সভা ঘিরে ব্যস্ততা দলের কর্মীদের।—নিজস্ব চিত্র।
২০১১ সালে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে এই প্রথম বনগাঁ শহরে সভা করতে আসছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ, সোমবার স্টেডিয়াম মাঠে বনগাঁ কেন্দ্রে দলের প্রার্থী কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের সমর্থনে ভাষণ দেবেন তিনি। বনগাঁ স্টেডিয়াম-সংলগ্ন মাঠে ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে হেলিপ্যাড তৈরির কাজ। দু’বার সেখানে উড়ানের মহড়াও হয়েছে। মঞ্চ তৈরির কাজও প্রায় শেষ।
জেলা তৃণমূল সূত্রে খবর, এ বার বিজেপি বনগাঁ কেন্দ্রে মতুয়া সম্প্রদায়ের কৃষ্ণদাস বিশ্বাসকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করানোয় মতুয়া ভোটের ভাগাভাগি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর সেটা রুখতেই এলাকায় এসে মতুয়া সম্প্রদায়ের উন্নয়নের জন্য তৃণমূল কী কী করেছে, তার তালিকা দিতে পারেন নেত্রী। এ ছাড়াও, সম্প্রতি কপিলকৃষ্ণবাবুকে প্রার্থী করা নিয়ে স্থানীয় তৃণমূলের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। জেলা তৃণমূলের একাংশের মতে, নেত্রীর আসার পিছনে সেটাও একটা বড় কারণ। পাশাপাশি, বনগাঁ এলাকার মানুষের বহুদিনের দাবি, ইছামতী নদী সংস্কার ও বনগাঁ হাসপাতালের উন্নয়নের তৃণমূল সরকার কী কী কাজ করেছে, তারও ফিরিস্তি দলের নেত্রী এ দিন দিতে পারেন।
বস্তুত, বনগাঁর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দলের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। নেত্রীর নিজের কথায়, “এখানকার মাটি আমার কাছে পুণ্যভূমি।” ২০০৬ সালে বিধানসভা ভোটে গোটা রাজ্যে তৃণমূলের ভরাডুবির মধ্যেও বনগাঁ, বাগদা ও গাইঘাটা কেন্দ্রে জিতেছিলেন তৃণমূল প্রার্থীরা। শপথগ্রহণের আগেই বনগাঁ বিধানসভা কেন্দ্রের জয়ী তৃণমূল প্রার্থী ভূপেন্দ্রনাথ শেঠ মারা যাওয়ার পরে উপনির্বাচনেও জিতেছিলেন তৃণমূলের সৌগত রায়। ২০০৯ সালের লোকসভায় আবার তিনি দমদম কেন্দ্র থেকে দাঁড়ানোয় ফের উপনির্বাচন হয় ওই কেন্দ্রে। তখনও ভূপেনবাবুর ছেলে গোপাল শেঠ তৃণমূলের টিকিটে দাঁড়িয়ে ওই কেন্দ্র থেকে জেতেন। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটেও ওই এলাকায় এগিয়ে ছিল তৃণমূল। সে সময় থেকেই সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধান উপদেষ্টা বড়মা বা বীণাপানি ঠাকুরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা শুরু হয় তৃণমূল নেত্রীর। ২০০৯ সালেও ওই লোকসভা কেন্দ্রে জয়ী হন তৃণমূলের গোবিন্দচন্দ্র নস্কর।
কিন্তু ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটের পরে রাজ্যে পালাবদল ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে আর জনসভা করতে দেখা যায়নি তৃণমূল নেত্রীকে। যদিও গাইঘাটার ঠাকুরনগরে প্রস্তাবিত প্রমথরঞ্জন ঠাকুর ডিগ্রি কলেজের শিলান্যাসের সরকারি অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন তিনি। আর পেট্রাপোলে সুসংহত চেকপোস্ট তৈরির শিলান্যাসে তত্কালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের সঙ্গে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। তবে তার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক ছিল না।
এই তিন বছরে তৃণমূল নেত্রী বিশেষ না আসায় খানিকটা হলেও ধাক্কা খেয়েছে এলাকার মানুষের প্রত্যাশা। বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী হয়ে উনি আগে আসলে ভাল লাগত।” এলাকার এক বৃদ্ধের আবার টিপ্পনি, “এখানে বিজেপির হাওয়া ভাল। না হলে উনি হয় তো এ বারেও আসতেন না।”
কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না বিরোধীরাও। বিজেপি প্রার্থী কে ডি বিশ্বাসের যেমন বক্তব্য, “এত দিন উনি আসেননি। এখন বিজেপি আর আমার ভয়ে এখানে আসছেন।” অন্য দিকে, বামপ্রার্থী দেবেশ দাসের মন্তব্য, “উনি এলেও এখানকার ভোটে তার কোনও প্রভাব পড়বে না।”
কিন্তু এই সব মন্তব্যকে তেমন গুরুত্ব দিতে রাজি নন তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তাঁর পাল্টা দাবি, “বনগাঁয় অনেক বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষ রয়েছেন। তাঁদের চলে যেতে বলে এখানকার মানুষকে অপমান করেছেন মোদী ও বিজেপি। তারই জবাব দিতে তৃণমূল নেত্রী আসছেন।” জ্যোতিপ্রিয়বাবুর আরও সংযোজন, “২০০১ সাল থেকে বিধানসভা ভোট হোক বা লোকসভা ভোট মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখানে সভা করতে এসেছেন। বনগাঁ তাঁর কাছে আলাদা জায়গা।” বিজেপি প্রার্থীর এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর বক্তব্য, “এ বার ভোটে ওঁর তো জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। ওঁর কথার উত্তর দেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই।”
দীর্ঘ দিন বাদে মমতার সভাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা উত্সাহিত বলে দাবি বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিত্ দাসের। তাঁর কথায়, “আজ এই সভায় যা লোক হবে, তাতে বনগাঁ শহর অবরুদ্ধ হয়ে যাবে। দিদি আসবেন বলে কর্মী-সমর্থকেরাও উজ্জীবিত।”
জেলা তৃণমূল সূত্রে খবর, সভার দিন লোক জড়ো করার উদ্দেশে বেশ কয়েকদিন ধরেই গ্রামে গ্রামে গিয়ে পথসভা, জনসভা করছেন দলের নেতা-কর্মীরা। লোক টানতে মমতার সঙ্গে চিত্রতারকারা থাকবেন বলেও প্রচার চালানো হচ্ছে। ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে মিঠুন চক্রবর্তীর নামও। হাবরা ও দেগঙ্গাতেও সোমবার সভা করার কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।