পরিবেশবান্ধব এই গাড়িগুলির সঙ্গেই অটোর বিবাদের জেরেই উত্তেজনা ছড়ায়। সোমবার। ছবি: শান্তনু ঘোষ।
এ বার টোটো বনাম অটোর লড়াই।
আর তার জেরে সোমবার সকাল থেকে উত্তেজনা ছড়াল বালিতে। দিনের ব্যস্ত সময়ে অটোচালকদের সঙ্গে পরিবেশবান্ধব ব্যাটারিচালিত গাড়ি-‘টোটো’র চালকদের গণ্ডগোলে ভোগান্তি হয় যাত্রীদের। জিটি রোডের উপরে মারপিট, বিক্ষোভ সামলাতে নামানো হয় বিশাল পুলিশবাহিনী ও র্যাফ। শেষমেশ তিন ঘণ্টা পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
এ দিন সকালে টোটো গাড়ির চালকেরা অভিযোগ তোলেন অটোচালকেরা তাঁদের গাড়ি আটকে মারধর করেছে। তার পরেই শুরু হয় দুই তরফের গণ্ডগোল। এ নিয়ে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের বক্তব্য: “রুট পারমিট ও কোনও অনুমতি ছাড়াই রাস্তায় চলা টোটো গাড়ি বেআইনি। কিন্তু তার সঙ্গে অনেক অটোও বেআইনি। যেখানে ৮০ শতাংশ অটো বেআইনি ভাবে রাস্তায় চলছে, সেখানে তারা আর একটা বেআইনি গাড়িকে আটকাচ্ছে কেন? আর চালককেই বা মারধর করছে কেন?”
পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনার সূত্রপাত রবিবার দুপুরে। অভিযোগ, ওই দিন দুপুর তিনটে নাগাদ স্বপন দাস নামে এক টোটো চালক যখন বালিঘাট অটোর স্ট্যান্ডের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনই আচমকা ৬-৭ জন অটোর চালক তাঁর পথ আটকান। স্বপনকে ওই অটোচালকেরা বেধড়ক মারধর করেন বলে অভিযোগ। ওই দিন বাড়ি ফিরে গেলেও এ দিন সকালে পুরো ঘটনাটি অন্য টোটোচালকদের জানান স্বপনবাবু। তিনি বলেন, “কেন মারা হল, তা জানতে কয়েক জন চালক আমাকে নিয়ে বালিঘাট স্ট্যান্ডে যান। কিন্তু কেউ কোনও কথা না শুনে জনা ১৫ অটোচালক আমাদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। রড, লাঠি দিয়ে আমাদের পেটানো হয়। ভেঙে দেওয়া হয় গাড়ি।” অভিযোগ, মারধরে স্বপনবাবুর নাক ও মুখে চোট লাগে। সঙ্গে আহত হন আরও কয়েক জন।
এই ঘটনার পরেই বালি, বেলুড়, লিলুয়া ও উত্তরপাড়া জুড়ে চলা প্রায় ১০০টি টোটো গাড়ি নিয়ে বালি থানার সামনে চলে যান চালকেরা। গাড়ি চালানো বন্ধ রেখে অভিযুক্ত অটোচালকদের গ্রেফতারের দাবিতে থানার সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা। বেলা ১১টা নাগাদ ফের বালিখাল অটোস্ট্যান্ডে যান টোটোচালকেরা। কিন্তু মীমাংসার বদলে দুই দলে ফের গণ্ডগোল শুরু হয়। জিটি রোডে থমকে যায় যান চলাচল। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বালি থানা ও ট্রাফিকের বিশাল পুলিশবাহিনী। নামানো হয় র্যাফ। ঘটনাস্থলে যান হাওড়ার এসিপি, ট্রাফিক-১ শঙ্কর রায়চৌধুরীও।
কী নিয়ে বিবাদ অটো ও টোটোচালকদের?
বালিঘাট বাস স্ট্যান্ড থেকে হুগলির বাগখাল, উত্তরপাড়া এবং হাওড়ার সালকিয়ার মধ্যে অটো চলাচল করে। অটোচালকদের অভিযোগ, তাঁদের জায়গায় এসে দাঁড়াচ্ছে টোটো গাড়িগুলি। অটোর লাইনে দাঁড়ানো যাত্রী তুলে নিয়ে চলে যাচ্ছে। স্ট্যান্ডের সহ-সম্পাদক নির্মল বিশ্বাস বলেন, “সব কিছুরই একটা নির্দিষ্ট রুট থাকা দরকার। ওঁরা আমাদের জায়গায় ঢুকলে তো আমাদের রোজগারে টান পড়বে। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি থেকেই ঝামেলা হয়েছে।” অটো সংগঠনের প্রেসিডেন্ট তাপস মুখোপাধ্যায় বলেন, “আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটানো হয়েছে। টোটো গাড়ির
যাত্রী তোলার জায়গা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।”
স্থানীয় সূত্রের খবর, মাসখানেক ধরে বালি, বেলুড়, লিলুয়া ও উত্তরপাড়ার মধ্যে জিটি রোড ধরে চলাচল করছে পরিবেশ বান্ধব এই টোটো গাড়ি। এমনকী এলাকার ভিতরেও সেগুলি চালাচল করছে। ভাড়াও অটো, রিকশার থেকে অনেক কম বলেই দাবি যাত্রীদের। তাঁদের কথায়, “রিকশা ও অটোর জন্য বহুক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। তার উপরে সবাই নিজেদের মর্জিমতো চলাফেরা করে। সেখানে এই টোটো গাড়ি খুবই ভাল। কম ভাড়ায় ভাল ব্যবস্থা।” কিন্তু প্রশ্ন হল, এই গাড়িগুলি রাস্তায় নামার অনুমতি কিংবা পারমিট কে দিল?
উত্তর নেই মন্ত্রী থেকে স্থানীয় নেতা-পুলিশ কারও কাছেই।