নিট পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে শিকেয় উঠল পারস্পরিক দূরত্ব-বিধি। রবিবার খড়্গপুর গ্রামীণের মাতকাতপুরে। ছবি: কিংশুক আইচ
নিউটাউনের এক পরীক্ষা কেন্দ্রে মেয়েকে নিয়ে এসেছিলেন মুর্শিদাবাদের লালগোলার বাসিন্দা সিরাজুল আরিফান। ভাড়া গুনতে হয়েছে ৯ হাজার টাকা।
কসবার রুবি পার্কের পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়ে অভিভাবক আব্দুল রহিম জানালেন, মালদহ থেকে আসতে ১২ হাজার টাকা গাড়িভাড়া দিতে হয়েছে।
দুর্গাপুরে পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল বীরভূমের পাইকরের ইসামাভি আলির। পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতে কাকার সঙ্গে ভাড়ার গাড়িতে তিনি বেরিয়েছিলেন ভোর তিনটেয়। প্রায় ১৪০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে সাগর থেকে বজবজে পৌঁছতে শিবপ্রসাদ খাঁড়াকেও ভোর চারটেয় বেরোতে হয়েছিল। সাগর, কাকদ্বীপ, ক্যানিং, গোসাবা-সহ বিভিন্ন এলাকার বহু ছেলেমেয়েই ৬০, ৭০, ১০০, ১৫০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছেছেন।
রবিবার ছিল সর্বভারতীয় মেডিক্যাল প্রবেশিকা পরীক্ষা (নিট)। পরীক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধায় জেলায় জেলায় বাড়তি বাস চলেছে। মহানগরীতে চলেছে মেট্রোরেলও। তবু কিছু পরীক্ষার্থীর দুর্ভোগ এড়ানো যায়নি। মোটা অঙ্কের গাড়িভাড়া ছাড়াও যাঁরা বাসে গিয়েছেন, তাঁদের ঠাসাঠাসি করেই যেতে হয়েছে। বাঁকুড়ার কোতুলপুরের তিন পরীক্ষার্থী পশ্চিম বর্ধমানের চিত্তরঞ্জনের নির্দিষ্ট পরীক্ষা কেন্দ্রের বদলে ভুলবশত একই নামের বার্নপুরের স্কুলে চলে যাওয়ায় পরীক্ষা দিতে পারেননি।
পূর্ব বর্ধমানের নানা এলাকা ছাড়াও নদিয়া, হুগলি, বীরভূমের অনেকে পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন বর্ধমানের নানা কেন্দ্রে। বেশির ভাগই গাড়িভাড়া করে পৌঁছন। অনেকে ঝুঁকি না নিয়ে আগে এসে হোটেলে রাত কাটিয়েছেন। কলকাতায় পরীক্ষা কেন্দ্র হওয়ায় গত বৃহস্পতিবারই দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুর থেকে ছেলে সাহিদ আলমকে নিয়ে বাসে চলে এসেছিলেন মাহাফুজ আলম। মুর্শিদাবাদের পরীক্ষার্থী ফারহানা খাতুন মায়ের সঙ্গে এসে নিউটাউনের হজ হাউসে উঠেছেন। ফারহানা বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার বাসের ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। হাজার হাজার টাকা খরচ করে গাড়িভাড়া করার সামর্থ্য আমাদের ছিল না।’’ অনেক পরীক্ষার্থীর মতে, দূরত্ব-বিধি বজায় রেখে শুধু তাঁদের জন্য ট্রেন চালাতে পারত রেল মন্ত্রক। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় রেলকর্মীদের জন্য চলা বিশেষ ট্রেনে এ দিন উঠে পড়তেও দেখা যায় কয়েক জন পরীক্ষার্থীকে।
পুলিশের উদ্দেশে বিজেপি নেতাদের মন্তব্যের প্রতিবাদে এ দিন বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ বাঁকুড়ার বড়জোড়ার পথে নেমেছিল যুব তৃণমূল। বাঁকুড়া-দুর্গাপুর রাজ্য সড়ক ধরে মিছিল করে গিয়ে চৌমাথায় পথসভা করা হয়। তার জেরে হয় যানজট। নিট পরীক্ষার্থী সুপ্রভা সিংহ বলেন, “প্রায় পনেরো মিনিট আটকে আছি। চিন্তা হচ্ছে খুব।’’ তবে তৃণমূলের দাবি, রাস্তার এক পাশ খোলা ছিল। সমস্যা হয়নি। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “পরীক্ষার্থীদের যাতে অসুবিধা না হয়, সে জন্য পুলিশ সক্রিয় ছিল।”
মালদহ, উত্তর এবং দক্ষিণ দিনাজপুরের ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন শিলিগুড়িতে। জাতীয় সড়কের একাধিক জায়গায় যানজট থাকায় তাঁদেরও ভোগান্তি হয়েছে। বাসে ঠাসাঠাসি করেই পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়েছেন সিউড়ির সইদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘‘বন্ধুবান্ধব কাউকে পাইনি। একা গাড়িভাড়া করা সম্ভব নয় বলে বাবার সঙ্গে বাসে করে গিয়েছিলাম। আমি বসতে পারলেও বাবাকে দাঁড়িয়ে যেতে হয়।’’ পুরুলিয়ার পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল পশ্চিম বর্ধমান ও
ঝাড়খণ্ডে। অনেকেই গাড়িভাড়া করে গিয়েছেন। পথে কোনও অসুবিধার অভিযোগ মেলেনি।
উত্তর থেকে দক্ষিণ, বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্রে হাজিরাও খুব একটা খারাপ ছিল না। শিলিগুড়িতে যেমন ২৫টি কেন্দ্রে ৯,২৭৬ জনের পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। পরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকরা জানান, ৭০ শতাংশের উপরে উপস্থিতি ছিল। সব মিলিয়ে উত্তরবঙ্গের প্রায় ৮২ শতাংশ পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছেন। পশ্চিম মেদিনীপুরের ২০টি পরীক্ষা কেন্দ্রের এক-একটিতেও গড়ে ৮০-৮৫ শতাংশ হাজিরা ছিল। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পরীক্ষা-পর্ব মিটেছে। তবে পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে অভিভাবকদের ভিড়ে ঘুচেছে দূরত্ব-বিধি।