নিহতের বাড়িতে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। নিজস্ব চিত্র
বিজেপি-র দেওয়া চেক ফিরিয়ে দিল দলেরই নিহত বুথ-সভাপতি সন্দীপ ঘোষের পরিবার। সোমবার কাঁকসার রূপগঞ্জে নিহত নেতার বাড়িতে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, দলের জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুই-সহ বিজেপি-র নেতারা। চেক ফিরিয়ে দেওয়া কেন, তা নিয়েও বিজেপি-তৃণমূল চাপানউতোর তৈরি হয়েছে জেলায়।
এ দিন সকালে বাবুল-সহ বিজেপি নেতারা পাঁচ লক্ষ টাকার চেক সন্দীপের বাবা বিজয়বাবুকে দিতে যান। বাবুল-সহ বিজেপি-র নেতারা বারবার তা নেওয়ার জন্য বিজয়বাবুকে অনুরোধ করলেও তিনি চেক নেননি। পরে কাছেই দাঁড়িয়ে থাকা নিহতের মা প্রতিমাদেবী ও দিদি লক্ষ্মীদেবীর হাতে চেক তুলে দিতে যান বিজেপি নেতারা। প্রথমে তাঁরা সেই চেক গ্রহণ করেও পরে ফিরিয়ে দেন।
কিন্তু কেন চেক নিল না ওই পরিবার? বিজয়বাবুর কথায়, ‘‘ছেলে মারা গিয়েছে। ছেলের মৃত্যুর পরিবর্তে টাকা নিতে পারব না। আমি চাইও না, গ্রামবাসী এ নিয়ে কোনও কথা বলুক।’’ লক্ষ্মীদেবীও বলেন, ‘‘সন্দীপ বাড়ির একমাত্র উপার্জনকারী ছিল। কিন্তু আমরা টাকা চাই না। বাড়ির কারও জন্য যদি কোনও কাজের ব্যবস্থা করা হয় সরকারি ভাবে, তা হলে আমরা উপকৃত হব।’’ একই কথা বলেন নিহতের ছোট জামাইবাবু অভিজিৎ মণ্ডলও।
চেক নিচ্ছেন না দেখে বারবার বাবুল বলার চেষ্টা করেন, ‘‘এটা কোনও ক্ষতিপূরণ নয়।’’ সেই সঙ্গে তিনি এ-ও জানান, সন্দীপের দিদি লক্ষ্মীদেবীর ছোট ছেলের পড়াশোনার জন্য একটি ‘ফিক্সড ডিপোজিট’ করে দেওয়া হবে দলের তরফে। বিজেপি-র জেলা সভাপতি লক্ষ্মণবাবু বারবার দাবি করেন, ছেলের জন্য অ্যাকাউন্ট করায় লক্ষ্মীদেবী বাধা দেননি। যদিও বিজেপি নেতারা বাড়ি ছাড়ার পরে লক্ষ্মীদেবী জানান, কোনও আর্থিক অনুদানে তাঁদের সম্মতি নেই।
তবে নিহতের পরিবারের এই চেক না নেওয়ার জন্য বিজেপি নেতৃত্ব তৃণমূলের বিরুদ্ধেই অভিযোগ করেছেন। বিজেপি-র পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের অভিযোগ, ঘটনার পরে থেকেই তৃণমূল ওই পরিবারটিকে নানা ভাবে ভয় দেখাচ্ছে। পরিবারের লোকজন আতঙ্কে রয়েছেন। লক্ষ্মণবাবুর আরও সংযোজন, ‘‘রবিবার রাতেও তৃণমূলের লোকজন নিহতের বাড়ি এসে ২০ লক্ষ টাকা ও সরকারি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ সব কারণেই আমাদের চেক ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছেন ওই পরিবারের লোকজন।’’ তবে কোনও চাপ বা ভয়ে চেক না নেওয়ার কথা স্বীকার করেননি বিজয়বাবু, লক্ষ্মীদেবী-সহ নিহতের পরিবারের লোকজন।
যদিও তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই পরিবারটি তৃণমূলের সমর্থক। কাজেই তৃণমূলের কর্মীরা সন্দীপের বাড়িতে খোঁজ নিতে যেতেই পারেন। কিন্তু বিজেপি-র অভিযোগ একেবারেই ভিত্তিহীন। শোকগ্রস্ত একটি পরিবারটিকে নিয়ে এমন রাজনীতি কোনও ভাবেই মানা যায় না।’’
গত ১০ ডিসেম্বর গুলিতে খুন হন সন্দীপ। ঘটনার পরে বিজেপি অভিযোগ করে, শেখ সইফুল নামে তৃণমূলের বিদবিহার পঞ্চায়েতের এক সদস্যের নেতৃত্বে হামলা চলে। হামলায় জড়িত সন্দেহে ন’জনের নামে অভিযোগ দায়ের হয়। যদিও অন্যতম অভিযুক্ত সইফুল ধরা না পড়ায় বিজেপি অভিযোগ করে, অভিযুক্তের তৃণমূল যোগের কারণে তাঁকে ধরছে না পুলিশ। যদিও যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূল।