Maternal Mortality

অক্সিটোসিন, না কি ডাক্তারের গাফিলতিতে প্রসূতি মৃত্যু, বিতর্ক

প্রসূতি মৃত্যুর জন্য চিকিৎসকের গাফিলতি দায়ী নাকি হাসপাতালে প্রসবের জন্য ব্যবহৃত ‘অক্সিটোসিন’ হরমোন দোষী—তা নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের সঙ্গে স্ত্রীরোগ চিকিৎসকেদের একাংশের বিরোধ তৈরি হয়েছে।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৫:৩০
Share:

— প্রতীকী চিত্র।

সরকারি হাসপাতালে প্রসূতি মৃত্যুর জন্য চিকিৎসকের গাফিলতি দায়ী নাকি হাসপাতালে প্রসবের জন্য ব্যবহৃত ‘অক্সিটোসিন’ হরমোন দোষী—তা নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের সঙ্গে স্ত্রীরোগ চিকিৎসকেদের একাংশের বিরোধ তৈরি হয়েছে।

Advertisement

গত ৪ ডিসেম্বর রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে প্রসূতি মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে ডাকা অনলাইন বৈঠকে এ নিয়ে উত্তপ্ত কথা কাটাকাটি হয়। সেখানে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ অধিকর্তা, সহ অধিকর্তা, একাধিক মেডিক্যাল কলেজের কর্তা ও স্ত্রীরোগ চিকিৎসকেরা উপস্থিত ছিলেন। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, একাধিক প্রসূতির মৃত্যুর জন্য স্বাস্থ্যকর্তারা বৈঠকে চিকিৎসকদের গাফিলতি, দেরি এবং ভুল চিকিৎসাকে দায়ী করে সমালোচনা করার পরেই কয়েক জন স্ত্রীরোগ চিকিৎসক প্রতিবাদ করেন। স্বাস্থ্যকর্তারা অভিযোগ করেন, ‘‘বহু ক্ষেত্রে প্রসূতির চিকিৎসা দেরিতে শুরু করা হচ্ছে, ফেলে রাখা হচ্ছে, তাঁর দেহে তরলের ভারসাম্য বজায় রাখা হচ্ছে না। সিনিয়র ডাক্তারেরা প্রসূতিকে দেখতে আসছেন না।তাঁদের বদলে পিজিটি বা স্নাতকোত্তর স্তরের পড়ুয়াদের দিয়ে অস্ত্রোপচার করানো হচ্ছে। এতেই প্রসূতিমারা যাচ্ছেন।’’

এর পাল্টা চিকিৎসকেরা দাবি করেন, সরকারি হাসপাতালে প্রসব সহজ করার জন্য যে অক্সিটোসিন হরমোন ব্যবহার করা হয় তার মান নিয়ে একেবারেই সন্তোষজনক নয়। তাঁদের অভিযোগ, সেটি ব্যবহার করার পরেই বহু সুস্থ প্রসূতির অবস্থা খারাপ হচ্ছে। তাঁদের কিডনি আচমকা বিকল হয়ে শরীর জলশূন্য হয়ে যাচ্ছে, একাধিক ডায়ালিসিসের পরেও তা ঠিক হচ্ছে না। বার-বার বলা সত্ত্বেও স্বাস্থ্য দফতর কেন্দ্রীয় সরকারের অধিকৃত একটি সংস্থার থেকেই অক্সিটোসিন কিনে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তাঁরা।

Advertisement

ওই বৈঠকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক স্ত্রীরোগ চিকিৎসকের সঙ্গে স্বাস্থ্যকর্তাদের বাদানুবাদ বাড়তে শুরু করে। সূত্রের খবর, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতরের অধিকর্তা প্রসূন কুমার দাস এক সময়ে ওই চিকিৎসককে বৈঠক থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। তার পর স্বাস্থ্যকর্তারা নিজেরাই বৈঠক মাঝপথে বন্ধ করে দেন। পরে ন্যাশনালের ওই স্ত্রীরোগ চিকিৎসককে কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়া হয়। গত বুধবার স্বাস্থ্য ভবনে উত্তর পাঠিয়েছেন ওই চিকিৎসক। তাঁর অভিযোগ, ‘‘২০১৮ সালের পর থেকে ওই অক্সিটোসিন ব্যবহার করেই পশ্চিমবঙ্গে প্রসূতি মৃত্যুর হার প্রতি এক লক্ষ জীবিত শিশুর জন্মের নিরিখে ৯৪ থেকে বেড়ে ১০৩ হয়েছে, যা জাতীয় গড়ের থেকে বেশি। কিন্তু স্বাস্থ্য দফতর শুধু ডাক্তারদেরই ধমকাচ্ছে।’’

প্রসূন কুমার দাসকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে বলেন, ‘‘যা বলার স্বাস্থ্য অধিকর্তা বলবেন।’’ স্বাস্থ্য অধিকর্তা স্বপন সোরেন ‘‘বৈঠকে ব্যস্ত আছি, কিছু বলতে পারব না’’ বলে জানান।

এক স্বাস্থ্য কর্তার কথায়, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের ওই সংস্থা থেকেই বেশির ভাগ রাজ্য অক্সিটোসিন কেনে। নিকট অতীতে একাধিক বার তার মান পরীক্ষা করা হয়েছে ল্যাবরেটরিতে। খারাপ কিছুই মেলেনি। পশ্চিমবঙ্গে বছরে প্রায় ১২ লক্ষ প্রসব হয়। তার মধ্যে সিজ়ার হয় কম-বেশি পাঁচ লক্ষ মায়ের। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৭০০-৭৫০ প্রসূতির মৃত্যু হয়। কিন্তু একই অক্সিটোসিন তো প্রত্যেককেই দেওয়া হয়। তার মান খারাপ হলে তো অনেক বেশি প্রসূতির মৃত্যু হওয়ার কথা।’’

যদিও ন্যাশনালের ওই স্ত্রীরোগ চিকিৎসকের দাবি, ‘‘কেরল, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খন্ডের মতো অনেক রাজ্য ওই সংস্থার অক্সিটোসিন ব্যবহার বন্ধ করেছে এবং তার পরেই সেখানে প্রসূতি মৃত্যু চোখে পড়ার মতো কমেছে। অথচ পশ্চিমবঙ্গ চুপকরে আছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement