ছবি: শাটারস্টক।
দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরের গভীর নিম্নচাপটি আজ, শনিবার ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হল। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ের চেহারা নিতে চলেছে। তাইল্যান্ড ওই ঘূর্ণিঝড়ের নাম দিয়েছে ‘আমফান’। প্রথমে ঘূর্ণিঝড়ের অভিমুখ উত্তরমুখী হলেও, পরে বাঁক নিয়ে তা উত্তর-পূর্ব দিকে ধীরে ধীরে এগোবে। এখনও পর্যন্ত যা গতিপ্রকৃতি, তাতে মঙ্গল-বুধবার এ রাজ্যের উপকূলে ‘আমফান’-এর আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামিকাল রবিবার ঘূর্ণিঝড়টি ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। পরে তা আরও শক্তি বাড়িয়ে অতি ভয়ঙ্কর রূপ নেবে। মঙ্গলবার ঘূর্ণিঝড়ের গতি পৌঁছে যেতে পারে প্রতি ঘণ্টায় ১৭০-২০০ কিলোমিটার। স্থলভাগের দিকে যত এগবে, তার গতি কিছুটা কমে। তবে আছড়ে পড়ার সময় আমফান কতটা শক্তি বাড়াবে, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। গোটা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। এখন থেকেই মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হচ্ছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, শনিবার দুপুরে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরের উপরে গভীর নিম্নচাপটি ওড়িশার পারাদ্বীপ থেকে ১ হাজার ৬০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে। দিঘা থেকে ১ হাজার ২২০ কিলোমিটার, বাংলাদেশের খেপুপাড়া থেকে ১ হাজার ৩৩০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে।
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার দুপুরে বলেন, “গভীর নিম্নচাপের অবস্থান এই মুহূর্তে দিঘা থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দূরে। পরে উত্তর-পূর্ব দিকে অভিমুখ থাকলেও, এখনই বলা যাচ্ছে না কখন, কোন সময়ে, কোথায় তা আছড়ে পড়বে। সময়ে সময়ে এ বিষয়ে বুলেটিন দেওয়া হবে।”
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ইতিমধ্যেই সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে মৎস্যজীবীদের। প্রশাসন সচেতন এবং সব রকম পরিস্থিতির জন্য তৈরি আছে।”
ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে ‘আমফান’ যদি এ রাজ্যের উপকূলে আছড়ে পড়ে, তা হলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কাও রয়েছে। ক্ষতি হতে পারে চাষের। একে করোনার জেরে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা, তার উপরে ‘আমফান’ যদি সরাসরি ছোবল মারে এ রাজ্যের উপকূল এলাকায়, তা হলে সঙ্কট আরও বাড়বে। ইতিমধ্যেই প্রশাসনের তরফে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় আমফান-এর গতিপথ
আমফানের প্রভাবে ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গের সমুদ্র উপকূল প্রবল জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। তার প্রভাব পড়তে পারে কলকাতা-সহ গাঙ্গেয় উপকূলের প্রায় সব জেলাতেই। তার পর ঘূর্ণিঝড় চলে যেতে পারে বাংলাদেশের দিকে। তবে সব কিছুই নির্ভর করছে উত্তর-পূর্ব দিকে নেওয়া ওই বাঁকের উপরেই।
গত বছরের নভেম্বর মাসে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’-এর গতিপ্রকৃতিও ঠিক একই রকম ছিল। ওড়িশার পারাদ্বীপের কাছ থেকে বাঁক নিয়ে এ রাজ্যের কান ঘেঁষে সুন্দরবনের উপর দিয়ে বাংলাদেশে চলে গিয়েছিল সে। ‘আমফান’ এ রাজ্যে আছড়ে পড়বে, না কি বুলবুলের পথেই সে যাবে, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে ঘূর্ণিঝড়ের জেরে এ রাজ্যে আগামী সপ্তাহের শুরুতে ঝড়-বৃষ্টি হবেই। ভাসবে কলকাতা-সহ সাত জেলা।
আরও পড়ুন: রাজ্যে করোনা-মৃত্যুর সংখ্যা ১৫৩, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত আরও ১০
আরও পড়ুন: ‘গ্রিন জ়োন’ হওয়ার পথে বেলগাছিয়া বস্তি এলাকা