শুকিয়ে যাচ্ছে গাছ দেখছেন ফুলচাষিরা। ছবি: সুব্রত জানা।
ঝরে যাচ্ছে ফুল-পাতা। কঙ্কালসার হয়ে পড়ছে গাছ ও চারা। তাই মাথায় হাত পড়েছে বাগনানের গোলাপচাষিদের। বিঘের পর বিঘে গোলাপ চাষ নষ্ট হচ্ছে গতে কয়েক দিন ধরে। আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনাই এর কারণ বলে মনে করছেন চাষিরা। একই বক্তব্য জেলা উদ্যানপালন দফতরেরও। এই প্রবণতা বজায় থাকলে আগামী চৈত্র-বৈশাখ (এপ্রিল-মে) মাসে বাজারে গোলাপের দর অগ্নিমূল্য হবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন চাষিরা।
বাগনান-২ ব্লকের শরৎ এবং ওড়ফুলি মূলত এই দু’টি পঞ্চায়েত এলাকাতে ব্যাপক ভাবে ফুলের চাষ হয়। এর মধ্যে সিংহভাগ চাষি গোলাপ চাষ করেন। শুধু ফুলও যেমন বিক্রি হয়, তেমনই বিক্রি হয় ফুল-সহ চারা। কিন্তু দিন পনেরো ধরে ছন্দপতন দেখা যাচ্ছে গোলাপ চাষে। গাছ থেকে ফুল ও পাতা ঝরে যাচ্ছে। গাছ এবং চারাগুলি হয়ে পড়েছে কঙ্কালসার। চাষিদের বক্তব্য, আবহাওয়ার স্বাভাবিক ছন্দ বজায় থাকলে গোলাপ চাষের কোনও ক্ষতি হয় না। কিন্তু শীতের মরসুমেও ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি দেখা গিয়েছিল স্যাঁতসেতে আবহাওয়া। তার সঙ্গে বৃষ্টিও হয়েছিল দু’দিন ধরে। তাতেই গোলাপের দফারফা হয়ে গিয়েছে। বিশেষ ধরনের সার প্রয়োগ করেও মড়ক ঠেকানো যাচ্ছে না বলে চাষিদের দাবি।
বাঁকুড়দহ গ্রামের পুলক ধাড়া প্রায় দু’বিঘা জমিতে গোলাপ চাষ করেছেন। তিনি বলেন, “গোলাপ চাষে আমাদের ভাল লাভ হয়। কিন্তু সব গাছ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফলে, লাভ তো দূরের কথা, খরচ তোলা যাবে কিনা সন্দেহ। ফের নতুন করে যে শুরু করব, তারও উপায় নেই। চারা তৈরির সময় পেরিয়ে গিয়েছে।” উজ্জ্বল খাঁড়া নামে আর এক চাষির বক্তব্য, “সাত কাঠা জমিতে গোলাপ চাষ করি। সব চারা শেষ। বাইরের রাজ্য থেকে চারা কিনতে নিয়মিত ক্রেতারা আসছেন। ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছি।” ওড়ফুলি পঞ্চায়েতের প্রধান শ্রীকান্ত সরকারও সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, “গোলাপ চাষিরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। চাষিদের পাশে দাঁড়াতে কী করণীয় জানতে চেয়ে জেলা পরিষদকে চিঠি লিখেছি।”
জেলা উদ্যানপালন দফতরের আধিকারিক কুশধ্বজ বাগ বলেন, “চাষিদের গাছের গোড়া থেকে জল সরিয়ে দিতে এবং বিশেষ ধরনের সার প্রয়োগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু চাষিরা কিছুতেই রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন। এটা চিন্তার কথা। আমি নিজে একবার সরেজমিন পরিদর্শনে যাব।”
শরৎ এবং ওড়ফুলি পঞ্চায়েত এলাকায় বিভিন্ন প্রজাতির গোলাপ চাষ হয়। মধ্যপ্রদেশ, ওড়িশা, ছত্তীসগঢ়, দিল্লি-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে ওই দুই পঞ্চায়েত এলাকায় উৎপন্ন গোলাপ-চারার চাহিদা আকাশছোঁয়া বলে দাবি স্থানীয় চাষিদের। গৃহস্থেরা চারা কিনে নেন তা বাড়ির লনে বা বারান্দায় লাগিয়ে থাকেন সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য। চারা তৈরির কাজ শুরু হয় কার্তিক-অগ্রহায়ণ (নভেম্বর-ডিসেম্বর) মাস থেকে। তা চলে ফাল্গুন (মার্চ) মাস পর্যন্ত। চারা রোপণের ৪৫ দিনের মাথায় সেগুলি বিক্রয়যোগ্য হয়ে যায়। চৈত্র (এপ্রিল) মাস পর্যন্ত চলে জাঁকিয়ে বিক্রি। অন্য দিকে, চারা তৈরি ছাড়াও লাগানো হয় গাছ। এই সব গাছ থেকে যে গোলাপ ফোটে, তা বিক্রি হয় কলকাতার মল্লিকঘাট ফুল বাজারে। বিক্রি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছয় চৈত্র-বৈশাখ (এপ্রিল-মে) মাসে। কারণ, বিয়ে এবং দোকান ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে পুজোর মরসুম শুরু হয়ে যায় তখন। চাষিরা সারা বছর যা রোজগার করেন, সেই ঘাটতি তাঁরা পুষিয়ে নেন এই সময়েই। চাহিদা বেশি থাকায় চাষিরা ভাল দামও পান।
এখন চলছে চারা বিক্রির মরসুম। কিন্তু মরসুমের মাঝে চারার এ হেন পরিণতি দেখে হতাশ চাষিরা। তাঁদের খেদ, কঙ্কালসার চারাগুলি আর কোনও কাজে লাগবে না।