CPM

জ়োনাল কমিটিই কি ভাল ছিল, বিতর্ক ফিরল সিপিএমে

দলের সব জেলার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এবং ৬টি গণ-সংগঠনের রাজ্য নেতৃত্বের তরফে চারশোর কাছাকাছি প্রতিনিধি ছিলেন হাওড়ায় সিপিএমের ‘মিনি প্লেনাম’ বা রাজ্য কমিটির বর্ধিত বিশেষ অধিবেশনে।

Advertisement

 সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:২১
Share:

—প্রতীকী ছবি।

পরপর দু’টি বিধানসভা নির্বাচনে বিপর্যয়ের পরে সাংগঠনিক খোলনলচে বদলাতে গিয়ে কমিটি ব্যবস্থায় বড়সড় পরিবর্তন এনেছিল সিপিএম। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দলের মধ্যে আবার জোরালো বিতর্ক শুরু হল পুরনো কমিটি ফিরিয়ে আনা উচিত কি না, সেই প্রশ্নে!

Advertisement

রাজ্যে সিপিএমের বহু দিনের পরিচিত ব্যবস্থায় লোকাল এবং জ়োনাল কমিটি চালু ছিল। জেলা কমিটির নীচে ওই দুই কমিটি কাজ করতো। বাংলায় ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পরে দীর্ঘ পর্যালোচনায় সিপিএম সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, দলের কলেবর ছোট হয়ে আসুক তাতে ক্ষতি নেই। কিন্তু সক্রিয় কর্মী থাকতে হবে, সংগঠনকে গতিশীলও করতে হবে। সেই ভাবনা থেকেই ৭ বছর আগে বিলোপ ঘটানো হয়েছিল লোকাল এবং জ়োনাল কমিটির। তার পরিবর্তে তৈরি করা হয়েছিল এরিয়া কমিটি। শাখা এবং জেলা কমিটির মাঝে একটি স্তর কমিয়ে এখন ওই একটিই কমিটি রয়েছে। কিন্তু সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদ্য অনুষ্ঠিত বর্ধিত বিশেষ অধিবেশনে নানা জেলা থেকেই দাবি উঠেছে, পুরনো জ়োনাল কমিটিই সংগঠনের পক্ষে ভাল। এখন যে পদ্ধতিতে চলা হচ্ছে, তাতে সমন্বয়ের সমস্যা হচ্ছে এবং বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে বলে জেলার নেতাদের মত।

সূত্রের খবর, জেলার নেতাদের এমন সওয়ালের মুখে সমস্যা অস্বীকার করেননি সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব। তাঁরা বরং বলেছেন, এই নিয়ে দলের অন্দরে বিতর্ক এবং চর্চা জারি থাকুক। আরও মতামত আসুক। তার পরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে রাজ্য সম্মেলনে। যে হেতু জ়োনাল কমিটি বিলোপের সিদ্ধান্ত হয়েছিল প্লেনামে, তাই তার পরিবর্তন করতে হলে রাজ্য সম্মেলনই উপযুক্ত মঞ্চ। প্রসঙ্গত, কলকাতায় ২০১৫ সালে হয়েছিল সিপিএমের সর্বভারতীয় প্লেনাম। আর ২০১৬ সালে কলকাতাতেই রাজ্য সিপিএমের দু’দিনের সাংগঠনিক প্লেনামে লোকাল ও জ়োনাল কমিটি তুলে দিয়ে একটি স্তরে এরিয়া কমিটি গড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। যা নিয়ে এ বার প্রশ্ন উঠেছে ‘মিনি প্লেনামে’।

Advertisement

দলের সব জেলার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এবং ৬টি গণ-সংগঠনের রাজ্য নেতৃত্বের তরফে চারশোর কাছাকাছি প্রতিনিধি ছিলেন হাওড়ায় সিপিএমের ‘মিনি প্লেনাম’ বা রাজ্য কমিটির বর্ধিত বিশেষ অধিবেশনে। সাধারণ ভাবে প্রতিনিধিদের বক্তব্য শোনা ছাড়াও তাঁদের আলাদা দল গড়ে দিয়ে সংগঠন-সহ চারটি বিষয়ে আলোচনা করতে দেওয়া হয়েছিল। দলীয় সূত্রের খবর, সেই আলোচনার নির্যাসে উঠে এসেছে এরিয়া কমিটি নিয়ে সমস্যার কথা। বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিরা অধিবেশনে নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে জানিয়েছেন, শাখা এবং জেলার মাঝে সাংগঠনিক কাজকর্ম ও কর্মসূচি পরিচালনায় নানা ফাঁক থেকে যাচ্ছে। আগে জ়োনাল কমিটির দায়িত্বে থাকতেন দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যেরা। আর লোকাল কমিটির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হত জেলা কমিটির সদস্যদের। এখন এরিয়া কমিটির দায়িত্বে একই সঙ্গে জেলা সম্পাদকমণ্ডলী ও জেলা কমিটির সদস্যেরা যুক্ত। তার ফলে, সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে জেলা কমিটির সদস্যদের অনেক ক্ষেত্রেই সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের ‘মুখাপেক্ষী’ হয়ে থাকতে হচ্ছে।

জেলার প্রতিনিধিরা অধিবেশনে আরও জানিয়েছেন, আন্দোলন বা কর্মসূচির ক্ষেত্রে গণ-সংগঠনের বড় ভূমিকা থাকে। গণ-সংগঠনে ব্লক স্তরে কমিটি আছে। কিন্তু দলের ক্ষেত্রে এক ব্লকে একাধিক এরিয়া কমিটির ‘এক্তিয়ার’ চলে আসছে। তার জেরে গণ-সংগঠনের সঙ্গে দলের সমন্বয়েও সমস্যা হচ্ছে। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কাঠামো অনুযায়ী, শাখা ও জেলা কমিটির মাঝে কী ভাবে কোন কমিটি থাকবে, তা সংশ্লিষ্ট রাজ্যকেই ঠিক করতে হয়। উত্তর-পূর্বের কিছু রাজ্যে যেখানে সংগঠন খুবই ছোট, সেখানে যেমন শাখা ও জেলার মাঝে কোনও কমিটিই নেই। আবার ত্রিপুরা সিপিএমে জেলা কমিটির নীচে মহকুমা কমিটি আছে। তাতে ভৌগোলিক এলাকা ধরে সাংগঠনিক সমম্বয়ে সুবিধা হয় বলে দলের একাংশের বক্তব্য।

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘শুধু কমিটির জন্য কমিটি রাখলে তো হয় না। মূল উদ্দেশ্যই হল কাজের সুবিধা করা। কাজের পদ্ধতিগত প্রশ্নেই কমিটি ব্যবস্থা নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠেছে। বিষয়টা আরও আলোচনাসাপেক্ষ।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement