঁদের মধ্যে কতিপয় কলকাতাবাসীও আছেন। লন্ডনে বেড়াতে এসেছেন। আবার কেউ থাকেন বস্টনে। বেড়াতে এসে আচমকা মুখোমুখি হয়ে গিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর। মমতা সকলের ছবি তোলার আবদারই মেটালেন। কিন্তু কারও সঙ্গে একলা দাঁড়িয়ে ছবি তুললেন না। স্বাভাবিক। ব্যক্তিগত ভাবে কাউকে চেনেন না। কে কোথায় ছবি তুলে পোস্ট করে দেবে আর তার দায় এসে পড়বে তাঁর উপর। ছবি তোলা নিয়ে মমতা অবশ্য বরাবরই স্পর্শকাতর। যেমন, তাঁর সঙ্গে কারও নিজস্বী তোলা নিষেধ। তাতে নৈকট্য বেশি বোঝা বা বোঝানো যায়। একলা একলা ছবি তোলাও বারণ। তবে গ্রুপ ছবিতে আপত্তি নেই। লন্ডনেও আপত্তি হল না। ছবি তোলার আগে সকলকে ডেকে নিলেন মমতা। তার পরে হাসিমুখে পোজ় দিলেন অকাতরে।
—নিজস্ব চিত্র।