প্রচারে নেমে ইছামতীর কচুরিপানা সাফাই প্রার্থীর

প্রচারে বেরিয়ে ইছামতীতে নেমে কচুরিপানা সরালেন বনগাঁর বিজেপি প্রার্থী কৃষ্ণদাস বিশ্বাস। বুধবার সকালে বনগাঁ-বাগদা রোড ধরে প্রচারে বেরিয়েছিলেন। পাইকপাড়া এলাকায় ইছামতী নদীতে কচুরিপানা জমে থাকতে দেখে গাড়ি থেকে নেমে পড়েন তিনি। চলে যান নদীর ধারে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বনগাঁ শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৪ ০০:৫৬
Share:

কচুরিপানা সরাচ্ছেন কে ডি বিশ্বাস (বাঁদিকে)। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

প্রচারে বেরিয়ে ইছামতীতে নেমে কচুরিপানা সরালেন বনগাঁর বিজেপি প্রার্থী কৃষ্ণদাস বিশ্বাস। বুধবার সকালে বনগাঁ-বাগদা রোড ধরে প্রচারে বেরিয়েছিলেন। পাইকপাড়া এলাকায় ইছামতী নদীতে কচুরিপানা জমে থাকতে দেখে গাড়ি থেকে নেমে পড়েন তিনি। চলে যান নদীর ধারে। বাসিন্দাদের অভাব অভিযোগ শোনার পরে নিজেই নদীতে নেমে কচুরি পানা তুলতে শুরু করেন। তাঁর সঙ্গে নেমে পড়েন কর্মী-সমর্থকেরাও।

Advertisement

ইছামতীর কচুরিপানা সরানো নিয়ে বাসিন্দাদের অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। বাগদার দত্তফুলিয়া থেকে গাইঘাটার বেড়ি গোপালপুর পর্যন্ত প্রায় ৮০ কিলোমিটার অংশের বেশিরভাগই কচুরিপানায় ভরা। শুকিয়ে দুর্গন্ধও বেরোচ্ছে। মশা, সাপের উপদ্রব বেড়েছে।

প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, অতীতে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে নদী থেকে কচুরিপানা তোলা হত। কিন্তু কয়েক বছর আগে কেন্দ্র সরকার ওই প্রকল্পে কচুরিপানা তোলার উপর বিধি নিষেধ আরোপ করায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। ‘পশ্চিমবঙ্গ ইছামতী নদী সংস্কার কমিটি’র তরফেও প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে কচুরিপানা তোলার দাবি জানানো হয়েছে। কমিটির সম্পাদক সুভাষ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সেচ-সহ বিভিন্ন মহলে কচুরিপানা তোলার জন্য দাবি জানানো হয়েছে। দীর্ঘদিন তা না হওয়ায় জল দূষিত হয়ে গিয়েছে।” ফলে স্নান থেকে শুরু করে চাষের জল নেওয়াও বন্ধ নদী থেকে।

Advertisement

এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ গাড়িতে প্রচারে বেরিয়েছিলেন কে ডি বিশ্বাস। পরনে সাদা পাঞ্জাবি, পাজামা। পায়ে চামড়ার জুতো। পাইকপাড়ায় ইছামতীর কাছে এসে আচমকা গাড়ি থেকে নেমে হাঁটা দেন নদীর দিকে। পিছু নেন কর্মীরা। ভিড় জমে যায় কৌতুহলী বাসিন্দাদের। তাঁদের কথা শুনতে শুনতে হঠাত্‌ই জুতো ছেড়ে জলে নেমে পড়েন তিনি। নেমে পড়েন কর্মীরাও। এগিয়ে আসেন বাসিন্দারাও। কোমর জলে দাঁড়িয়ে প্রায় এক ঘণ্টা কচুরিপানা সরানোর পরে জল থেকে ওঠেন তিনি। পাঞ্জাবির রং তখন পাল্টে গিয়েছে। গা কুটকুট করছে। বাসিন্দাদের পরামর্শে সর্ষের তেল মেখে সামনের একটি নলকূপে স্নান করলেন তিনি। বাসিন্দাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমাদের ইছামতী নদী মজে যাচ্ছে। কচুরিপানা তোলার ব্যাপারে সরকার উদ্যোগী হয়নি। আমার যে সদিচ্ছা রয়েছে, তা বোঝাতেই কচুরিপানা তুললাম।” তাঁর বক্তব্য, “প্রচারে আমার প্রধান বিষয় হিসেবে থাকছে ইছামতী নদীর পূর্ণাঙ্গ সংস্কার। নির্বাচিত হলে কচুরিপানা সরানো ও নদীর পূর্ণাঙ্গ সংস্কারই হবে আমার প্রথম ও প্রধান কাজ।” প্রার্থীর এমন আচরণে অবাক বাসিন্দারাও। তাঁদের কথায়, “কোনও প্রার্থী নদীতে নেমে কচুরি পানা পরিষ্কার করছেন, এমনটা আগে দেখিনি।”

তবে গোটা বিষয়টিকে প্রচারের চমক বলেই দেখছে তৃণমূল। বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিত্‌ দাস বলেন, “বনগাঁর বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও অতীতে কেন ইছামতী নিয়ে কথা বলেননি কে ডি? কেনই বা নদীতে নেমে কচুরিপানা তোলেননি? এটা প্রচারের চমক ছাড়া আর কী? সাধারণ মানুষ ভোট বাক্সে এই নাটকের জবাব দেবেন।” তাঁর দাবি, প্রতি বছর বর্ষার আগে প্রশাসনের তরফে কচুরিপানা তোলা হয়। এ বারও নির্বাচনের পরে সেই কাজ হবে। রাজ্যের তরফে নদী সংস্কারের কাজ কালাঞ্চি সেতু থেকে টিপি পর্যন্ত চলছে। প্রয়োজনে বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের তরফ থেকে কচুরিপানা তোলা হবে। জেলা পরিষদের সভাপতি রহিমা মণ্ডল বলেন, “কচুরিপানা তোলার বিষয়টি সেচ দফতরের বিদ্যাধরী ড্রেনেজ ডিভিশনকে জানানো হয়েছে। নির্বাচনের পরে পদক্ষেপ করা হবে।

বনগাঁর মহকুমাশাসক সুদীপ মুখোপাধ্যায়েরও আশ্বাস, “নির্বাচনের পরে সমীক্ষা করে অন্যান্য প্রকল্পে কী ভাবে কচুরিপানা তোলা যেতে পারে, তার ব্যবস্থা করা হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement