এমনই সব গয়না মিলবে দীপার প্রদর্শনীতে। — নিজস্ব চিত্র
‘সোনা’র পদক হাতছাড়া হয়েছে ভোটে। সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে রুপোয়। তবে তার পর থেকে হাতে সময়ও অনেকটা বেড়েছে তাঁর। সেই সোনালি সময়েরই এখন সদ্ব্যবহার করছেন দীপা দাশমুন্সি।
রুপোলি নকশা এঁকে। এবং সেটা আক্ষরিক অর্থেই!
সোনা নয়, রুপোই তাঁর ভাললাগা এবং শখ। এত দিন সেই শখেই একটু একটু করে রুপো খুঁজেছেন শহর থেকে দেশের অলি-গলি, এমনকী বিদেশেও। নিজের জন্য। দেশ-বিদেশ থেকে খুঁজে আনা সেই রুপোর সম্ভারকেই এ বার নিজের মনের মতো করে নতুন নতুন অলঙ্কারের রূপ দিয়েছেন দীপা। এবং এখানেও না থেমে সেই গয়নার সম্ভারের পুরোদস্তুর প্রদর্শনী শুরু করতে চলেছেন রায়গঞ্জের প্রাক্তন সাংসদ।
প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির জায়া দীপা রাজনীতির বৃত্তে বরাবরই ফ্যাশনদুরস্ত। তাঁর গয়না, শাড়ি, ‘ট্রেডমার্ক’ বড় গোল টিপ— নজর কেড়েছে দিনের পর দিন। ভোটের প্রচারেও দীপাকে দেখে তাঁর শাড়ির সঙ্গে রং মেলানো টাসেল দেওয়া রুপোর পেন্ডেন্ট, কানের দুল, হাতের বালা নিয়ে বিস্তর চর্চা হয়েছে মহিলা-মহলে। কোথা থেকে এত গয়না তিনি কেনেন, কখনই বা শাড়ির সঙ্গে ‘ম্যাচিং’ গয়না বেছে রাখেন, নিজের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের পাশাপাশি অনেকেরই সে বিষয়ে কৌতূহল!
কতকটা সেই কৌতূহল মেটাতেই এ বার নিজের ডিজাইন করা রুপোর গয়নার প্রদর্শনী এবং বিক্রির আয়োজন করেছেন দীপা। তিনি বলছেন, ‘‘অনেক দিন ধরেই বন্ধুরা আমাকে গয়না নিয়ে কাজ করার উৎসাহ দিচ্ছিলেন। হাতে একটু সময় পেয়ে তাই নিজের সংগ্রহে থাকা প্রচুর রুপোর জিনিসকে একটু রদবদল করে গয়না তৈরিই করে ফেললাম।’’
কলকাতার পাশাপাশি দক্ষিণ ভারত, ওড়িশা, দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আফগানিস্তান, গ্রিস, আফ্রিকা, নানা জায়গা থেকে পছন্দ করে কেনা রুপোয় দীপা সাজিয়েছেন তাঁর গয়না। ‘ফিদা বাই দীপা’— এই ব্র্যান্ডনেমেই আজ, শনিবার থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত বালিগঞ্জের উইভার্স স্টুডিওতে তাঁর গয়নার প্রদর্শনী। যেখানে পছন্দসই গয়না হাতে নিয়ে পরখ করে কিনে ফেলতে পারবেন যে কেউ। পুজোর মুখে এই প্রদর্শনীতে দীপা বেছেছেন মূলত শিব-দুর্গা, লক্ষ্মী-নারায়ণ, গণেশের মতো দেব-দেবীর আদলকেই। নিজে ভালবাসেন গলার নিত্য-নতুন গয়না। তাঁর পসরায় তাই গলার গয়নারই প্রাধান্য।
ব্র্যান্ডের নামটা দীপা নিজেই দিয়েছেন। বলছিলেন, ‘‘আরবিতে ‘ফিদা’ শব্দের মানে রুপো। আর এমনিতে আমরা তো কোনও জিনিসের প্রতি অনুরাগ বা খুব ভাললাগা বোঝাতে ফিদা কথাটা বলিই। রুপো আর ভাললাগা দু’টোর মিশেলেই ফিদা বাই দীপা।’’
তবু প্রশ্নটা করতেই হল তাঁকে। বিধানসভা ভোটে ভবানীপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পরাজয়ের জেরে রাজনীতিতে কিঞ্চিৎ ‘নিষ্প্রভ’ হয়ে পড়েই কি আপাতত তাঁর এই গয়না-বিলাস? উত্তরটা দিলেন যেন আগাম আঁচ করেই। মুচকি হেসে দীপার জবাব, ‘‘রাজনীতিকেরও নিজস্ব একটা সত্তা থাকে। ছোটবেলা থেকেই আমি ছবি আঁকা শিখেছি। অনেক নাটক, ছবির কস্টিউম ডিজাইনও করেছি। আর গয়না আমার ভাললাগা। তাই গয়না নিয়ে এখন প্রদর্শনী করছি বলে রাজনীতি থেকে সরে আসার কথা আসছে কেন? রাজনীতি থেকে সরব কেন?’’
মঞ্চে দাপিয়ে অভিনয় করেছেন এককালে। এখনও সময় পেলেই ছবি আঁকেন। নিজের ভাললাগার সেই দুনিয়া থেকেই কয়েক টুকরো রুপোলি রেখা এ বার সকলকে দিতে চান দীপা দাশমুন্সি।