ধর্নায় আয়ারা। —নিজস্ব চিত্র।
মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে জেনেও ওঁরা করোনা আক্রান্তদের সেবা করতে চান। ওঁরা সকলেই কর্মসূত্রে চন্দননগর মহকুমা হাসপাতালের আয়া। কিন্তু কোভিড হাসপাতাল করে দেওয়ায় ওঁরা সকলেই কাজ হারিয়েছেন। কোভিড ওয়ার্ডে তাদের ঢোকা নিষেধ। কিন্তু চলবে কী ভাবে? সুরাহার দাবিতে হাসপাতাল সুপারের ঘরের সামনে বৃহস্পতিবার ধর্নায় বসলেন ওই আয়ারা। তাঁরা কাজ চান। না হলে তাদের পেট চলবে না।
চন্দননগর মহকুমা হাসপাতালে আয়ার কাজ করেন প্রায় ৮০ জন। রোগীদের সেবা করেই তাঁদের সংসার চলে। তাঁদেরই এক জন পূর্ণিমা চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘আমরা কেউ ২০, কেউ ২২, কেউ আবার ৩০ বছর কাজ করছি। গত বছর করোনার সময়েও কাজ করেছি। কিন্তু এ বছর সুপার বলছেন, আমাদের আর কোনও কাজ দেবেন না। কী করে চলবে? আমাদের উপর গোটা সংসার নির্ভর করে রয়েছে।’’ কোভিড হাসপাতালে তাঁরা কাজ করতে রাজি বলেও জানিয়েছেন পূর্ণিমা। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা লিখিত দিতে রাজি। কোভিড হাসপাতালে কাজ করতে গিয়ে যদি আমাদের কিছু হয়ে যায়, তা হলে কেউ দায়ী থাকবে না।’’
এই হাসপাতালে দীর্ঘ দিন আয়ার কাজ করছেন কাজল মাঝি। বৃহস্পতিবার তিনিও সুপারের ঘরের সামনে ধর্নায় ছিলেন। কাজল বলেন, ‘‘কাজ না থাকলে আত্মহত্যা করা ছাড়া উপায় থাকবে না। আমাদের যা হোক একটা কিছু ব্যবস্থা করুন কর্তৃপক্ষ। কোভিড রোগীদের শুশ্রূষার প্রয়োজনে যা যা করার আমরা করতে চাই। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিছুতেই করতে দিচ্ছেন না। সুপারকে বার বার বলেছি, উনি শুনছেন না। তাই ধর্নায় বসেছি।’’
হাসপাতাল সুপার রঞ্জনকুমার দে যদিও আয়াদের এই দাবি মানতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘‘এ ভাবে আয়াদের দিয়ে কোভিড রোগীদের শুশ্রূষার কাজ করানো যায় না। এটা প্রোটোকলে আটকায়। সরকারি কোনও নির্দেশও নেই।’’
হুগলির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তীও একই কথা জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘করোনা-আক্রান্ত রোগীদের সেবা করতে গেলে কোভিড প্রোটোকল মানতে হয়। নার্সরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তাঁরা জানেন কী ভাবে সেবা করতে হয়। আয়াদের সেই প্রশিক্ষণ না থাকাটাই তাঁদের কাজের অন্তরায়।’’