পুরনো শত্রুতার জের, বলছে পুলিশ

তৃণমূলের অটো ইউনিয়নের নেতাকে খুন বসিরহাটে

স্বামীর জন্য ভাত বাড়ছিলেন তাজমিরা বিবি। হঠাৎ ফোন আসে রুহুলের মোবাইলে। স্ত্রীকে ‘তুমি ভাত বাড়ো, আমি পুকুর থেকে হাত-পা ধুয়ে আসছি’ বলে বাড়ি থেকে বের হওয়া মাত্রই তাঁকে তাড়া করে কুপিয়ে খুন করল দুষ্কৃতীরা। খুনের পর বোমা ফাটাতে ফাটাতে পালিয়ে যায় তারা। রবিবার রাতে বসিরহাটের স্বরূপনগরের সর্দারপাড়ায় ওই ঘটনায় নিহত রুহুল আমিন সর্দার (৪৫) ওরফে বাচ্চু তৃণমূলের শ্রমিক ইউনিয়নের স্থানীয় অটোরিকশার রুট সম্পাদক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৪ ০১:০৯
Share:

নিহত রুহুল আমিন সর্দার।

স্বামীর জন্য ভাত বাড়ছিলেন তাজমিরা বিবি। হঠাৎ ফোন আসে রুহুলের মোবাইলে। স্ত্রীকে ‘তুমি ভাত বাড়ো, আমি পুকুর থেকে হাত-পা ধুয়ে আসছি’ বলে বাড়ি থেকে বের হওয়া মাত্রই তাঁকে তাড়া করে কুপিয়ে খুন করল দুষ্কৃতীরা। খুনের পর বোমা ফাটাতে ফাটাতে পালিয়ে যায় তারা।

Advertisement

রবিবার রাতে বসিরহাটের স্বরূপনগরের সর্দারপাড়ায় ওই ঘটনায় নিহত রুহুল আমিন সর্দার (৪৫) ওরফে বাচ্চু তৃণমূলের শ্রমিক ইউনিয়নের স্থানীয় অটোরিকশার রুট সম্পাদক। বসিরহাটের এসডিপিও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, “নিহতের স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে একটি খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। চার অভিযুক্তের একজন স্বরূপনগর দক্ষিন পাড়ার বাসিন্দা হাফিজুল ইসলাম মণ্ডলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের ধরতে তল্লাশি চলছে।” রুহুলের মৃতুতে সোমবার মহকুমার খোলাপোতা, বেড়াচাঁপা ও যদুরআটির মধ্যে অটো চলাচল বন্ধ রাখা হয়। পুলিশের দাবি, রুহুলের বিরুদ্ধে মহকুমার কয়েকটি থানায় একাধিক অপরাধমূলক কাজের অভিযোগ রয়েছে।

পুলিশ ও পরিবার সূত্রের খবর, তাকে খুন করা হবে বলে বেশ কিছুদিন ধরে রুহুলকে ফোনে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। পুরনো শত্রুতা, তোলা আদায় এবং জমি কেনাকে কেন্দ্র করেই ওই হুমকি ফোনের জেরে স্বামীকে সাবধান করে দিয়েছিল তাজমিরা বিবি। তাজমিরা ববি বলেন, “রবিবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ বাড়ি ফিরে আমাকে ভাত বাড়তে বলেন স্বামী। সেই সময়তাঁর মোবাইলে ফোন পেয়ে রাস্তার পাশে পুকুরে হাত ধুয়ে আসছি বলে ঘর থেকে বেরিয়ে যান।” বাড়ি থেকে একটু দূরে টাকি রোড। রাস্তার পাশে ক্লাব ঘরে তখন ছেলেরা বিশ্বকাপ ফুটবল দেখছিল। কিছুটা এগোতেই রুহুল দেখেন ১০-১২ জনের একটি দল তাঁর দিকে ছুটে আসছে। বিপদ বুঝে তিনি বাড়ির দিকে দৌড়তে থাকেন। বাড়ির কাছাকাছি পুকুরের সামনে বাঁকের মুখে পা পিছলে পড়ে যান। এরপরই দুষ্কৃতীরা তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁকে চপার, ভোজালি দিয়ে কোপাতে থাকে।

Advertisement

নিহতের শোকার্ত পরিবার।

পুলিশ জানায়, রুহুলের চিৎকার শুনে কয়েকজন প্রতিবেশী ছুটে এলে ‘তাদের খুন করে ফেলব’ বলে হুমকি দেয় দুষ্কৃতীরা। ভয়ে আর কেউ এগোননি। রুহুলকে কোপানোর পরে তার গলার নলি কেটে দেহ পুকুরে ফেলে বোমা ফাটিয়ে বেগমপুরের দিকে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। তারা চলে গেলে থানায় খবর দেওয়া হয়। পুলিশ গিয়ে দেহ খুঁজে না পেয়ে এদিক ওদিক তল্লাশি শুরু করে। পরে পুকুরপাড়ে রক্তের দাগ দেখে পুকুরে তল্লাশি চালালে দেহ উদ্ধার হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, এক সময়ে অপরাধমূলক কাজের জন্য রুহুলের বিরুদ্ধে বসিরহাটের কয়েকটি থানায় অভিযোগ ছিল। পরে অবশ্য ওই জগৎ থেকে সে সরে আসে। তবে মাঝেমধ্যেই এলাকায় বিভিন্ন বিষয়ে সালিশি নিয়ে গোলমাল জড়াত সে। সম্প্রতি জমি কিনে বাড়ি তৈরি করছিল। রুহুলের শ্যালিকা আনোয়ারা বিবি বলেন, ‘‘তিন দিন আগে রাস্তার দখল নিয়ে সালিশিতে মারামারি ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে জামাইবাবু। সেই সময় তাঁকে খুনের হুমকি দেওয়া হয়।’’

তৃণমূল শ্রমিক সংগঠন পরিচালিত অটো ইউনিয়নের সম্পাদক রবিউল মন্ডল বলেন, ‘‘পুরনো শত্রুতার জেরে পরিকল্পনা করে আমাদের ইউনিয়ানের রুট সম্পাদক রুহুলকে খুন করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে অটো চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।’’ বসিরহাট উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূলের বিধায়ক এটিএম আব্দুল্লা রনি বলেন, ‘‘প্রথম দিকে কিছু ভুল করলেও পরে ও সৎপথে ফিরেছিল। দুষ্কৃতীরা দলবেঁধে এসে ওকে খুন করেছে। পুলিশের কাছে দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছি।”

—নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement