নাগরিকের দুয়ারেই পুরসভা

মুখ্যমন্ত্রী যদি পুরো মহাকরণকে তুলে নিয়ে যেতে পারেন জেলায় জেলায়, তবে পুরসভাকে নাগরিকদের কাছে পৌঁছে দিতেও পিছুপা নয় বৈদ্যবাটি। মাস খানেক ধরেই সূয্যি ডুবলে মোটরবাইকের সারি ধুলো উড়িয়ে ছুটছে বৈদ্যবাটি পুরসভার অলিগলি দিয়ে।

Advertisement

প্রকাশ পাল

বৈদ্যবাটি শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৪ ০০:৪৮
Share:

বাড়ির ছাদেই চলছে জনসংযোগের কাজ। সঙ্গে পুরপ্রধান। নিজস্ব চিত্র।

মুখ্যমন্ত্রী যদি পুরো মহাকরণকে তুলে নিয়ে যেতে পারেন জেলায় জেলায়, তবে পুরসভাকে নাগরিকদের কাছে পৌঁছে দিতেও পিছুপা নয় বৈদ্যবাটি।

Advertisement

মাস খানেক ধরেই সূয্যি ডুবলে মোটরবাইকের সারি ধুলো উড়িয়ে ছুটছে বৈদ্যবাটি পুরসভার অলিগলি দিয়ে। চেয়ারম্যান তৃণমূলের অজয়প্রতাপ সিংহ নিজেও বাইকে সওয়ার। বিভিন্ন ওয়ার্ডে চক্কর কাটার পরে দলবল নিয়ে পুরপ্রধান বসে পড়ছেন কারও বাড়ির ছাদে, তো কখনও খোলা মাঠে। সেখানেই নাগরিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছেন পুরপ্রধান। সপ্তাহে তিন-চার দিন তো বটেই। কেন কলে জল আসছে না, গলিতে পিচ পড়বে কবে, জঞ্জাল সাফাই হচ্ছে না কেন এমনতর নানা প্রশ্ন উঠে আসছে। সাধ্য মতো জবাব দিচ্ছেন অজয়প্রতাপবাবু। কিছু আবার লিখে রাখছেন নোটবুকে। সরকারি প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা নিয়েও কথা বলছেন পুরপ্রধান।

অজয়বাবু বললেন, “দিদির (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) জেলাসফর কর্মসূচি দেখেই বিষয়টা মাথায় আসে। অনেক সময় নাগরিক সমস্যার কথা আমাদের কানে আসে না। বহু মানুষ, বিশেষত বয়স্করা পুরসভায় আসতে পারেন না নানা কারণে। আমরা যতটা সম্ভব তাঁদের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করছি। যে কেউ সেখানে পুরসভার পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন করতে পারেন, পরামর্শ দিতে পারেন। প্রচুর সাড়া পাচ্ছি আমরা।”

Advertisement

বৈদ্যবাটি পুরসভায় ২২টি ওয়ার্ড। তার মধ্যে তৃণমূলের হাতে রয়েছে ১৩টি। সিপিএম, ফরওয়ার্ড ব্লক এবং কংগ্রেস প্রত্যেকের দখলে রয়েছে ৩টি করে আসন। মাসখানেক আগে থেকে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘোরা শুরু করেছেন অজয়প্রতাপবাবু। পরিক্রমার নাম দেওয়া হয়েছে, ‘জনসংযোগ যাত্রা’। চেয়ারম্যানের সঙ্গে থাকছেন জল, পূর্ত, নিকাশি প্রভৃতি নানা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউন্সিলরেরা। পুরসভার ট্যাক্স-দারোগা এবং জনা দু’য়েক করণিকও যাচ্ছেন সঙ্গে।

