ধার করে উন্নয়ন, বিপাকে হাওড়া

খরচ হয়ে গিয়েছে প্রায় ৮০ কোটি টাকা। অথচ, ঝুলিতে এসেছে মাত্রই ২২ কোটি। আর এই ২২ কোটি টাকা নিয়ে ‘ধারে’ উন্নয়ন করতে গিয়েই বিপাকে পড়েছে হাওড়া পুরসভা। এক দিকে, ক্রমাগত বকেয়া মেটানোর দাবি জানাচ্ছেন ঠিকাদারেরা। অন্য দিকে, অর্ধসমাপ্তই পড়ে রয়েছে উন্নয়নের কাজ। এই দুই সমস্যার জোড়া ফলায় কার্যত দিশেহারা পুরকর্তারা।

Advertisement

দেবাশিস দাশ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৪ ০১:৩৮
Share:

খরচ হয়ে গিয়েছে প্রায় ৮০ কোটি টাকা। অথচ, ঝুলিতে এসেছে মাত্রই ২২ কোটি।

Advertisement

আর এই ২২ কোটি টাকা নিয়ে ‘ধারে’ উন্নয়ন করতে গিয়েই বিপাকে পড়েছে হাওড়া পুরসভা। এক দিকে, ক্রমাগত বকেয়া মেটানোর দাবি জানাচ্ছেন ঠিকাদারেরা। অন্য দিকে, অর্ধসমাপ্তই পড়ে রয়েছে উন্নয়নের কাজ। এই দুই সমস্যার জোড়া ফলায় কার্যত দিশেহারা পুরকর্তারা।

গত ডিসেম্বরে হাওড়া পুরসভায় তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাওড়ার উন্নয়নের জন্য ১১০ কোটি টাকা অনুদান ঘোষণা করেন। পাশাপাশি, অবিলম্বে উন্নয়নের কাজ শুরুর নির্দেশও দেন। পুরসভা সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ আসার পরে নতুন মেয়র রথীন চক্রবর্তী নিজের ক্ষমতায় মেয়র পরিষদ গঠনের আগেই কাজ শুরুর নির্দেশ দেন।

Advertisement

এ বছরের গোড়া থেকেই তাই হাওড়া পুর-এলাকা জুড়ে শুরু হয় রাস্তাঘাট, নিকাশি ও পানীয় জল সংক্রান্ত নানা প্রকল্পের কাজ। এলাকার সৌন্দর্যায়নের কাজেও হাত দেয় পুরসভা। বিভিন্ন রাস্তায় বসানো হয় ত্রিফলা আলো। যে সব মাঠে বা পার্কে পূর্বতন বামফ্রন্ট পুরবোর্ডের বসানো হ্যালোজেন আলো ছিল, সেখানেও ত্রিফলা আলোয় ভরিয়ে দেওয়া হয়। অলিগলিতেও লাগানো হয় ত্রিফলা। রাস্তার দু’পাশে নীল-সাদা রং দিয়ে, বৃক্ষ রোপণ করে, ফুলের গাছ বসিয়ে সৌন্দর্যায়ন করা হয়। পাঁচ মাসে হাওড়া শহরের ছবিটাই বদলে গিয়েছে।

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৩০ এপ্রিল হাওড়ায় লোকসভা নির্বাচনের প্রেক্ষিতে নির্বাচনী বিধি-নিষেধ বাদ দিলে গত কয়েক মাসে বিভিন্ন উন্নয়ন খাতে খরচ হয়ে গিয়েছে প্রায় ৮০ কোটি টাকার উপরে। পুরসভার সংশ্লিষ্ট দফতর সূত্রে খবর, গত পাঁচ মাসে শহরের মোট ১৬৯টি রাস্তা তৈরির জন্য খরচ হয়েছে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা। ত্রিফলা আলোর জন্য খরচ হয়েছে প্রায় ২০ কোটি, নিকাশির জন্য প্রায় ১১ কোটি এবং পানীয় জলের উন্নয়নের জন্য খরচ হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। হাওড়া উন্নয়ন সংস্থা দু’কোটি টাকার কাজ করেছে। এ ছাড়া, পার্ক ও বিভিন্ন রাস্তার সৌন্দর্যায়ন করতে গিয়ে ইতিমধ্যে খরচ হয়ে গিয়েছে ২ কোটি টাকা।

পুরসভা সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরে ১১০ কোটি টাকার মধ্যে পুরসভার হাতে এসেছিল ২২ কোটি টাকা। নবান্ন সূত্রে জানানো হয়েছিল, বাকি টাকা ‘অ্যাশিওরড ফান্ড’। তাই শীঘ্রই কয়েকটি ভাগে পুরসভাকে তা দিয়ে দেওয়া হবে। পুরসভার এক পদস্থ কর্তা বলেন, “মূলত রাজ্য সরকারের ওই কথার উপরে ভিত্তি করেই ঠিকাদারদের এত কোটি টাকার কাজের বরাত দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ৮০ কোটি টাকার কাজও হয়ে গিয়েছে। ঠিকাদারেরা পাওনা টাকার জন্য পুরসভায় ভিড় করছেন। কিন্তু টাকা কোথায়?”

এ দিকে, যে ২২ কোটি টাকা পুরসভার অর্থ দফতরে এসেছে, সেই টাকা কী ভাবে ভাগ হবে এবং কোন দফতরকে প্রাথমিক ভাবে কত দেওয়া হবে, তা নিয়ে গোল বেধেছে। বিভিন্ন দফতরের মেয়র পারিষদ চাইছেন, টাকা আগে তাঁর দফতর পাক। এ নিয়ে গত সপ্তাহে মেয়র পারিষদের বৈঠকে কিছুটা গোলমালও হয়। তার জেরে শেষ পর্যন্ত ঠিকাদারদের বকেয়া মেটানোর কাজই আটকে যায়।

মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরেও পুরো অর্থ না পাওয়ায় সমস্যা যে হচ্ছে, তা মেনে নিয়েছেন হাওড়ার মেয়র রথীন চক্রবর্তীও। তিনি বলেন, “অনেকের বিল বকেয়া রয়ে গিয়েছে। আপাতত পাওয়া ২২ কোটি টাকা তাই আটকে রাখা হয়েছে এখন। রাজ্য সরকারের কাছ থেকে টাকা পেলে এবং অন্যান্য খাতে অর্থ জোগাড় করার পরেই সব বকেয়া মিটিয়ে দেওয়া হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement