প্রগতিশীল মতুয়ারা তাঁকে ফেরাবেন না, আশা দেবেশের

এলাকার বাসিন্দা নন। বিরোধীরা বলছেন, ‘ভাড়াটে কমরেড’। তিনি অবশ্য নিজেকে বহিরাগত প্রার্থী হিসাবে ভাবতে নারাজ। তাঁর কথায়, “আমি বহিরাগত নই। কারণ আমি এই জেলারই মানুষ।” বহিরাগত প্রার্থীর তকমা তাঁর জয়ের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে না বলেই মনে করছেন বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের এবারের সিপিএমের প্রার্থী রাজ্যের প্রাক্তন তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী দেবেশ দাস।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

বনগাঁ শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৪ ২৩:৪৯
Share:

এলাকার বাসিন্দা নন। বিরোধীরা বলছেন, ‘ভাড়াটে কমরেড’। তিনি অবশ্য নিজেকে বহিরাগত প্রার্থী হিসাবে ভাবতে নারাজ। তাঁর কথায়, “আমি বহিরাগত নই। কারণ আমি এই জেলারই মানুষ।”

Advertisement

বহিরাগত প্রার্থীর তকমা তাঁর জয়ের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে না বলেই মনে করছেন বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের এবারের সিপিএমের প্রার্থী রাজ্যের প্রাক্তন তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী দেবেশ দাস। কেন? বনগাঁ শহরে সিপিএমের জোনাল অফিসে বসে তারও ব্যাখ্যা দিলেন তিনি। তাঁর কথায়, “দমদমের বাগজোলার বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও তালতলা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে দাঁড়িয়ে জয়লাভ করে রাজ্যের মন্ত্রী হয়েছিলাম। তালতলা বিধানসভা কেন্দ্রটি আমার এলাকার বাইরে ছিল। সেখানে বহিরাগত বলে আমার সমস্যা হয়নি। এখানেও হবে না।”

তবে ভোট প্রচার শুরু করে দিলেও দেবেশবাবু এখন প্রচারপর্ব সীমাবদ্ধ রাখছেন ছোট ছোট দলীয় কর্মিসভা ও গ্রুপ মিটিংয়ের মধ্যে। জনসভা করেছে মাত্র একটি, হরিণঘাটায়। প্রার্থী হিসাবে নাম ঘোষণার পর থেকেই বনগাঁ কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভা এলাকায় ঘুরে ঘুরে প্রতিদিন গড়ে তিনটি করে কর্মিসভা করছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্প্যুটার সায়েন্সের এই অধ্যাপক। যদিও প্রচারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছুটি নেননি তিনি। জানালেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে সপ্তাহে ৪ দিন তাঁর ক্লাস থাকে। ক্লাসে পড়িয়েই প্রচারে বেরিয়ে পড়ছেন। যে তিন দিন ক্লাস থাকে না সেই দিনগুলিতে কর্মীদের সঙ্গে প্রচারে ব্যস্ত থাকেন।

Advertisement

নির্বাচনে দাঁড়িয়েও কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন? অধ্যাপকের কথায়, “ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা যাতে বিঘ্নিত না হয়, তাঁদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই ছুটি নেইনি।” যেমন গত সপ্তাহেই একদিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গাড়িতে যশোহর রোড ধরে চলে আসেন বনগাঁয় দলীয় কার্যালয়ে। সেখানে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা সেরে জলযোগ। পেট ভরে খেয়ে নিলেন বনগাঁর বিখ্যাত রসগোল্লা, পানতুয়া আর কালাকাঁদ।

সুগার নেই?

প্রশ্নে শুধুই একগাল একগাল হাসি প্রার্থীর। এরপর কার্যালয় থেকে বেরিয়ে, হাঁটতে হাঁটতে চায়ের দোকানে বসে প্লাস্টিকের ভাঁড়ে চা। সঙ্গের সবাইকে চা খাওয়ালেন। তারই ফাঁকে দোকানি এবং পথচলতি মানুষজনের দিকে হাসিমুখে এগিয়ে দিলেন হাত। “আমি আপনাদের লোকসভা কেন্দ্রের এবারের সিপিএম প্রার্থী”। এর পর নীল রঙের মারুতি ছুটল বাগদার হেলেঞ্চায়। সেখানে রয়েছে কর্মিসভা।

দেবেশবাবুর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূলের কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর। তিনি সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি তথা মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধান উপদেষ্টা বীণাপাণি ঠাকুরের বড় ছেলে। বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্র তফশিলি সংরক্ষিত। মোট ভোটারের ৬১ শতাংশ মতুয়া ধর্মের মানুষ। স্বাভাবিক ভাবেই কপিলকৃষ্ণ বাড়তি সুবিধা পেতে পারেন বলে রাজনৈতিক মহলের মত। তবে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ দেবেশবাবু। তাঁর কথায়, “মতুয়ারা ধর্মের সঙ্গে রাজনীতি মেশান না। ধর্মের সঙ্গে যারা রাজনীতি মেশায় তারা সাম্প্রদায়িক। মতুয়ারা সাম্প্রদায়িক নন। মতুয়াদের মধ্যে যাঁরা ধার্মিক তাঁরা প্রগতিশীল মানসিকতার। তাঁদের ভোট আমি পাব।” একই ভাবে বিজেপি প্রার্থী তথা মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রাক্তন যুগ্ম সম্পাদক কে ডি বিশ্বাসকেও হিসাবের মধ্যে আনতে চাইছেন না সিপিএম প্রার্থী। আর এই হিসাবে আনতে না চাওয়ার পক্ষে তাঁর যুক্তি, একদা যে সব সিপিএম কর্মী-সমর্থক তৃণমূলকে ভোট দিয়েছিলেন, তাঁদের মোহভঙ্গ হয়েছে। তাঁরা অনেকেই ঘরে ফিরছেন। আর এটাই জেতার ব্যাপারে অনেকটাই আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে প্রাক্তন মন্ত্রীকে। তবে এখন কর্মিসভা করলেও শীঘ্রই বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার শুরু করবেন বলে জানালেন দেবেশবাবু। প্রচারে মানুষকে বলবেন মূলত মূল্যবৃদ্ধি, নারী নির্যাতন, দুর্নীতির বিরুদ্ধ সরব হতে। কর্মসংস্থানের উপরে জোর দেবেন তিনি। আর অবশ্যই থাকবে ইছামতী সংস্কারের প্রতিশ্রুতি।

তাঁর কেন্দ্রের দুই প্রার্থী ইতিমধ্যেই বড়মা বীণাপাণি ঠাকুরের কাছে আশীর্বাদ চেয়েছেন। তিনি কি চাইবেন? সিপিএম প্রার্থীর উত্তর, “আমরা তো সকলের কাছেই আশীর্বাদ চাইছি। বড়মা তার বাইরে নন। আমি তৃণমূল প্রার্থীর কাছেও আশীর্বাদ চাই।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement