দীপক রায় এবং পিউ রায়।
ভোর ৫টায় ডেকে দিতে বলেছিলেন এক পড়শিকে। কিন্তু দরজা ধাক্কা দিয়েও কারও সাড়া মেলেনি। বেলা গড়াতে সন্দেহ হয় আশপাশের সকলের। তখন দরজা ভেঙে ঢুকে দেখা যায়, শোয়ার ঘরের বাঁশের আড়া থেকে ঝুলছে দম্পতি ও তাঁদের মেয়ের দেহ। শুক্রবার দুপুরে উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগর থানার গুমা নবপল্লি এলাকার ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম দীপক রায় (৩৩), পিউ রায় (২৭) এবং মিষ্টি রায় (৮)। ঘর থেকে একটি সুইসাইড নোট মিলেছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, ঋণের দায়ে মেয়েকে মেরে আত্মঘাতী হয়েছেন দম্পতি। দেহগুলি ময়না তদন্তে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, আগের দিনই দীপক তাঁর এক পড়শিকে বলে রেখেছিলেন, ভোরে যেন তাঁদের ডেকে তুলে দেওয়া হয়। অথচ সেই পড়শি ডাকাডাকি করেও সাড়া পাননি। তখনকার মতো তিনি ফিরে যান। পড়শিদের সন্দেহ তৈরি হয়, যখন বেলা গড়ালেও দীপকদের বাড়ির দরজা বন্ধই থেকে যায়। বাড়িওয়ালা ও পুলিশের উপস্থিতিতে দরজা ভেঙে তিন জনকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, যে দিকে মেয়ের দেহ ঝুলছিল, তার উল্টো দিকে মুখ করে ঝুলছিল বাবা-মায়ের দেহ।
তদন্তকারীরা জানান, ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া সুইসাইড নোটে লেখা রয়েছে, ‘আমাদের মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। ঋণের জালে জর্জরিত হয়ে আত্মহত্যা করছি।’ ওই সুইসাইড নোটে হাতের লেখা মৃত দম্পতির মধ্যে কারও কি না, তা পরীক্ষা করে দেখা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, দীপককে কেউ টাকা পরিশোধ করার জন্য চাপ সৃষ্টি করেছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, দীপক আদতে বাংলাদেশি। গুমা নবপল্লি এলাকায় ভাড়া বাড়িতে কয়েক বছর ধরে থাকছিলেন। প্লাইউড কারখানায় কাজ করতেন। পড়শিরা জানান, শান্ত স্বভাবের পরিবারটির সঙ্গে সকলের সদ্ভাব ছিল। মেয়ে স্থানীয় একটি স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত। মাসকয়েক আগে লোক ডেকে মেয়ের জন্মদিনও পালন করেছিলেন রায় দম্পতি।