জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে মঞ্জুলকৃষ্ণ (মাঝখানে) ও কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর। বনগাঁর খেলাঘর ময়দানে কর্মিসভায়। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
এক দিকে মা। অন্য দিকে দিদি।
চাপে পড়ে কাছাকাছি এলেন দুই ভাই। কর্মিসভার মঞ্চে বসলেন দু’জনেই। সামান্য তফাতে পাশাপাশি দু’টি চেয়ার। কিন্তু, অনেকটা সময় কেটে গেলেও কারও মুখে কোনও কথা নেই। কেউ কার্যত তাকাচ্ছেনই না একে অন্যের দিকে।
ছবিটা বদলে গেল উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল পর্যবেক্ষক তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের উপস্থিতিতে। মুখের গম্ভীর ভাবটা না কাটলেও একান্ত আলাপচারিতায় দেখা গেল দুই ভাইকে। এক জন সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর, যিনি এ বার বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী। অন্য জন তাঁরই ভাই মঞ্জুলকৃষ্ণ, যিনি রাজ্যের মন্ত্রীও বটে।
লোকসভা ভোটের টিকিট কে পাবেন, মঞ্জুলের ছেলে সুব্রত নাকি দাদা কপিল, তা নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়েছে এর আগে। কপিল-মঞ্জুলদের মা বীণাপানি দেবী (মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধান উপদেষ্টাও বটে) প্রথমে নাতি সুব্রতর হয়েই লোকসভার টিকিটের দাবি পেশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। পরে আবার বড় ছেলে কপিলের হয়েই সওয়াল করেন। দু’ভাইয়ের মধ্যে পুরনো বিবাদ বহু চর্চিত বিষয়। শেষমেশ কপিলই টিকিট পান। অনেকেরই সংশয় ছিল, কপিলবাবুর হয়ে মঞ্জুলবাবু ভাই তাঁর হয়ে প্রচারে নামবেন কিনা। জ্যোতিপ্রিয়র উপস্থিতিতে সেই মেঘ কাটল মঙ্গলবার।
মঞ্চে দুই ভাইকে পাশে বসিয়ে জ্যোতিপ্রিয় মঞ্জুলকে বলেন, “গাইঘাটা এলাকায় কপিলবাবুর হয়ে প্রচারের দায়িত্ব আপনি নেবেন। কত বেশি ভোটে ওঁকে জয়ী করা যায়, সে জন্য যা যা করণীয়, আপনিই ঠিক করবেন।” মঞ্জুলও বলেন, “আমি দাদার সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা করব।” কপিলবাবুকেও বলতে শোনা যায়, “ভাইয়ের সঙ্গে পরামর্শ করেই প্রচারে নামব।” মঞ্চে বসে দু’ভাই নিজেদের মধ্যে কিছু ক্ষণ নিচু গলায় কথাও বলেন। মঞ্জুলবাবু পরে বলেন, “এটা পারিবারিক সম্মানের বিষয়। ভুল বোঝাবুঝির কোনও জায়গাই নেই। মা-ও বলেছেন সে কথা। দাদার হয়ে প্রচারে যা যা করার করব।” কপিল বলেন, “অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মানুষ পাল্টায়। ভাই সিদ্ধান্ত পাল্টেছে।”
এ দিন বনগাঁর খেলাঘর ময়দানে বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা এলাকার জনপ্রতিনিধি ও নেতা-নেত্রীরা উপস্থিত ছিলেন কর্মিসভায়। জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, “বড়মার ইচ্ছেকে সম্মান দিয়ে কপিলবাবুকে এই কেন্দ্রে প্রার্থী করেছেন মমতা। সঙ্ঘাধিপতি নিজেই যখন ভোটে দাঁড়িয়েছেন, মতুয়াদের ভোট আমরাই পাব।” সভায় দাঁড়িয়ে জ্যোতিপ্রিয়বাবুর দলের কর্মীদের পরামর্শ দেন, মমতা কী ভাবে মতুয়াদের পাশে থেকেছেন, তা প্রচারে তুলতে। তাঁর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী তো বটেই, আমি নিজেও মতুয়া মহাসঙ্ঘের সদস্য হয়েছি। মতুয়াদের জন্য আমরা রাজনীতি করি না।” কপিলকে বিপুল ভোটে জয় জয়ী করার জন্য কর্মীদের কাছে আবেদন রাখেন মঞ্জুল।