প্রতীক্ষা: দেড় মাসের শিশুসন্তানকে নিয়ে ডাকঘরের বাইরে রুকসেনা বিবি। শনিবার ইংরেজবাজারে। নিজস্ব চিত্র
ডাকঘরের দরজায় ঝুলছে তালা। তার সামনে সিঁড়িতে দেড় মাসের শিশুসন্তানকে কোলে নিয়ে বসে এক মহিলা। পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর আরও দুই ছেলেমেয়ে। তিনি মহদিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মহারাজপুরের রুকসেনা বিবি। শনিবার ভোরের আলো না ফুটতেই তিন সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে ইংরেজবাজারের মকদমপুরের ডাকঘরে চলে এসেছিলেন।
সাতসকালে ডাকঘরে কেন?
রুকসেনা বলেন, ‘‘আমার আধার কার্ডে ভুল রয়েছে। নতুন নাগরিকত্ব আইনের কথা শুনে দেরি করতে চাইনি। ঠান্ডার মধ্যেই রাতে উঠে ১০ কিলোমিটার দূরের গ্রাম থেকে ডাকঘরে কার্ড ঠিক করাতে এসেছি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ছোট ছেলের বয়স মাত্র দেড় মাস। ওকে বাড়িতে রেখে আসার উপায় তো নেই।’’
রুকসেনা জানান, তাঁর অন্য দুই সন্তান রাকিউল ও আফিয়ার আধার কার্ডে গ্রামের নাম ভুল রয়েছে। মহদিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বদলে রয়েছে সাহাজালালপুর। তাঁর স্বামী ফিটু শেখ বলেন, ‘‘লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে আধার কার্ড তৈরি করতে হয়েছিল। সেই কার্ড ভুলে ভরা। এনআরসি চালু হলে পরিচয়ের সঠিক নথি না থাকলে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে
বলে শুনেছি। তাই বাধ্য হয়েই সপরিবার আধার কার্ড সংশোধনে আসতে হয়েছে।’’
শুধু রুকসেনা নন। ইংরেজবাজার শহরের ডাকঘর, বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে এখন সেই ‘আতঙ্কেই’ জমছে লাইন। রাতভর সেখানে ঠায় দাঁড়িয়ে অনেকে। তবে প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ভিড় এড়াতে কার্ড সংশোধনে নির্দিষ্ট তারিখ দিচ্ছেন ব্যাঙ্ক, ডাকঘর কর্তৃপক্ষ। সেই তারিখেই হাজির হচ্ছেন মালদহের বিভিন্ন বসতির মানুষ।
শনিবার সকালে ইংরেজবাজার শহরের রাজমহল রোড সংলগ্ন এলাকার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে বাবার হাত ধরে কার্ড সংশোধনের লাইনে দাঁড়িয়েছিল মোথাবাড়ির একরত্তি মেয়ে সুমি খাতুন। তার বাবা আসমারুল শেখ বলেন, ‘‘জন্মের শংসাপত্রে মেয়ের নাম সুমি খাতুন। আর আধার কার্ডে জহুরাতুন নেশা। সব কাজ ফেলে তা-ই মেয়েকে নিয়ে আসতে হয়েছে শহরে।’’
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী জেলায় জনসংখ্যা প্রায় ৪০ লক্ষ। এখন সেই সংখ্যা আরও বেড়েছে। জেলাবাসীর একাংশের অভিযোগ, লক্ষ লক্ষ মানুষের আধার কার্ডে ভুল রয়েছে। এ নিয়ে প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এনআরসি, নতুন নাগরিকত্ব আইন নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে। তা-ই নথি সংশোধনে সকলেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।’’
মালদহের লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার সুশান্তকুমার হালদার বলেন, ‘‘লম্বা লাইন এড়াতে কার্ড সংশোধনে আগাম তারিখ দেওয়া হচ্ছে।’’