রাজ্য কারা দফতর চাইছে পুজোর দিনগুলোও কারাবাসীরা বাড়িতেই থাকুক। ফাইল চিত্র।
কারাবাসীদের পুজোর ছুটি! ঠিক তেমনটা বলা না গেলেও রাজ্য সরকার চাইছে দুর্গাপুজো-সহ গোটা উৎসবের মরসুমটা নিজেদের বাড়িতেই থাকুক কারাবাসীরা। করোনা পরিস্থিতির কারণে, রাজ্যের সংশোধনাগারগুলিতে বন্দিদের ভিড় কমাতে গত মে মাসে তৃতীয় তৃণমূল সরকার শপথ নেওয়ার পরেই কয়েদিদের বড় অংশকে বাড়িতে পাঠায়। প্রথমে ৩০ দিনের জন্য ‘মুক্তি’ দেওয়া হলেও পরে তা ধাপে ধাপে বেড়েছে। এখনও পর্যন্ত যা সিদ্ধান্ত তাতে যারা বাড়িতে রয়েছে তাদের সকলের সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সংশোধনাগারে ফিরে আসার কথা। কিন্তু রাজ্য কারা দফতর চাইছে পুজোর দিনগুলোও তারা বাড়িতেই থাকুক। এ কথা স্বীকার করে রাজ্যের কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস জানিয়েছেন, ‘‘এখনও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না হলেও এমন পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা চাই, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে সকলে পুজোর সময়টাও বাড়ির লোকেদের সঙ্গে থাকুক এবং পরিবারের বাকিদের সুস্থ রাখুক।’’
করোনাকালে কারাবন্দিদের বাড়িতে পাঠানোর ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিভিন্ন রাজ্যের কারা দফতর। বাংলাতেও সেই মতো সংশোধনাগারের ভিড় কমানো হয়। রাজ্যে মোট ৬০টি সংশোধনাগার রয়েছে। সেখানে থাকা কয়েদিদের মধ্যে তিন হাজারের বেশি জনকে করোনার জন্য বাড়িতে গিয়ে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। কারা দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘এটাই প্রথম নয়। ২০২০ সালেও করোনা সংক্রমণ আশঙ্কাজনক জায়গায় পৌঁছলে ৯০ দিনের জন্য বাছাই কয়েদিদের বাড়িতে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। যারা গিয়েছিল তারা সকলেই নির্দিষ্ট সময় শেষ হতেই ফিরে এসেছিল। এ বারও তাই করা হয়েছে। ১০ মে ওই কয়েদিদের বাড়িতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এখন ভাবা হচ্ছে, পুজোর মরসুমেও যাতে তারা বাড়িতে থাকতে পারে।’’
কারা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলে থাকলেও কয়েদিরা পুজোর আনন্দ উপভোগ করতে পারে। কারণ, রাজ্যের সব জেলেই ছোট করে হলেও দুর্গাপুজো হয়। এ বার বড় অংশের কয়েদিরা না থাকলেও বাকিদের জন্য পুজো হবে। কিন্তু সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের কি এ ভাবে বাড়িতে থাকতে দেওয়া যায়? কারা দফতরের ওই কর্তা জানিয়েছেন, কোন অপরাধে কারাদণ্ড হয়েছে তা বিবেচনা করে বিশেষ কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ আইনেই রয়েছে। খুব বড় অপরাধে যারা সাজাপ্রাপ্ত বা বিচারাধীন তাদের অবশ্য সাময়িক মুক্তি দেওয়া যায় না। ফাঁসির সাজা ঘোষণার পরেও বিচারপ্রক্রিয়া চলছে এমন কয়েদিদের তো ছাড়াই যায় না।
কোন সংশোধনাগারের কত জন বন্দিকে বাড়িতে থাকার সুযোগ দেওয়া হয়েছে সে তথ্য অবশ্য জানাতে রাজি নয় কারা দফতর। একই সঙ্গে বাড়িতে থাকা বন্দিদের পরিচয়ও গোপন রাখা হয়েছে। জানা গিয়েছে, যাবজ্জীবন কারদণ্ড ভোগ করছে এমন অনেক বয়স্ক পুরুষ ও মহিলাকেও বাড়িতে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এতে কি কোনও ঝুঁকি নেই? কারা দফতরের ওই কর্তার দাবি, ‘‘যাদের ভরসা করা যায় তাদেরই পাঠানো হয়েছে। আর দীর্ঘ দিন যারা বন্দি রয়েছে, তাদের বড় অংশই বাড়ির থেকে সংশোধনাগারে থাকাটা বেশি পছন্দ করে। এদের অনেকেই পরিবার ও প্রতিবেশীদের কাছে সম্মানের সঙ্গে থাকতে পারে না। বাড়িতে থাকার খরচও রয়েছে। যারা সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করছে, তাদের আয়ও কমে যায়।’’ ওই কর্তার কথা অনুযায়ী, পুজোয় ছুটি পাওয়াটা অনেক বন্দির কাছেই সুখকর নয়। কিন্তু পরিস্থিতির কারণেই সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে কারা দফতরকে।