বৃহস্পতিবার ফের সরকারি অফিস থেকে শুরু করে বিভিন্ন আদালত, স্কুল, পঞ্চায়েত অফিস, পুরসভায় পূর্ণ কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়েছে। ফাইল চিত্র।
বকেয়া ডিএ বা মহার্ঘ ভাতার দাবিতে কর্মবিরতির দিন কর্মস্থলে গরহাজির কর্মীদের বিরুদ্ধে সরকারের তরফে ব্যবস্থাগ্রহণের পাশাপাশি সরকারি কর্মচারীদের প্রতি ‘অসম্মানজনক’ মন্তব্যের অভিযোগে আইনি পদক্ষেপ করতে চলেছেন আন্দোলনকারীরা। ডিএ নিয়ে অন্যতম মামলাকারী সংগঠন কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ়ের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গে রাজ্য কর্মচারী পরিষদ জানায়, ধর্মঘটের প্রেক্ষিতে সরকারি পদক্ষেপের বিরুদ্ধেও আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি চালাচ্ছে তারা। এই আবহে সরকারি কর্মীদের দু’টি যৌথ মঞ্চ আজ, বৃহস্পতিবার আবার কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে।
ডিএ আন্দোলনকারীদের সম্পর্কে মার্চের শেষে রেড রোডের ধর্নামঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী যে-মন্তব্য করেছিলেন, তার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ করেছে কনফেডারেশন। বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে কংগ্রেস প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠন আইএনটিইউসি-র অভিযোগ, ধর্নামঞ্চে ‘চোর-ডাকাত’ সম্বোধনের মধ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কমবেশি সাত লক্ষ সরকারী কর্মী সম্পর্কে অপমানজনক মন্তব্য করেছেন। ওই মন্তব্যের জেরে সরকারি কর্মীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। ১ এপ্রিল হেয়ার স্ট্রিট থানায় এবং ৩ এপ্রিল কলকাতার পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে অভিযোগ জানিয়েছে আইএনটিইউসি। মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীর কাছে ইমেল পাঠিয়ে পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন আইএনটিইউসি-র সভাপতি তথা কংগ্রেস নেতা কামরুজ্জামান কামার। সংগঠনের দাবি, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রশাসন এ বিষয়ে পদক্ষেপ না-করলে আইনের সহযোগিতা নেওয়া হবে।
কনফেডারেশনের সভাপতি শ্যামল মিত্র বলেন, “যদি পুলিশ কোনও ব্যবস্থা না-নেয়, তা হলে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে কলকাতা হাই কোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করব। এই অসম্মানের বিরুদ্ধে কাল কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়েছে।”
আজ, বৃহস্পতিবার ফের সরকারি অফিস থেকে শুরু করে বিভিন্ন আদালত, স্কুল, পঞ্চায়েত অফিস, পুরসভায় পূর্ণ কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়েছে। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ এবং কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতৃত্বে সরকারি কর্মীদের যৌথ মঞ্চ উভয়েই রয়েছে এই কর্মসূচিতে। নিয়মমাফিক জরুরি পরিষেবাকে এই কর্মবিরতির বাইরে রাখা হয়েছে। যে-সব স্কুলে পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন চলছে, সেখানে পরীক্ষা হবে। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের রাজ্য নেতা কিঙ্কর অধিকারী বলেন, ‘‘শিক্ষা দফতর বলেছিল, যাঁরা ১০ মার্চ ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করেছেন, তাঁদের বেতন কাটা হতে পারে। সার্ভিস ব্রেক হতে পারে। দেখা যাচ্ছে, শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা মার্চের পুরো বেতন পেয়েছেন। সার্ভিস ব্রেকও হয়নি। বার বার বলেছি, ভয় না-করে আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সরকারই এখন পিছু হটছে।”
রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ গুপ্ত চৌধুরী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর কুরুচিকর মন্তব্যে সরকারি কর্মচারীদের মর্যাদাহানি হয়েছে।” রাজ্য কর্মচারী পরিষদের সভাপতি দেবাশিস শীল বলেন, “দফতরে দফতরে আমাদের বিক্ষোভ কর্মসূচি যেমন চলছে, তেমনই চলবে। গত ধর্মঘটের পরে সরকার বেতন কাটার মতো যে-সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, তার বিরুদ্ধে আমরা রাজ্য প্রশাসনিক ট্রাইবুনালে মামলা করার প্রস্তুতি চালাচ্ছি।”