অভিমন্যু গৌড়। ফাইল চিত্র
নয়-নয় করে চার বছর পেরিয়ে গেল। সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজের মহড়া চলাকালীন গাড়ি ধাক্কায় মৃত বায়ুসেনা অফিসার অভিমন্যু গৌড়ের পরিবার এখনও বিচারের আশায় বসে আছে।
অভিমন্যুর দাদা বজরং গৌড় বৃহস্পতিবার সুরাত থেকে বলেন, ‘‘এমন একটা দেশে বাস করি, যেখানে গরিবেরা বিচার পায় না। যাঁদের হাতে অঢেল টাকা, তাঁরা অপরাধ করেও ছাড় পেয়ে যান।’’ চার বছর আগে ২১ বছরের ভাইয়ের অকালমৃত্যুর ক্ষত বজরংয়ের স্মৃতিতে আজও দগদগে হয়ে রয়েছে। ‘‘কলকাতা থেকে ফোন করে আমাদের টাকা দিতে চেয়েছিল। আমরা নিইনি। আমরা টাকা চাই না। বিচার চাই। বসে আছি সেই বিচারেরই অপেক্ষায়। প্রয়োজনে কলকাতায় যাব,’’ বললেন বজরং।
২০১৬ সালের ১৩ জানুয়ারির ভোর। কুয়াশামাখা রেড রোডে প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের মহড়া চলছিল। একটি বেপরোয়া অডি গাড়ি নিয়মের তোয়াক্কা না-করে, ব্যারিকেড ভেঙে পিষে দিয়েছিল অভিমন্যুকে। অভিযোগের আঙুল ওঠে তৃণমূল নেতা মহম্মদ সোহরাবের ছেলে সাম্বিয়া সোহরাবের দিকে। অভিযোগ, দুর্ঘটনার সময় এডি গাড়ির স্টিয়ারিং ছিল সদ্য বিবাহিত সাম্বিয়ার হাতে। দুর্ঘটনার পরে গাড়ি ফেলে পালিয়ে যান তিনি। পরে তাঁকে আশ্রয় দিয়ে অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তাঁর বাবা এবং দুই বন্ধু।
আরও পড়ুন: তফসিলি কমিশন রুখতে চায় কংগ্রেস ও বাম : মমতা
ওই চার জনকে গ্রেফতার করে মামলা শুরু করে পুলিশ। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় খুনের মামলা হয়েছিল। কিন্তু বিচার ভবনে সেই মামলা তথ্যপ্রমাণের অভাবে বদলে যায় ‘অনিচ্ছাকৃত মৃত্যু’-তে। সাম্বিয়া ছাড়া বাকি তিন অভিযুক্ত— সাম্বিয়ার বাবা মহম্মদ সোহরাব এবং সাম্বিয়ার দুই বন্ধু মহম্মদ নুর আলম ওরফে জনি ও শাহনওয়াজ খান ওরফে সোনু মুক্তি পেয়ে যান। বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে অনিচ্ছাকৃত মৃত্যু ঘটানো ও সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুরের দায়ে কলকাতার নগর দায়রা আদালত সাম্বিয়াকে দু’বছরের কারাদণ্ড দেয়। ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি এই সাজা ঘোষণার সময়ে সাম্বিয়ার দু’বছরেরও বেশি জেল খাটা হয়ে গিয়েছিল। তাই তাঁকেও মুক্তি দেওয়া হয়। বলা হয়, অভিমন্যুর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে এক লক্ষ টাকা দিতে হবে।
আরও পড়ুন: স্পর্শ করতে পারবে না কেউ, মতুয়াদের মমতা
এই সাজায় সন্তুষ্ট হয়নি পুলিশও। ঠিক হয়, পুলিশ আপিল করবে উচ্চতর আদালতে। লালবাজার সূত্রের খবর, সেই আপিল ছ’মাসের বেশি পড়ে রয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। পুলিশকর্তারা জানান, কোনও এক অজানা কারণে সেটি আজও আদালতে ওঠেনি। বজরং এ দিন বলেন, ‘‘আমাদের কাছে আদালত থেকে চিঠি এসেছিল। বলেছিল, এক লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পাব। আমরা পাল্টা চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছি, ওই টাকা আমরা চাই না। তার পরে কলকাতা পুলিশ, আদালত, এমনকি বায়ুসেনা থেকেও ফোন এসেছিল। আমরা সকলকেই বলে দিয়েছি, আমরা টাকা নয়, বিচার চাইছি।’’
নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করার জন্য বায়ুসেনাকে অনুরোধ করেছিল অভিমন্যুর পরিবার। বায়ুসেনার বক্তব্য, মামলাটি রাজ্য সরকারের সঙ্গে অভিযুক্তের। বায়ুসেনা সেখানে আলাদা ভাবে ঢুকতে পারে না।