শরিয়তের মধ্যেই মেয়েদের অধিকার নির্দিষ্ট হোক, দাবি

কখনও তালাক হয়ে যায় মুখে মুখে, কখনও বা চিঠিতে। তার পরে সন্তান নিয়ে আর কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকে না মেয়েটির। ইসলামি রেওয়াজ অনুযায়ী, বিয়ের সময়ে স্বামীর স্ত্রীকে মেহের বা অর্থ দেওয়ার কথা থাকলেও, এখন তা হয় নাম কা ওয়াস্তে। অথচ সেই টাকাই একটা সময়ে স্ত্রীর নিরাপত্তা হিসেবে বিচার করা হত। তাই মুসলিম মেয়েদের আইনি নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য শরিয়তের মধ্যে তাদের জন্য নির্দিষ্ট বিধি তৈরির দাবি করেছে ভারতের মুসলিম মেয়েদের সংগঠন ‘ভারতীয় মুসলিম মহিলা সংগঠন’।

Advertisement

রূপসা রায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৪ ০২:৪৭
Share:

মুক্তির পাঠ।—নিজস্ব চিত্র।

কখনও তালাক হয়ে যায় মুখে মুখে, কখনও বা চিঠিতে। তার পরে সন্তান নিয়ে আর কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকে না মেয়েটির। ইসলামি রেওয়াজ অনুযায়ী, বিয়ের সময়ে স্বামীর স্ত্রীকে মেহের বা অর্থ দেওয়ার কথা থাকলেও, এখন তা হয় নাম কা ওয়াস্তে। অথচ সেই টাকাই একটা সময়ে স্ত্রীর নিরাপত্তা হিসেবে বিচার করা হত। তাই মুসলিম মেয়েদের আইনি নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য শরিয়তের মধ্যে তাদের জন্য নির্দিষ্ট বিধি তৈরির দাবি করেছে ভারতের মুসলিম মেয়েদের সংগঠন ‘ভারতীয় মুসলিম মহিলা সংগঠন’।

Advertisement

১৯৩৭ সালে ব্রিটিশ শাসনে মুসলমানদের জন্য শরিয়তি আইনকে মান্যতা দেওয়া হয়। সেই সময় থেকেই বেশির ভাগ ইসালাম ধর্মাবলম্বীই বিয়ে, বিচ্ছেদ, সন্তানের কার হেফাজতে থাকবে ইত্যাদি বিষয়গুলি শরিয়ত মেনে করেন। তবে ওই সংগঠনের দাবি, কোরানের ভিত্তিতে তৈরি হওয়া সেই শরিয়তি আইনের প্রয়োগ একেক জায়গায় একেক রকম। তাই মুসলিম ব্যক্তিগত আইনের মধ্যেই একটি সর্বজনীন, নির্দিষ্ট বিধি প্রণয়ন করতে হবে বলে দাবি তাদের।

সংগঠনের তরফে জাকিয়া সোমান জানান, ইতিমধ্যেই সংসদে আলোচনা করার জন্য একটি খসড়া আইন তৈরি করেছেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, ন্যূনতম বিয়ের বয়স মেয়েদের ১৮ ও ছেলেদের ২১ করা হোক। মৌখিকভাবে তালাক দেওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হোক। তাঁদের দাবি, কোরান অনুযায়ী তিন মাস ধরে তালাক-ই-এহসান প্রথা অনুযায়ী বিবাহ-বিচ্ছেদ করতে হবে। স্বামীর বাৎসরিক আয়ের অনুপাতে বিয়ের সময়ে স্ত্রীকে ন্যূনতম মেহের দিতে হবে। বিয়ে নথিভুক্ত করাতে হবে। বিচ্ছেদের পরে স্বামীকে স্ত্রী ও সন্তানের ভরণপোষণের খরচ দিতে হবে ও বিয়ের সময়ে কাজির ভূমিকাও নির্দিষ্ট করে বলতে হবে। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই দেশের ১৫টি রাজ্যে প্রচার চালিয়েছেন তাঁরা।

Advertisement

জাকিয়ার মতে, সমাজে মুসলিম মেয়েদের অবস্থান প্রান্তিকের মধ্যে প্রান্তিক। শরিয়তি আইনের দোহাই দিয়ে রাষ্ট্রও তাঁদের অবস্থার উন্নতির জন্য চেষ্টা করে না। মুসলিম ব্যক্তিগত আইনকে অতিক্রম করার সাহসও নেই এই মেয়েদের। তাই যদি মুসলিম ব্যক্তিগত আইনের মধ্যেই মেয়েদের জন্য নির্দিষ্ট বিধি তৈরি করা যায়, তবে মেয়েদের উপর শরিয়তি আইনের অপপ্রয়োগ খানিকটা হলেও কমবে। এই প্রসঙ্গে সমাজকর্মী মীরাতুন নাহার বলেন, “ইসলামের মূল কথা হল ইনসাফ বা ন্যয়বিচার। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই শরিয়তি আইনে সেই ন্যায় বিচার প্রাধান্য পায়নি। বিশেষত মেয়েদের সম্পত্তির উত্তরাধিকার আইনে অসঙ্গতির লক্ষ করা যায়। তার ফলে শরিয়তি আইন মূলত পুরুষতন্ত্র রক্ষা করার দায় বহন করেছে। কোথায় মেয়েদের অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, এতদিন সেটা নির্দিষ্ট করে দেখানোর মতো কেউ ছিল না। ভারতীয় মুসলিম মহিলা আন্দোলন এই কাজটিই করতে এগিয়েছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement