ফাইল চিত্র।
পঞ্চাশ হাজারের একেবারে কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে বাংলায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা। স্বাস্থ্য দফতরের অভ্যন্তরীণ রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গত ২ নভেম্বর পর্যন্ত রাজ্যে ডেঙ্গিতে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৪৮ হাজার ৫৭ জন। সামগ্রিক ভাবে রাজ্যে ডেঙ্গি সংক্রমণের হার ১২.৭ শতাংশ। স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, বিগত বছরগুলির মোট আক্রান্তের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে ২০২২।
রিপোর্ট বলছে, প্রতিটি জেলাকে আলাদা করে ধরলে পজ়িটিভিটি রেট বেশির নিরিখে প্রথমে রয়েছে কলকাতা (২৪.৮ শতাংশ)। তার পরে উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি-সহ অন্যান্য জেলা রয়েছে। হাওড়া পুরসভা সূত্রে খবর, ৪২ সপ্তাহে জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। হাওড়া পুর এলাকায় এখনও পর্যন্ত প্রাণ গিয়েছে পাঁচ জনের। মুখ্য প্রশাসক সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘প্রথম দিকে কাজ করতে গিয়ে পুরকর্মীদের বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়িতে গেলে ঢুকতে দেওয়া হত না। তবে ধীরে ধীরে সেই সমস্যা মেটানো গিয়েছে। এখন মানুষকে অনেকটাই সচেতন করে তোলা সম্ভব হয়েছে। নির্দেশ না মানলে কড়া পদক্ষেপও করা হচ্ছে।’’ পুরসভার দাবি, শুরুতে জেলায় যে হারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছিল, তা এখনও কমেছে।
তবে হুগলিতে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে বলে দাবি স্বাস্থ্য মহলের একাংশের। আক্রান্তের সংখ্যা সব চেয়ে বেশি শ্রীরামপুর, উত্তরপাড়া এবং রিষড়া পুরসভা এলাকায়। ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আরামবাগের তৃণমূল সাংসদ অপরূপা পোদ্দারের স্বামী। তিনি রিষড়ার বাসিন্দা। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রমা ভুঁইয়া বলেন, ‘‘জেলার তিনটে পুরসভায় ডেঙ্গি আক্রান্ত এক হাজারের বেশি। তালিকায় আরও কয়েকটি পুরসভা যোগ রয়েছে। জরুরি বিভাগে জ্বর নিয়ে কেউ এলে তাঁদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হয়। প্লেটলেট কাউন্টের সঙ্গে সাধারণ রোগীদের ডেঙ্গি পরীক্ষাও করা হচ্ছে। শ্রীরামপুরে শুধু ডেঙ্গি নয়, ম্যালেরিয়াও দেখা যাচ্ছে। তাই জ্বর হলে অবহেলা করা যাবে না। জল খেতে হবে বেশি করে। অনেক সময় দেখা যায়, রোগীরা দেরি করে আসেন। তখন আর কিছু করার থাকে না।’’ শ্রীরামপুর পুরসভার চেয়ারম্যান গিরিধারী সাহা বলেন, ‘‘কয়েক দিন আগে জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পুরসভার স্বাস্থ্য কর্মীরা এখন বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরীক্ষা করেন।’’
ডেঙ্গি মোকাবিলায় তৎপর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। মেদিনীপুর, খড়্গপুর ও ঘাটালের ছ’টি পুরসভা এলাকায় বিশেষ ভাবে নজরদারি চালানো হচ্ছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, অক্টোবর থেকে এখনও পর্যন্ত জেলা ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছেন ৫৪৭ জন। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গি বলেন, ‘‘প্রতিটি ব্লক ও পুরসভা এলাকায় ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়ার বিষয়ে সতর্ক করা হচ্ছে। বাড়ির আশপাশে এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখা, মশারি টাঙাতে বলা হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।’’
পুরুলিয়া জেলায় এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৭৮ জন। তবে কারও মৃত্যু হয়নি বলে খবর স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে।