মঙ্গলবার স্কুলের সামনে প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ কুণ্ডু। —নিজস্ব চিত্র।
স্কুল খোলানোর জন্য দাড়িভিট স্কুলের মাঠে ডাকা বৈঠকও ফলপ্রসূ হল না। প্রায় দু’হাজার ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চিয়তা তাই রয়েই গেল।
মঙ্গলবার দাড়িভিট স্কুলের মাঠেই স্কুল পরিদর্শকের ডাকা ওই বৈঠকে প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ কুণ্ডু বারবার ক্ষোভের মুখে পড়েন। ঘটনার পরে অভিজিৎবাবু এ দিনই প্রথম স্কুলে গেলেন বলে স্থানীয় সূত্রে দাবি। বৈঠক শুরুর কিছু ক্ষণের মধ্যেই তাঁর দিকে তেড়ে যান নিহত ছাত্র তাপস বর্মণের মা। সঙ্গে ছিলেন আরও কয়েক জন। তবে অভিজিৎবাবুর গায়ে কেউ হাত তোলেননি। বৈঠকে ক্ষোভে ফেটে পড়েন তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি সুবোধ মজুমদারও। তিনি বলেন, ‘‘আমরা দেখেছি পুলিশের গাড়ি থেকে গুলি চলেছে। পুলিশের গাড়িতে ছিলেন প্রধান শিক্ষক-সহ চার শিক্ষক। যদি পুলিশ গুলি না চালায়, তা হলে শিক্ষকরা বলুন, কে গুলি চালিয়েছেন!’’ ইসলামপুরের বিধায়ক তৃণমূলের কানাইয়ালাল আগরওয়াল অবশ্য বলেন, ‘‘সুবোধবাবু আসলে বলতে চেয়েছেন, কে গুলি চালিয়েছে তার তদন্ত হোক।’’ বৈঠকে অভিভাবকদের অনেকেই স্কুল খোলার দাবি তুললেও, আগে ঘটনার তদন্ত দাবি করেন।
অভিজিৎবাবু এ দিনও গ্রামবাসীদের সামনে ২০ সেপ্টেম্বর শিক্ষক নিয়োগের সব দায় তৎকালীন স্কুল পরিদর্শক রবীন্দ্রনাথ মণ্ডলের উপরেই চাপিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথবাবু কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি জানিয়েছেন, ওই দুই শিক্ষককে নিয়োগের ব্যাপারে প্রধান শিক্ষকই বারবার ফোন করছিলেন তাঁকে। তার পরে প্রধান শিক্ষকই স্কুলের এক করণিককে পাঠিয়ে তাঁর কাছ থেকে চিঠি নিয়ে গিয়েছিলেন। সেই প্রসঙ্গে অবশ্য অভিজিৎবাবু কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে সুবোধবাবু বলেন, ‘‘কখনও দেখিনি শিক্ষকরা কাজে যোগ দিতে গেলে পুলিশ লাগে। এক্ষেত্রে পুলিশ এসেছিল কেন?
কে ডাকল, কেন ডাকল?’’ অভিজিৎবাবু ও বর্তমান স্কুল পরিদর্শক সুজিতকুমার মাইতি এই প্রসঙ্গেও মুখ খুলতে চাননি।
আলোচনার শেষ দিকে প্রধান শিক্ষকের উপরে ফের চড়াও হন গ্রামবাসীরা। এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের সহায়তায় বিডিও শতদল দত্ত তাঁকে গাড়িতে তুলে ইসলামপুরে পাঠিয়ে দেন।
তবে তৃণমূল ও প্রশাসনের একাংশের ধারণা, এই বৈঠকের ফলে শাপে বর হল। কারণ, গ্রামবাসীরা নিজেদের ক্ষোভ অনেকটাই বার করে দিলেন। যদিও পরিস্থিতি সহজ করতে আরও আলোচনা প্রয়োজন। গ্রামবাসীরা অবশ্য বলছেন, ঘটনার পরে পুলিশ যে নিরীহ গ্রামবাসীদের ধরেছে, তাঁদের মুক্তি দিলে তবেই আলোচনা হবে। সুজিতবাবু বলেন, ‘‘অভিভাবকদের দাবি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হবে। ফের বৈঠক করা হতে পারে।’’