প্রেমে রেষারেষি, খুন তৃণমূল নেতা

রাতে খাওয়ার নেমন্তন্ন করেছিল পছন্দের সঙ্গিনী। নিজের হাতে মাছের ঝোল, ভাত রেঁধে খাইয়েছিল। তাতে মেশানো ছিল বেশ কয়েকটা ঘুমের বড়ি, তা জানতেন না তৃণমূল নেতা মৃন্ময় ঘোষ (৩২)। গভীর ঘুমে তলিয়ে যেতেই গলায় নাইলনের দড়ির ফাঁস দেয় মিনতি পোড়ে আর তার পুরনো প্রেমিক, সিপিএম নেতা নিত্যানন্দ প্রামাণিক। সেই সময়ে জ্ঞান ফিরে এলে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন মৃন্ময়।

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য ও নির্মল বসু

হাসনাবাদ শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৪ ০৩:১০
Share:

তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনায় ধৃত নিত্যানন্দ ও মিনতি। —নিজস্ব চিত্র

রাতে খাওয়ার নেমন্তন্ন করেছিল পছন্দের সঙ্গিনী। নিজের হাতে মাছের ঝোল, ভাত রেঁধে খাইয়েছিল। তাতে মেশানো ছিল বেশ কয়েকটা ঘুমের বড়ি, তা জানতেন না তৃণমূল নেতা মৃন্ময় ঘোষ (৩২)। গভীর ঘুমে তলিয়ে যেতেই গলায় নাইলনের দড়ির ফাঁস দেয় মিনতি পোড়ে আর তার পুরনো প্রেমিক, সিপিএম নেতা নিত্যানন্দ প্রামাণিক। সেই সময়ে জ্ঞান ফিরে এলে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন মৃন্ময়। তখনই মাথার পিছনে ভারী জিনিস দিয়ে আঘাত করা হয় তাঁকে। খুনের পর মৃতদেহ বস্তায় ভরে টানতে টানতে দু’জনে ফেলে দেয় বাড়ির কাছের জমিতে। ঘর থেকে সব চিহ্ন লোপ করতে প্রচুর গোবর দিয়ে ঘর নিকিয়ে দেয় মিনতি।

Advertisement

তা দেখেই সন্দেহ হয় পুলিশের। হাসনাবাদের রূপমারি গ্রামে মিনতির বাড়ির কাছ থেকে উদ্ধার হয় মৃন্ময়ের দেহ। মিনতির সঙ্গে তার সম্পর্কের কথাও জানতে পারে পুলিশ। উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তদন্ত শুরু হয়। মিনতির বাড়িতে গিয়ে পুলিশের সন্দেহ হয়, খুনের প্রমাণ লোপের জন্যই এত গোবর লেপার বাহুল্য। মিনতিকে জেরা করে পুলিশ নিত্যানন্দকে আটক করে। দু’জনেই খুনের কথা স্বীকার করে বলে দাবি পুলিশের। তাদের বিরুদ্ধে খুন, প্রমাণ লোপাট এবং ষড়যন্ত্রের ধারায় মামলা করেছে পুলিশ। এ দিন বসিরহাট এসিজেএম আদালতে তোলা হলে বিচারক ছ’দিনের পুলিশ হেফাজতের আদেশ দেন।

মিনতি এবং নিত্যানন্দের বয়ানের ভিত্তিতে পুলিশের দাবি, এলাকা দখল এবং প্রেমে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, এই দুয়ের জেরেই এই খুন। নিত্যানন্দ ও মিনতি প্রতিবেশী। দু’জনেই বিবাহিত, সন্তানও রয়েছে। কিন্তু তাদের সম্পর্ক ছিল। তৃণমূলের রাজনৈতিক উত্থানের পর এলাকার ভেড়ি এবং খাসজমির দখলদারি নিত্যানন্দের হাত থেকে চলে যায় মৃন্ময়ের হাতে। এরপর মিনতির দিকেও নজর দেয় মৃন্ময়। নিত্যানন্দ কেরলের একটি তিন তারা হোটেলে রাঁধুনির কাজ করে। মাঝেমাঝে ফেরে গ্রামে। মিনতির স্বামীও কাজের সূত্রে এখন অন্য রাজ্যে। দুই সন্তান নিয়ে একা থাকছিল মিনতি।

Advertisement

পুলিশের দাবি, মৃন্ময়ের সঙ্গেও মিনতির সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। কিন্তু ইদানীং মৃন্ময়ের আসা-যাওয়া পছন্দ করছিল না সে। সম্প্রতি নিত্যানন্দের কাছে সে নালিশ করে, জবরদস্তি করছে মৃন্ময়। সোমবার চিকিৎসা করানোর অজুহাতে গ্রামে ফেরে নিত্যানন্দ। এর পরেই খুনের পরিকল্পনা করে তারা।

ঘটনার দিন রাত সাতটা নাগাদ মিনতির বাড়িতে যায় নিত্যানন্দ। বাজার থেকে ঘুমের বড়ি আনে মিনতি। রাত আটটা নাগাদ মিনতির ফোন পেয়ে আসে মৃন্ময়। নিত্যানন্দ তখন বাইরে গা ঢাকা দিয়ে অপেক্ষা করছিল। ঘুমের ওষুধ খাওয়ার পর মৃন্ময় নেতিয়ে পড়লে রাত দশটা নাগাদ নিত্যানন্দ ও মিনতি খুন করে তাকে। রাত একটা নাগাদ দু’জনে বস্তাবন্দি দেহ বাড়ির রাস্তার ও ধারে নিচু জমিতে গড়িয়ে ফেলে দেয়। মৃন্ময়ের জামাকাপড় পুকুরের পাঁকে পুঁতে দেয়। তারপর নিত্যানন্দ বাড়ি ফিরে যায়। মিনতি সকালে উঠে গোটা বাড়ি ধুয়ে ফেলে।

ঘটনার দ্রুত তদন্ত তৈরির জন্য আলাদা তদন্ত দল তৈরি করে পুলিশ। এত অল্প সময়ের মধ্যে পুরো সত্য উদ্ঘাটন হওয়ায় খুশি পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী। তিনি জানিয়েছেন, ভাস্করবাবুর নেতৃত্বে গড়া তদন্ত দলকে পুরস্কৃত করা হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement