পুলিশি ঘেরোটাপ থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে ‘বহিরাগতরা’ ঢুকলেন কলেজে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বৈশাখী। —ফাইল চিত্র।
ফের গোলমাল বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলেজে। শিক্ষা দফতরের স্পষ্ট নির্দেশ সত্ত্বেও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা পদে পুনর্বহাল না করার এবং জোর করে কলেজে ঢুকে অশান্তি তৈরি করার অভিযোগ উঠল মিল্লি আল-আমিন কলেজের পৃষ্ঠপোষক সংস্থার একাংশের বিরুদ্ধে। পুলিশি ঘেরোটাপ থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে ‘বহিরাগতরা’ ঢুকলেন কলেজে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বৈশাখী। বেনিয়াপুকুর থানায় অভিযোগও দায়ের করেছেন তিনি। আগামিকাল মঙ্গলবার শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তিনি অভিযোগ জানাবেন বলেও বৈশাখী জানিয়েছেন।
মিল্লি আল-আমিন কলেজে গোলমাল অনেক দিন ধরেই চলছে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা হিসেবে যত দিন কলেজ সামলাচ্ছিলেন বৈশাখী, তত দিন শিক্ষা দফতরের সর্বোচ্চ মহলে সরাসরি যোগাযোগ করে কিছু কিছু সমস্যা ঠেকিয়ে রেখেছিলেন তিনি। তবে স্থায়ী সমাধানের জন্য যে ধরনের সহযোগিতার আবেদন তিনি শিক্ষা দফতরে জানিয়েছিলেন, সেই ধরনের সহযোগিতা তিনি সব ক্ষেত্রে পাননি বলেও বৈশাখীর অভিযোগ। গত বছরের অগস্টে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈশাখী নিজেও বিজেপিতে যোগ দেন। তার পরে মিল্লি আল-আমিন কলেজে কাজ চালানো তাঁর পক্ষে আরও কঠিন হয়ে ওঠে বলে বৈশাখী জানিয়েছিলেন। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, শোভনকে পাশে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন তিনি। কলেজের সমস্যার সমাধান ইচ্ছাকৃত ভাবে না করার অভিযোগ তুলেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দিকে। ইস্তফাও দিয়েছিলেন চাকরি থেকে।
পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য সে সময়ে বৈশাখীর ইস্তফা নেননি। তাঁর অভিযোগগুলির তদন্ত করে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য তার পরেও একাধিক বার ইস্তফাপত্র জমা দিয়েছিলেন পার্থের দফতরে। কলেজের সমস্যার স্থায়ী সমাধান কিছুতেই করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেই তিনি বার বার ইস্তফাপত্র জমা দিচ্ছিলেন। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী বার বারই তাঁর ইস্তফা গ্রহণ করতে অস্বীকার করছিলেন। পরে ২০১৯-এর ১৭ ডিসেম্বর অবশ্য আচমকাই জানা যায় যে, বৈশাখীর ইস্তফা গৃহীত হয়েছে। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই ফের তাঁকে জানানো হয় যে, ইস্তফা গৃহীত হয়নি এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা হিসেবে বৈশাখী-ই ওই কলেজ চালাবেন।
আরও পড়ুন: শাহিন বাগ বিতর্ক তুঙ্গে তুলছে বিজেপি, কেজরীবাল কি শাঁখের করাতে?