দিন কয়েক আগে চার নম্বর ওয়ার্ডে পুরপ্রধান গিয়েছিলেন সপার্ষদ। বসার ব্যবস্থা হয়েছিল একটি বাড়িতে। শ’খানেক নাগরিক হাজির হয়েছিলেন আগে থেকে খবর পেয়ে। গৃহবধূ ডলি রায়ের সটান প্রশ্ন পুরপ্রধানকে, “বাড়ির সামনের পানীয় জলের কল অনেক দিন ধরে খারাপ। সারাই হচ্ছে না। আমার জায়গায় আপনি থাকলে কী বলতেন চেয়ারম্যানকে?” গৃহবধূর প্রশ্নবানে পুরপ্রধান অবশ্য ধরাশায়ী হলেন না। বরং ছাদে বসেই পাশে বসা জলকল বিভাগের প্রধানকে নির্দেশ দিলেন, যত দ্রুত সম্ভব ওই সমস্যার সমাধান করতে হবে।

বইখাতার দোকানি ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শঙ্কর সাধুখাঁর জিজ্ঞাসা, “আমাদের বাড়ির সামনের নর্দমা এখনও কাঁচা। কবে পাকা হবে?” পুর-কর্তৃপক্ষ জানালেন, নির্দিষ্ট ভাবে প্রস্তাব থাকলেই ত্রয়োদশ অর্থ কমিশনের টাকায় ওই নর্দমা অবশ্যই পাকা করে দেওয়া হবে। ফকিরপাড়ায় গিয়েও সংখ্যালঘুদের নানা সমস্যার কথা শুনতে হয়েছে তাঁদের। ভাইস-চেয়ারম্যান পিন্টু মাহাতো বলেন, “হয় তো মানুষের সব সমস্যার সমাধান এখনই আমরা করতে পারব না। কিন্তু যতটা সম্ভব চেষ্টা করছি।” পুরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের সদগোপ পাড়ার বাসিন্দা অর্পিতা চক্রবর্তী বলেন, “মানুষের সুবিধা-অসুবিধার কথা পুরসভার লোকজন পাড়ায় এসে জেনে যাচ্ছেন, সকলেই গলা তুলে সমস্যার কথা বলতে পারছেন, এটা বেশ ভাল। কেননা, সকলে তো পুরসভায় যেতে পারে না! গেলেও সব কথা এমন খোলামেলা ভাবে বলার সুযোগ হয় তো মেলে না।”

তবে বিরোধী দলের কাউন্সিলরেরা কেউ অবশ্য পুরপ্রধানের সফরসঙ্গী হচ্ছেন না। পুরসভা সূত্রের খবর, এ যাত্রায় তাঁদের ডাকাই হয়নি। কী বলছে বিরোধী তিন দল?

পুরসভায় ফরওয়ার্ড ব্লকের দলনেতা রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “আমাদের ডাকা হয়নি বলেই যাইনি। তবে এ ভাবে মানুষের কাছে যেতে পারলে তো ভালই। পরে ডাকা হলে যাব।” সিপিএমের দলনেতা শেখর মিত্র অবশ্য বলেন, “জনসংযোগ করছেন পুরপ্রধান। ওঁকেই জিজ্ঞাসা করুন।” কংগ্রেসের দলনেতা উদয়চাঁদ ঘোষের বক্তব্য, “মানুষের ভাল করা যদি লক্ষ্য হয়, তা হলে এ ভাবে পাড়ায় পাড়ায় যাওয়া অত্যন্ত ভাল পদক্ষেপ। পরবর্তীকালে আমাদের বললে নিশ্চয়ই সামিল হব। সকলের সামনে কাজের পর্যালোচনা করা যাবে।”

পুরপ্রধানের বক্তব্য, “জনসংযোগ যাত্রায় কিন্তু কোনও পতাকা বা মাইক কিছুই ব্যবহার করা হচ্ছে না। ভোটের প্রচারও হচ্ছে না। পুর-পরিষেবা মানুষের দুয়ারে পৌঁছে দিতেই আমাদের এই ভাবনা। তবে, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলরেরা থাকলে ভালই হত। পরের বার নিশ্চয়ই করা হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement