সম্মেলনের ঘেরাটোপে লাল পতাকার পাশ দিয়েই দেখা যাচ্ছে ধুলোয় ঢাকা ভাঙা ন্যানো। ছবি: শোভন চক্রবর্তী।
বুদ্ধনগরে ভাঙা ন্যানো
ডানকুনি কোল কমপ্লেক্সের ভিতরে যেখানে সিপিএমের রাজ্য সম্মেলন হচ্ছে, তার কয়েক মিটার দূরেই ডানকুনি থানা। থানার পাশেই সারি দিয়ে রাখা বাজেয়াপ্ত হওয়া গাড়ি। তারই মধ্যে রয়েছে একটি সবুজ রঙের টাটা ন্যানো, যে গাড়িতে ধুলোর স্তর পুরু। ঘটনাচক্রে, এই গাড়ির কারখানা নির্মাণের জন্যই আজকের সম্মেলনস্থল থেকে ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে ২০০৬ সালে জমি অধিগ্রহণ করেছিল তৎকালীন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সরকার। কারখানা শেষ পর্যন্ত হয়নি। সিঙ্গুর আন্দোলন ছিল বুদ্ধদেব সরকারের পতনের অন্যতম কারণ। সিপিএমের সম্মেলনস্থলের নাম বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য নগর। সেখানেই খানিকটা যেন বর্তমান সিপিএমের অভিজ্ঞান হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ভাঙা, ধুলো পড়া ন্যানো। সামনে ঝুলছে লালঝান্ডা। দিন চারেকের জন্য। সিপিএমের অনেকে ভাঙা ন্যানোর ছবিও তুলছেন। কী বুঝে, কে জানে?
একটিই নীলবাতি
একটা সময়ে সিপিএমের রাজ্য সম্মেলন মানে লালবাতি লাগানো গাড়ির ছড়াছড়ি থাকত। মন্ত্রী, সাংসদ, জেলা সভাধিপতিদের গাড়ি আর নিরাপত্তারক্ষীতে ছেয়ে যেত এলাকা। এখন ‘সেই রামও নেই, সেই অযোধ্যাও নেই’। সম্মেলনের বাইরে শুধু একটিই নীলবাতি লাগানো স্করপিও। সৌজন্যে ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। গত ২০ ফেব্রুয়ারি মানিক কলকাতায় পৌঁছোন। তার পর থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দেওয়া গাড়িতেই সফর করছেন তিনি। এটাই প্রোটোকল।
বাংলায় এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের দেওয়া এই গাড়িটিতেই চড়ছেন মানিক সরকার। ছবি: শোভন চক্রবর্তী।
সাড়ে চার ভিআইপি
লোকসভা, বিধানসভায় সিপিএম শূন্য। রাজ্যসভায় বাংলা থেকে তাদের একমাত্র প্রতিনিধি বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। একদা সিপিএমের কর্মসূচি হলে যেমন ভিআইপিদের ছড়াছড়ি থাকত, এখন তা নেই। তবে একেবারেই কি নেই? আছে। পুলিশ সূত্রে খবর, তারা চার জনকে ভিআইপি হিসাবে দেখছে। আর এক জনকে ধরা হচ্ছে অর্ধেক ভিআইপি। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার, প্রকাশ কারাট এবং বৃন্দা কারাটের নিরাপত্তাকে পুলিশ নির্দিষ্ট ভাবে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। আর পুলিশেরই কথায়, ‘হাফ ভিআইপি’ ধরা হচ্ছে সিপিএমের যুবনেত্রী মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়কে।
সিপিএমেও ‘খেলা হচ্ছে’
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ চলছে দুবাইয়ে। ডানকুনিতে সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনের তল্লাটেও সেই উত্তেজনার আঁচ। বাইরে স্বেচ্ছাসেবকদের অনেককেই দেখা গেল মোবাইলে খেলা দেখতে। সূত্রের খবর, সম্মেলন কক্ষে প্রতিনিধিদেরও অনেকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর পকেট থেকে মোবাইল বার করে স্কোর দেখে নিচ্ছেন।
হঠাৎ হাজির তন্ময়
সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনস্থলে রবিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ হাজির হলেন দলের নির্দেশে সাসপেনশনে থাকা তন্ময় ভট্টাচার্য। দু’জন অনুগামীকে সঙ্গে নিয়ে আসেন তিনি। সম্মেলন কক্ষের বাইরে যেখানে খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা সেখানে যান। পরিচিতদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁকে দেখে কেউ কেউ সচেতন ভাবে এড়িয়েও যান। খানিক ক্ষণ থেকে সন্ধ্যা ৭টা ২০ নাগাদ বেরিয়ে যান তিনি। বেরোনোর সময়ে প্রশ্ন করায় তন্ময় বলেন, ‘‘আমি সম্মেলনে নেই। তাই কিছু বলব না। তবে সাজসজ্জা খুব সুন্দর হয়েছে।’’
সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনস্থলে রবিবার সন্ধ্যায় হাজির সাসপেনশনে থাকা তন্ময় ভট্টাচার্য। ছবি: শোভন চক্রবর্তী।
দুই চেয়ারম্যান
বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু সিপিএমের সম্মেলনে রয়েছেন। কিন্তু আরও এক চেয়ারম্যানকে নিয়ে আলোচনা রয়েছে বুদ্ধনগরে। একটি সাদা বোলেরো গাড়ি দাঁড় করানো থাকছে সম্মেলনকক্ষের বাইরে। অনেকেই প্রথমে বুঝতে পারেননি, ‘চেয়ারম্যান’ স্টিকার সাঁটা গাড়িতে আবার সিপিএমের সম্মেলনে কে? খোঁজ নিয়ে জানা গেল সেটি তাহেরপুরের পুর-চেয়ারম্যান উত্তমানন্দ দাসের গাড়ি। রাজ্যের এই একটি পুরসভাই এখনও বামেদের হাতে রয়েছে। সেই উত্তমানন্দ এসেছেন নদিয়ার প্রতিনিধি হয়ে।
(শোভন চক্রবর্তী)