দীর্ঘ দিন ধরে এই টানাপড়েন যখন চলছিল, তখন ওই কলেজটির পৃষ্ঠপোষক সংস্থার একটি অংশ কিন্তু বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাদ দিয়ে আলাদা পরিচালন সমিতি তৈরি করে ফেলেছিলেন। বৈশাখীর ইস্তফা যে গৃহীত হয়ে গিয়েছে, সে কথাও ওই অ্যাড-হক পরিচালন সমিতির তরফেই জানানো হয়েছিল বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কিন্তু সেই অ্যাড-হক পরিচালন সমিতিকেই ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে শিক্ষা দফতর। বৈশাখীকে ফের পুনর্বহাল করা হয়। শিক্ষা দফতরের সেই নির্দেশের ভিত্তিতেই সোমবার ফের কলেজে গিয়ে কাজে যোগ দেন বৈশাখী। কিন্তু অশান্তির জেরে পরিচালন সমিতির বৈঠক তিনি করতে পারেননি।
আরও পড়ুন: নির্ভুল তালিকা চেয়ে কমিশনের তিন সূত্র
বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় আনন্দবাজারকে বলেছেন, ‘‘২৮ জানুয়ারি আমি শিক্ষা দফতরের কাছ থেকে একটা চিঠি পাই। তাতে আমাকে জানানো হয় যে, আমার ইস্তফা গৃহীত হয়নি। আমার অনুপস্থিতিতে যে অ্যাড-হক পরিচালন সমিতি গঠন করা হয়েছিল, সেই সমিতি অবৈধ বলে শিক্ষা দফতর আমাকে জানায়। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা তথা পরিচালন সমিতির সম্পাদিকা হিসেবে অবিলম্বে সমিতির বৈঠক ডাকার নির্দেশও আমাকে দেওয়া হয়। সেই নির্দেশ অনুযায়ীই আমি বৈঠক ডেকেছিলাম এবং আজ কলেজে গিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ মোতায়েন থাকা সত্ত্বেও যে ভাবে একদল লোক জোর করে কলেজে ঢুকে অশান্তি তৈরি করল, তাতে কোনও বৈঠক করা যায়নি।’’
কলেজটির যে পরিচালন সমিতিকে শিক্ষা দফতর ‘অবৈধ’ ঘোষণা করেছে বলে বৈশাখী জানিয়েছেন, সেই কমিটির লোকজন অবশ্য বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা হিসেবে মানতে রাজি নন। তাঁদের তরফ থেকে একটি সাংবাদিক বৈঠক করে এ দিন দাবি করা হয় যে, বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে পুনর্বহাল করার অধিকার শিক্ষা দফতরের নেই। পুনর্বহাল করার অধিকার একমাত্র পরিচালন সমিতির এবং সমিতি তাঁকে পুনর্বহাল করেনি, বরং তাঁর ইস্তফা গ্রহণ করে নিয়েছে— এমনই দাবি করা হয় ওই সাংবাদিক বৈঠকে।
গোটা ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে বৈশাখী অবশ্য বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘সকাল থেকে কলেজে এবং আশপাশের এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। কিন্তু অবৈধ ঘোষিত হওয়া কমিটির সম্পাদক সুফিয়ান আখতার খান-সহ আরও অনেক বহিরাগত লোকজন পুলিশের সামনেই কলেজে ঢোকেন। নিরাপত্তারক্ষীর কাছ থেকে চাবি ছিনিয়ে নিয়ে কলেজের অডিটোরিয়ামে ঢুকে তাঁরা বৈঠক করতে শুরু করেন। পুলিশের সামনেই যে কলেজে এই পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, সেই কলেজে স্বাভাবিক ভাবে কাজ চালানো কী করে সম্ভব আমার জানা নেই।’’
মঙ্গলবার তিনি শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি যাচ্ছেন বলে বৈশাখী জানিয়েছেন। সেখানে গিয়েই বিশদে অভিযোগ জানাবেন। তবে যে এলাকায় বৈশাখীর কলেজ, সেই বেনিয়াপুকুর থানার বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন কলেজ শিক্ষিকা। তাঁর কথায়, ‘‘পুলিশ প্রথমে অভিযোগই নিতে চাইছিল না। কলেজে এত বড় গোলমাল হয়েছে, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা হিসেবে আমি থানায় গিয়েছি। কিন্তু পুলিশ অভিযোগ নিতে রাজি হচ্ছিল না। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও আমি শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।’’