বৃহস্পতিবার ইস্তফা দিয়েছেন আইপিএস দেবাশিস ধর। —ফাইল চিত্র।
লোকসভা নির্বাচনের মুখে পদত্যাগ করেছেন আইপিএস অফিসার দেবাশিস ধর। রাজ্যের মুখ্যসচিব বিপি গোপালিকের কাছে নিজের ইস্তফাপত্র পাঠিয়েছেন তিনি। তাঁর আচমকা ইস্তফা বাংলার রাজনৈতিক মহলে নানা জল্পনা তৈরি তৈরি হয়েছে। শোনা যাচ্ছে, আসন্ন লোকসভা ভোটে দেবাশিস লড়তে পারেন। তাঁকে টিকিট দিতে পারে বিজেপি। এমনকি, কোন কেন্দ্র থেকে এই প্রাক্তন আইপিএস অফিসারকে ভোটে দাঁড় করানো হবে, তা-ও ভেবে রেখেছে পদ্ম-শিবির।
বিজেপি সূত্রে খবর, আইপিএস দেবাশিসের জন্য বীরভূম কেন্দ্রটির কথা ভেবে রেখেছে দল। ওই কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী শতাব্দী রায়। তাঁর বিরুদ্ধে বীরভূমে দেবাশিসকে দাঁড় করানো হতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রাক্তন অভিনেত্রী এবং প্রাক্তন আইপিএসের লড়াই দেখবে বাংলা।
ইস্তফাপত্রে যদিও ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখিয়েছেন দেবাশিস। জানিয়েছেন, নিজের কিছু সামাজিক এবং ব্যক্তিগত লক্ষ্য অনুসরণ করতে চান তিনি। তাই ইস্তফা দিচ্ছেন। এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকে আলোচনা শুরু করে দিয়েছেন।
গত বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে ভোটের দিন কোচবিহারের শীতলখুচিতে যখন গুলি চলেছিল, দেবাশিস তখন ওই জেলার পুলিশ সুপার ছিলেন। বর্তমানে তিনি ‘কম্পালসারি ওয়েটিং’ বা বাধ্যতামূলক প্রতীক্ষায় ছিলেন। দেবাশিসের বিরুদ্ধে আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন সম্পত্তির মামলায় তদন্ত শুরু করেছিল রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডি। দীর্ঘ সময় ধরে তদন্তকারীদের স্ক্যানারে ছিলেন তিনি। শীতলখুচিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে চার গ্রামবাসীর মৃত্যুর ঘটনার পরে দেবাশিসের সম্পত্তির বিভিন্ন নথি সংগ্রহের কাজ শুরু করেন তদন্তকারীরা। তা থেকেই জানা যায়, ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে কয়েকশো গুণ সম্পত্তি বৃদ্ধি পেয়েছে ওই অফিসারের।
এই সংক্রান্ত তদন্তের স্বার্থে দেবাশিসের বাড়িতে তল্লাশিও চালিয়েছিলেন সিআইডির গোয়েন্দারা। উদ্ধার করা হয়েছিল অনেক নথিপত্র। ব্যবসায়ী সুদীপ্ত রায়চৌধুরীর সঙ্গে দেবাশিসের যোগাযোগও এক সময়ে সিআইডির আতশকাচের নীচে ছিল। দেবাশিসের পাশাপাশি ওই ব্যবসায়ীর বাড়িতেও তল্লাশি চালানো হয়েছিল। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল বেশ কিছু নথিপত্র এবং অন্যান্য সামগ্রী। শীতলখুচির ঘটনার পরেও দেবাশিসকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল সিআইডি। তিনিই এ বার বীরভূম কেন্দ্রে বিজেপির ‘অস্ত্র’ হতে চলেছেন বলে জল্পনা।
লোকসভা ভোট শুরু হচ্ছে ১৯ এপ্রিল থেকে। রাজ্যের ২৩টি আসনে বিজেপি এখনও প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। এমনকি, সেই তালিকায় রয়েছে জলপাইগুড়ির মতো কেন্দ্রও, যেখানে প্রথম দফায় ১৯ এপ্রিল ভোটগ্রহণ হওয়ার কথা। বিজেপি সূত্রে খবর, রাজ্যের বিভিন্ন কেন্দ্রে এখনও একাধিক প্রার্থীর নাম নিয়ে জট রয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগে শনিবার রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে আরও এক দফা বৈঠক করতে পারে শীর্ষ নেতৃত্ব। যে কারণে শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদারদের দিল্লিতে তলব করা হয়েছে।