জগন্নাথদেবের রথের রশি টেনে পুণ্যলাভের আশায় বাংলার অনেকেই এখন পুরীমুখী। সেই দলে আছেন আলিপুর আদালতের শ’তিনেক আইনজীবীও। ফলে ওই দায়রা ও ফৌজদারি আদালত কার্যত অচল। এবং চলতি সপ্তাহে সেই অচলাবস্থার অবসান ঘটার কোনও সম্ভাবনা নেই।
হাওড়া আদালতে আইনজীবীদের পুলিশের লাঠি চালানোর প্রতিবাদে এপ্রিল-মে মাসে আলিপুর আদালতে প্রায় ৪৫ দিন কর্মবিরতি পালন করেছেন আইনজীবীরা। তাতে কয়েক হাজার মামলার শুনানি প্রক্রিয়া পিছিয়ে গিয়েছিল। হয়রান হতে হয় হাজার হাজার বিচারপ্রার্থীকে। সুন্দরবন থেকে দিনের পর দিন বিচারের আশায় এসে ফিরে যেতে হয় অনেককেই। সেই দুর্ভোগের পরে মাস দেড়েক কাটতে না-কাটতেই ফের পুণ্যার্জনের লক্ষ্যে পুরী ছুটেছেন আইনজীবীরা। অধিকাংশ আইনজীবী সোমবার রওনা হয়ে গিয়েছেন। ফিরবেন শুক্রবার। শনিবার আদালত বন্ধ। আদালতে ফের স্বাভাবিক কাজকর্ম হবে আগামী সোমবার, ৮ জুলাই। অর্থাৎ ওই আদালতে ফের দিন সাতেকের অচলাবস্থা!
আলিপুরের দায়রা ও ফৌজদারি আদালতে প্রায় ৪৬টি এজলাস রয়েছে। সোমবার থেকে প্রায় সব বিচারকের এজলাসেই শুনানি বন্ধ রয়েছে। পুরী যাওয়ার আগেই অধিকাংশ আইনজীবী মামলা শুনানির দিন পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন জানিয়ে নতুন তারিখ নিয়েছেন। আলিপুর আদালতের বিশেষ সরকারি আইনজীবী পার্থসারথি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আইনজীবীরা কোনও চাকরি করেন না। তাঁদের স্বাধীনতা রয়েছে। কিন্তু মানবিকতার বিষয়টিও মাথায় রাখা উচিত ছিল। দীর্ঘদিন কর্মবিরতি চলায় বিচারপ্রার্থীরা হয়রান হয়েছেন। পুরী যাওয়ার আগে সেই বিষয়টি তাঁদের মাথায় রাখা উচিত ছিল।’’
বুধবার দুপুরে আলিপুরের দায়রা ও ফৌজদারি আদালতে গিয়ে দেখা যায়, কার্যত কর্মবিরতির পরিবেশ। প্রায় সব আইনজীবীর ঘরই ফাঁকা। আদালত সূত্রের খবর, অধিকাংশ বিচারকের এজলাসেই শুনানি হয়নি। পুণ্যার্জনের আশায় পুরী গিয়েছেন আলিপুরের আইনজীবী তথা কলকাতা পুরসভার মেয়র-পারিষদ বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়ও। ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘মাস ছয়েক আগে হোটেলের ঘর ভাড়া করার পাশাপাশি ট্রেনের টিকিট কাটা হয়েছিল। তখন কর্মবিরতির বিষয়টি ছিল না। তবে কয়েক দিনের বিষয় বলে সফর বাতিল করিনি। পুজোর বিষয়টিও রয়েছে।’’ পুণ্যার্থীর তালিকায় রয়েছেন অনেক ‘হেভিওয়েট’ আইনজীবীও। বিপ্লব গোস্বামী লগ্নি সংস্থা সারদা ও রোজ ভ্যালির আর্থিক কেলেঙ্কারির মামলায় অভিযুক্তদের আইনজীবী। মামলা ছেড়ে তিনিও পুরীতে।
‘‘বেশ কয়েক বছর আসছি। একটা অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। মামলার তেমন কিছু অসুবিধা হবে না,’’ বলেন বিপ্লববাবু।