বন্যায় নিঃসম্বল, দিল্লিই ভরসা বাংলার ঢাকিদের

মালদহ, মুর্শিদাবাদ, মেদিনীপুর, বীরভূম থেকে প্রায় নিঃসম্বল হয়ে রাজধানীতে এসেছেন ঢাকিরা। ভরসা এখানের বিভিন্ন পুজোয় বাজিয়ে যদি কিছু রোজগার করা যায়, তা হলে ফিরে গিয়ে ফের সারা বছরের লড়াইটা শুরু করতে পারবেন।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:১৭
Share:

ঘরবাড়ি ডুবেছে জলে। দিন গুজরান হয়ে উঠেছে কঠিন। এমনকী যার সাহয্যে রোজগার সেই সাধের ঢাকটিও অনেকের চুপসে গিয়েছে জলে। পকেট গড়ের মাঠ।

Advertisement

মালদহ, মুর্শিদাবাদ, মেদিনীপুর, বীরভূম থেকে প্রায় নিঃসম্বল হয়ে রাজধানীতে এসেছেন ঢাকিরা। ভরসা এখানের বিভিন্ন পুজোয় বাজিয়ে যদি কিছু রোজগার করা যায়, তা হলে ফিরে গিয়ে ফের সারা বছরের লড়াইটা শুরু করতে পারবেন। বিভিন্ন পুজো কমিটির কাছে কিছুটা বাড়তি সহায়তার জন্য আবেদনও জানাচ্ছেন অনেকে নিরুপায় হয়ে।

প্রত্যেক বারের মতোই দিল্লির পুজোয় এ বারে হাজির প্রায় শ’দুয়েক ঢাকি। অনেকেই পাখির পালক দিয়ে সাজাতে পর্যন্ত পারেননি তাদের ঢাককে। দিল্লি পৌঁছে সস্তার প্লাস্টিক দিয়ে সেই সাজানোর কাজ সারছেন। মেদিনীপুরের এগরা থেকে বাপ এবং দুই ছেলে— তিন জনেই চলে এসেছেন দিল্লি। উদ্দেশ্য কিছু বাড়তি অর্থ সংগ্রহ। গোকুলের কথায়, ‘‘এ বার ছোট ভাইটাকেও নিয়ে আসতে হল। দু’জনের থেকে তিন জনের রোজগার তো বেশি হবে।’’ উত্তরবঙ্গে বন্যার ফলে ট্রেন পরিষেবা এখনও বেহাল। তাই অনেক বেশি টাকা খরচ করে বাসে করে সেখান থেকে এসেছেন অনেক ঢাকি। উত্তরবঙ্গ থেকে আসা নকুড় মাইতির কথায়, ‘‘জলে বাড়ির সবই ভেসে গিয়েছিল। ঢাকটাকেও বাঁচাতে পারিনি। তাই অন্য এক জনের কাছ থেকে ভাড়া করে ঢাক জোগাড় করে এসেছি। জানি না যাতায়াতের টাকা, ঢাক ভাড়ার টাকা দিয়েথুয়ে কিছু বাঁচবে কিনা। কিন্তু অন্য কোনও উপায়ও তো নেই।’’

Advertisement

প্রতি বার গোটা বছরের রোজগার থেকে হাজার চারেক টাকা ঢাকিরা রেখে দেন দিল্লি যাতায়াত এবং থাকা-খাওয়ার জন্য। এ বারে সেটাও সম্ভব হয়নি। ‘‘হোটেলে থাকার পয়সা ট্যাঁকে নেই। এ বার আমরা উঠেছি নিউদিল্লি কালিবাড়িতে,’’ জানালেন রঞ্জিত দাস। চিত্তরঞ্জন পার্কের বি ব্লকের দুর্গা পুজোয় বাজাতে এসেছেন এ বার। গত দশ বছর ধরেই দিল্লি আসছেন এই ঢাকি। পাঁচ দিনে মেরে কেটে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা রোজগার। বোলপুর থেকে আসা প্রশান্ত দাস জানাচ্ছেন, এমনিতেই এই ঢাক বাজানোর পেশাটা প্রায় মরতে বসেছে। তার উপরে এ বার বন্যায় পরিস্থিতি আরও শোচনীয়। তাঁর কথায়, ‘‘মাইকের গানবাজনার দাপটে কে আর ঢাক শুনতে চায়। অথচ টানা পাঁচ দিন ধরে ঢাক বাজাতে কি কায়িক পরিশ্রম হয়, সে আমরাই জানি। সেই অনুপাতে রোজগারও বেশি হয় না।’’

বিভিন্ন পুজো সংগঠনও যে ঢাকিদের সমস্যা বুঝছেন না এমনটা নয়। বেশি কিছু পুজো কমিটি এ বার স্থির করেছেন, পরিস্থিতি বিবেচনা করে অন্যান্য বারের তুলনায় কিছুটা বেশি অর্থ ঢাকিদের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। নিউদিল্লি কালিবাড়ি দুর্গোৎসব কমিটির পক্ষ থেকে স্বপন গঙ্গোপাধ্যায় যেমন জানালেন, ‘‘আমরা চাই না এই উৎসব থেকে কেউ ম্লান মুখে ফিরে যান। এ বার একটু বেশি করেই ঢাকিদের জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে বাজেটে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement