বাগনানের খালোড়ে পড়ে রয়েছে ফুলবাজার। ছবি: সুব্রত জানা।
বিশাল মাঠ। তার একদিকে তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে ফুল বাজার। অন্য দিকে বহুমুখী হিমঘর। ঝাঁ চকচকে বিশাল দু’টি ভবন। এর মধ্যে ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ পঞ্চায়েত নির্বাচনের ঠিক আগে বহুমুখী হিমঘরটি চালু হয়ে গিয়েছিল। তবে মাত্রই কয়েক ঘণ্টার জন্য। তারপরেই সেটি বন্ধ হয়ে যায়। ফুল বাজারটি অবশ্য এখনও চালুই হয়নি।
চিত্রটি হাওড়ার বাগনানের খালোড়ের। রাজ্য কৃষি বিপণন দফতরের হয়ে হিমঘর ও ফুল বাজার তৈরি করেছে হাওড়া জেলা নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতি। এই সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এখানে যাতায়াতের রাস্তা তৈরি করতে হবে। লোকসভা নির্বাচনের পরেই রাস্তা তৈরির কাজ শুরু হবে। তারপরেই চালু করে দেওয়া হবে ফুল বাজার ও হিমঘর।
প্রায় ৩৫ বছর আগে বাগনান কলেজের সামনে ৩৩ একর জমি অধিগ্রহণ করে রাজ্য কৃষি বিপণন দফতর। উদ্দেশ্য ছিল, এখানে কৃষি বাজার তৈরি করা। অধিগ্রহণের কয়েক বছর পরে এখানে প্রায় ১ কোটি লক্ষ টাকা খরচ করে একটি কৃষি বাজার তৈরি করে কৃষি বিপণন দফতর। বেশ কয়েকটি স্টল এবং গুদাম তৈরি করা হয়। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে চাষিরা এখানে এসে তাঁদের উৎপাদিত কৃষিজ পণ্য বিক্রি করবেন এটাই ছিল লক্ষ্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চাষিরা এখানে না আসতে চাওয়ায় পরিকল্পনাটি ভন্ডুল হয়ে যায়। পরিত্যক্ত কৃষি বাজার চত্বরটি ভুতুড়ে আকার নেয়। সমাজবিরোধীদের আখড়া হয়ে দাঁড়ায়।
দ্বিতীয় দফায় জমির বাকি অংশে বহুমুখী হিমঘর এবং ফুল বাজার তৈরির পরিকল্পনা করে রাজ্য কৃষি বিপণন দফতর। ফুল বাজারটি তৈরি হয় রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনা প্রকল্পের টাকায়। এর জন্য খরচ করা হয় ১ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা। এটি তৈরির কাজ শুরু হয় ২০১১ সালের গোড়ায়। তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারে উদ্যানপালনমন্ত্রী মোহন্ত চট্টোপাধ্যায় ভবন তৈরির কাজের উদ্বোধন করেন। একই সঙ্গে শুরু হয় বহুমুখী হিমঘর তৈরির কাজ। এটিরও উদ্বোধন করেন মোহন্তবাবু। বহুমুখী হিমঘরটি তৈরি হয় গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়ন তহবিলের (আরআইডিএফ) টাকায়। এর জন্য খরচ ধরা হয় ১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা।
বহুমুখী হিমঘর তৈরির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৩ সালের ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার আগেই ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এটি আনুষ্ঠানিক ভাবে চালু করে দেন রাজ্যের কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায়। তবে তা একদিনের জন্যই চালানো হয়েছিল। তারপর থেকে এটি বন্ধ হয়ে যায়। বিদ্যুৎ সংযোগ আসেনি, জেনারেটর দিয়ে উদ্বোধন করা হয়েছিল হিমঘর। কিন্তু যথারীতি তা কোনও স্থায়ী সমাধান নয় বলে, তা প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বন্ধ হয়ে যায়।
কয়েক মাস আগেই শেষ হয়েছে ফুল বাজার তৈরির কাজ। হিমঘর তৈরির কাজও সম্পূর্ণ হয়েছে। ফুল বাজারে রয়েছে ৪২টি স্টল। নিলামঘর এবং খুচরো ব্যবসায়ীদের বসার জন্য খোলা চত্বর। কৃষি বিপণন দফতর সূত্রের খবর, বাগনান ১ এবং ২ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় ফুল চাষ হয়। চাষিরা পাঁশকুড়া বা কলকাতার জগন্নাথ ঘাট ফুলের বাজারে তাঁদের উৎপাদিত ফুল নিয়ে গিয়ে বিক্রি করেন। বাগনানের ফুল বাজারটি চালু হয়ে গেলে চাষিরা এখানে এসেই সরাসরি উৎপাদিত ফুল বিক্রি করতে পারবেন। এমনকী, বড় চাষিরা স্টল ভাড়া নিতে পারবেন।
বাজার তৈরি হলেও এখানে যাতায়াতের রাস্তা নিয়ে সমস্যা রয়েছে। রাস্তা না থাকার জন্যই এর আগে যে কৃষি বাজার তৈরি হয়েছিল সেখানে চাষিরা আসতে রাজি হননি বলে কৃষি বিপণন দফতরের আধিকারিকদের একাংশের অনুমান। দফতরের এক পদস্থ কর্তা জানান, যাতায়াত সমস্যা মেটানোর জন্য দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়্গপুর বিভাগের বাগনান স্টেশনের পাঁচ নম্বর প্ল্যাটফর্মের কাছ থেকে ফুল বাজার পর্যন্ত সরাসরি একটি রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। সেটা বাস্তবায়িত হলে রেলপথ ব্যবহার করে চাষিরা এই বাজারে সহজে আসতে পারবেন। কিন্তু রাস্তা তৈরির ক্ষেত্রে সমস্যা হল এখানে কয়েকজন জবরদখলকারী রয়েছেন। কৃষি বিপণন দফতরের আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, জবরদখলকারীরা যাতে স্বেচ্ছায় উঠে যান, সে জন্য বিভিন্ন মহল থেকে তাঁদের বোঝানো হয়েছে।
ফুল চাষিরা আবার জানিয়েছে, তাঁদের সঙ্গে এখনও কৃষি বিপণন দফতর কোনও আলোচনাই করেনি। চাষিদের বক্তব্য, এখানে এলে চাষিরা কী সুবিধা পাবেন, পাইকারি ব্যবসায়ীরা এখানে আসবেন কিনা সে বিষয়ে তাঁরা কিছুই জানেন না। সারা বাংলা ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ নায়েক বলেন, “পাইকারি ব্যবসায়ীরা না এলে চাষিরা ফুল বেচবেন কার কাছে, চাষিদেরই বা স্টল দেওয়া হবে কোন শর্তে, এই সব বিষয়ে চাষিদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনার দরকার রয়েছে। না হলে ফুল বাজার তৈরির উদ্দেশ্য সফল হবে না।”
রাজ্যের কৃষি বিপননমন্ত্রী অরূপ রায় অবশ্য দাবি করেন, “রাস্তা তৈরির কাজ শেষ হয়ে গেলেই বাজারটি চালু করার জন্য যা করণীয় তা করা হবে, গঠন করা হবে বাজার পরিচালন সমিতি, তারাই চাষিদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় আলোচনা করবে। ফুল বাজার চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একই সঙ্গে বহুমুখী হিমঘরটিও পুরোদমে চাষিদের জন্য খুলে দেওয়া হবে। দেওয়া হবে বিদ্যুৎ সংযোগও।”