শেষ পর্যন্ত উলুবেড়িয়া লোকসভা আসনে প্রার্থী বদল করল সিপিএম।
১৯৮২ সাল থেকে ২০০৯ পর্যন্ত টানা আটবার এই লোকসভা কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থী ছিলেন হান্নান মোল্লা। ২০০৯ সালে তৃণমূলের সুলতান আহমেদের কাছে তিনি হেরে যান প্রায় ৯৮ হাজার ভোটে। এ বারে আর হান্নানকে প্রার্থী করেনি সিপিএম। তার জায়গায় সিপিএমের নতুন মুখ হল সাবিরুদ্দিন মোল্লা। ৩৯ বছরের সাবিরুদ্দিন যে প্রার্থী হতে পারেন তা কিন্তু এই লোকসভা কেন্দ্রের রাজনৈতিক মহল বা সাধারণ মানুষ আঁচ করতে পারেননি। সাবিরের নিজেরও দাবি, তিনি জানতেন না, প্রার্থী হতে চলেছেন। বুধবার সন্ধ্যায় উলুবেড়িয়ায় দলীয় কর্মীদের নিয়ে বৈঠকের ফাঁকে বললেন, “রাজ্য কমিটির দফতরে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলন থেকেই আমি প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি জানলাম। দলের নির্দেশ মেনে আজ থেকেই প্রচারে নেমে পড়েছি।”
তৃণমূল অবশ্য প্রার্থী করেছে সুলতানকেই। তিনি যে এ বারেও প্রার্থী হবেন সে বিষয়ে অবশ্য সংশয় ছিল না এলাকার মানুষ, বিশেষ করে দলীয় কর্মীদের মধ্যে। কারণ মাসখানেক আগেই বাগনান বাসস্ট্যান্ডে আয়োজিত দলীয় সমাবেশে সুলতানই যে প্রার্থী হবেন সেই আশ্বাস দিয়ে গিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। বুধবার সেই আশ্বাসের উপরেই চূড়ান্ত শিলমোহর দিলেন দলের সর্বোচ্চ নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচন থেকেই রাজ্যের অন্যান্য এলাকার সঙ্গে হাওড়ার গ্রামাঞ্চলেও পরিবর্তন দেখা যায়। জেলার গ্রামীণ এলাকার সিংহভাগই পড়ে উলুবেড়িয়া লোকসভা কেন্দ্রে। ওই বছর প্রার্থী হিসাবে যখন তাঁর নাম ঘোষণা করা হয় তিনি এখানে সে ভাবে পরিচিত ছিলেন না। কলকাতা থেকে তুলে এনে তাঁকে প্রার্থী করে তৃণমূল। কিন্তু ভূমিপুত্র না হওয়া সত্ত্বেও তাঁর জয় আটকায়নি। ওই বছর অবশ্য কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে লড়েছিল তৃণমূল। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও কংগ্রেস-তৃণমূল জোট করে লড়াই করে। উলুবেড়িয়া লোকসভার অধীনে থাকা সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রই আসে জোটের ঝুলিতে। হেরে যায় বামফ্রন্ট।
তারপরে অনুষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন। তত দিনে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট ভেঙে গিয়েছে। দু’টি দল পৃথক ভাবে বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে লড়াই করে। তা সত্ত্বেও তৃণমূলের জয়যাত্রা রোখা যায়নি। উল্টে কার্যত ধুলিস্মাৎ হয়ে যায় কংগ্রেস। একটি পঞ্চায়েতও একক ভাবে দখল করতে পারেনি তারা। পরাজয় ঘটে সিপিএম তথা বামফ্রন্টের। উলুবেড়িয়া লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে থাকা ৯টি পঞ্চায়েত সমিতির সব ক’টি দখল করে তৃণমূল।
সাবিরুদ্দিন অবশ্য সিপিএমের চোখে ‘লড়াকু কর্মী’। রাজনীতিই তাঁর সর্বক্ষণের পেশা। ২০০৩ সাল পর্যন্ত এসএফআইয়ের হাওড়া জেলা কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। বর্তমানে ডিওয়াইএফের রাজ্য কমিটির সদস্য। তৃণমূল শাসিত উলুবেড়িয়া পুরসভায় তিনি বিরোধী দলনেতা। ২৯ সদস্য বিশিষ্ট পুরসভায় বিরোধী দলে অবশ্য সদস্য সংখ্যা সাকুল্যে মাত্র ৪ জন। তিনজন সিপিএমের, একজন ফরওয়ার্ড ব্লকের। এই পরিস্থিতিতে উলুবেড়িয়ার সাধারণ মানুষের মত হল যেন একাই নকল বুঁদির গড় রক্ষা করতে মাঠে নেমেছেন সাবিরুদ্দিন।
এ কথা মানতে নারাজ জেলা বামফ্রন্ট তথা সিপিএমের নেতারা। তাঁদের দাবি, পরিস্থিতির এখন আগের মতো নয়। মানুষ ফের পরিবর্তনের জন্য তৈরি। নির্বাচনের ফল খুব একটা খারাপ হবে না। সাবির নিজে কী বললেন? তাঁর কথায়, “মানুষ যদি ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন এবং পুলিশ যদি নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে আমরাই জিতছি।”
অন্য দিকে, জেলা তৃণমূল সভাপতি (গ্রামীণ) পুলক রায় বললেন, “২০০৯ সালের থেকে জয়ের ব্যবধান বাড়ানোই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।” তবে সুলতান কোনও লড়াইকেই ছোট করে দেখতে নারাজ। তিনি বলেন, “আমার উপরে মমতাদি আস্থা রেখে আবার প্রার্থী করেছেন। তাঁর আদর্শ মেনে আমি মানুষের জন্য কাজ করেছি। মানুষই ঠিক করবেন এই নির্বাচনের ফল কী হবে।”