প্রায় বছর ছ’য়েক ধরে হুগলি জেলায় ঢিমেতালে চলছে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্প রূপায়ণের কাজ। পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতি স্তর থেকে তেমন প্রস্তাবও উঠে আসছে না বলে জেলা পরিষদ সূত্রে খবর। জেলা পরিষদের সভাধিপতি তৃণমূলের শেখ মেহবুব রহমান বলেন, “আমরা সব ক’টি ব্লক ও পঞ্চায়েতকে বলেছি, যেখানে রাস্তা হয়নি, তার তালিকা দিতে। বিভিন্ন গ্রামের রাস্তা সংস্কার এবং নতুন রাস্তা নির্মাণের জন্য সমীক্ষার কাজ চলছে। পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি স্তর থেকেও মানুষের দাবি বিবেচনা করে রাস্তার নাম পাঠাতে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু রাস্তার প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকে।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গোটা জেলায় এখনও অন্তত তিনশোরও বেশি সংযোগকারী রাস্তা জরুরি। এ ছাড়াও, বিভিন্ন গ্রামের মোরাম রাস্তাগুলির সংস্কারের কাজও বাকি। বিভিন্ন গ্রামের মানুষের অভিযোগ, মানুষের চাহিদা পূরণে ঝোঁক নেই প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের। হুগলির প্রাক্তন পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সিপিএমের মোজাম্মেল হোসেনের অভিযোগ, “২০০৬ সালে সিঙ্গুরে জমি আন্দোলনের সময় থেকেই বিষয়টির সূত্রপাত। সে সময়ে তৃণমূল প্রভাবিত একটা অংশের মানুষ জমি দিতে অসম্মত হচ্ছিলেন। তাই প্রকল্পের সাবলীল গতি বিঘ্নিত হয়। এখন জেলা পরিষদে তৃণমূলের নতুন বোর্ড গঠন হওয়ার পরেও তারা উদ্যোগ করছে না।”
হুগলি জেলায় মোট ১৯৯৯টি মৌজার বহু এলাকাতেই উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০১ সাল থেকে ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৭৬টি রাস্তা প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্পে অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দফতর। তার মধ্যে ১০৮টি রাস্তার কাজ শেষ হলেও বাকি রয়েছে ৬৮টি রাস্তার কাজ। জমি না-পাওয়ায় বাতিল হয়েছে চারটি প্রস্তাব। ২০টির জন্য এখনও টেন্ডার ডাকা হয়নি। কাজ চলছে ৪৪টির।
জেলাপরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০১-’১০ সাল পর্যন্তই বেশির ভাগ রাস্তা তৈরির কাজ হয়েছে। যদিও ২০০৭ সাল থেকেই কাজ প্রায় গতিহীন হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। জেলা পরিষদ সূত্রেও দাবি করা হয়েছে, ২০০৬-০৭ সালে সিঙ্গুরের জমি আন্দোলনের প্রভাবেই জেলার বেশিরভাগ জায়গায় স্থানীয় মানুষ জমি দিতে অস্বীকার করেন। আর ওই প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী, জমি দিলে কোনও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় না বলে জমির মালিকদেরও রাজি করানো যায়নি। ফল বাতিল হয়ে গিয়েছে রাস্তা তৈরির প্রস্তাব।
মেহবুব রহমানের ব্যাখ্যা, ২০০৭ সালের পরবর্তীকালে তত্কালীন শাসক দল সিপিএমের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় রাস্তা তৈরির কাজ ব্যাহত হয়। অন্য দিকে, অনুমোদিত রাস্তাগুলির ধারে জবরদখলকারীদের উচ্ছেদেও সমস্যা দেখা দেয়। পাশাপাশি, ২০১১ সালের বিধান সভা নির্বাচনের পরে রাজ্যের রাজনৈতিক পালাবদলের জেরে নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছিল। ফলত ২০১২ সাল পর্যন্ত নতুন কোনও রাস্তা তৈরির প্রস্তাবই পাঠানো হয়নি কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দফতরের কাছে। তবে জেলা পরিষদের নির্বাহী বাস্তুকার উত্পলকুমার হাজরা অবশ্য জানিয়েছেন, ২০১৩ সালে ৩৪টি নতুন রাস্তার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ১২টির অনুমোদন মিলেছে।
২০০০ সালের ২৫ ডিসেম্বর বেশি জনবসতি অধ্যুষিত গ্রামগুলির সঙ্গে মূল সড়কের সংযোগ তৈরির জন্য প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্পটি ঘোষিত হয়। প্রথম পর্যায়ে লক্ষ্য ছিল, এক হাজার বা তার বেশি জনবসতি অধ্যুষিত গ্রামগুলির সঙ্গে মূল সড়কের সংযোগকারী রাস্তা তৈরি করা। দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫০০ থেকে ১০০০ জনবসতিপূর্ণ গ্রামগুলিকে ওই প্রকল্পে আনা হবে বলে বলা হয়েছিল। তবে বর্তমানে সেই পর্যায়ক্রম তুলে দেওয়া দিয়ে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতেই রাস্তা তৈরি ও মেরামতের কর্মসূচি নিয়েছে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। তার জন্য জেলাপরিষদকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে রাস্তার তালিকা করে নতুন প্রস্তাব পাঠাতেও বলা হয়েছে।