ফাইল চিত্র।
মা ও শিশু— শিল্পীদের সবচেয়ে পছন্দের বিষয়। এ বার তাঁরা নিজেরাই হয়ে উঠলেন শিল্পী। এমন অভিনব দৃশ্য সোমবার দেখা গেল দমদম সেন্ট্রাল জেলে।
কারা দফতর সূত্রের খবর, এ দিনের অনুষ্ঠানে দমদম জেলে বন্দি ছ’জন মা ও তাঁদের সন্তানেরা একসঙ্গে ছবি আঁকলেন। তা ছাড়াও আরও ৪ জন মহিলা বন্দি এবং ৪ জন শিশুও ছবি আঁকায় অংশ নিলেন। ওই ৪ জন বন্দির মধ্যে ছবি আঁকলেন সারদা মামলার অন্যতম অভিযুক্ত দেবযানী মুখোপাধ্যায় এবং মাওবাদী বন্দি ঠাকুরমণি হেমব্রম ওরফে ‘তারা’-ও।
আরও পড়ুন: আজ পুজোর কার্নিভালে প্রচার যুব বিশ্বকাপেরও
কারা দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, জেলের মধ্যে এমন অভিনব উদ্যোগ অবশ্য নতুন নয়। এর আগে আলিপুর মহিলা জেলে এমনই এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন শিল্পী চিত্ত দে। এ দিনের অনুষ্ঠানের কথা শুনে তিনি বলেন, ‘‘মা এবং শিশুদের নিয়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরে নানা কাজ হচ্ছে। এটা খুবই ভাল বিষয়। আমরা বছর তিনেক ধরে জেল-সহ নানা ক্ষেত্রে এমন ছবি আঁকা সংগঠিত করছি। এ ধরনের উদ্যোগ যত বেশি হয়, ততই সমাজের পক্ষে ভাল।’’
কারা দফতর সূত্রের খবর, এ রাজ্যের বিভিন্ন জেলে ২৫৭টি শিশু মায়ের ভাগ্যের ফেরে জেলবন্দি। তারা জানেও না মায়েদের কী অপরাধ!
জেলে বন্দি এমন শিশুদের নিয়ে চিন্তিত রাজ্য প্রশাসন। মায়েদের অপরাধে জীবনের শুরুর সময়টাই এদের কাটিয়ে দিতে হচ্ছে জেলে। মাত্র ছ’বছর বয়সেই জেলে থাকতে থাকতে ওই সব শিশুদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে নানা অসামাজিক অভ্যেস, ভাষার ব্যবহার। এই সব শিশুদের মানসিক সমস্যা কাটিয়ে তুলতে একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে কারা প্রশাসন। নৃত্যশিল্পী অলকানন্দা রায় ইতিমধ্যেই আলিপুর মহিলা সংশোধানাগের খুলেছেন মন্টেসারি ‘হার্ট প্রিন্ট’। সম্প্রতি দমদম ও আলিপুর মহিলা জেলে রাজ্য সরকারও শিশুদের জন্য প্লে-স্কুল খুলেছে। তাতেও সমস্যা কাটছে না। এ বার ওই সব শিশুদের মানসিক গঠনে সাহায্য করতেই এই অভিনব কর্মশালা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তাতে সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে সারদা মামলার অভিযুক্ত দেবযানীর অংশ নেওয়া। জেলে ইতিমধ্যেই নানা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে উৎসাহের সঙ্গে যোগ দেন দেবযানী। আলিপুর মহিলা জেলে থাকতে তিনি বিউটি পার্লার তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। দমদম জেলে বড় ভূমিকা নিয়েছেন দুগার্পুজোতেও। এ দিনের কর্মশালায় দেবযানী নিজের ছবিতে সবুজ বাঁচানোর উপরেই জোর দিয়েছেন। সংগঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা ‘রক্ষক ফাউন্ডেশন’-এর পক্ষে চৈতালী দাস বলেন, ‘‘আমরা কোনও বিষয় বেঁধে দিইনি। এক-এক জন এক-একটি বিষয় নিয়ে এঁকেছেন। দেবযানী যেমন সবুজ মাঠ ও গাছপালা এঁকেছেন। অন্য এক বন্দি এঁকেছেন গরাদ ধরে দাঁড়িয়ে এক মহিলা। আর বাইরের আকাশে পাখি উড়ে যাচ্ছে।’’
এমন উদ্যোগ বন্দিদের সংশোধনে বিশেষ ভূমিকা নেবে বলেই মনে করছেন রাজ্যের কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘ছবি আঁকলে সব সময়েই মানুষের মন ভাল হয়। বন্দিদের দিয়ে এমন কাজ করানোয় আমরা সব সময়েই বাহবা দিই।’’