রাস্তায় আবর্জনা পরিষ্কার করতে হাত লাগালেন শিক্ষকরাও। নিজস্ব চিত্র।
এত নোংরা! বকেয়া ডিএ বা মহার্ঘ ভাতার দাবিতে মিছিল শেষে এমনটাই মনে হয়েছিল আন্দোলনকারীদের। আর সেই কারণেই মিছিলের পরে কলকাতার রাজপথে সাফাই অভিযান করলেন আন্দোলনরত ওই রাজ্য সরকারি কর্মীরা। শনিবার এমন ছবিই ধরা পড়ল মহানগরের রাস্তায়।
যে কোনও মিছিল হলেই কাগজ, জলের বোতল, পোস্টারে ভরে যায় রাস্তা। শনিবার ডিএ আন্দোলনকারীদের মিছিলেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দুপুর ১টা নাগাদ দক্ষিণ কলকাতার হাজরা মোড়ে শুরু হয়েছিল ‘মহামিছিল’। যা ঘিরে সরগরম হয়েছে রাজ্য রাজনীতি। ডিএ-র দাবি জানিয়ে বিভিন্ন ধরনের পোস্টার, ব্যানার নিয়ে মিছিলে শামিল হয়েছিলেন রাজ্য সরকারি কর্মীদের একাংশ। মিছিলে হাঁটার সময় কারও হাতে ছিল জলের বোতল। আবার কারও হাতে ছিল চিপসের প্যাকেট। মিছিলে হাঁটার সময়ই হাজরা চত্বরে রাস্তায় পোস্টার, জলের বোতল, কাগজ ফেলেছিলেন আন্দোলনকারীদের কেউ কেউ। যার জেরে ওই এলাকায় রাস্তা আবর্জনায় ভরে গিয়েছিল। মিছিল শেষের পর হাজরা মোড়েই সভা হয়েছিল। সেই সভা শেষ হতেই নিজেদের ফেলা রাস্তার জঞ্জাল সাফ করতে কোমর বেঁধে লেগে পড়েন সরকারি কর্মীরা।
কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই হাজরা চত্বরে রাস্তায় আবর্জনা সরিয়ে ফেলেন ডিএ আন্দোলনকারীরা। সাধারণত কোনও মিছিলের পর রাস্তায় আবর্জনা পড়ে থাকে। যাঁরা মিছিল করেছেন, তাঁরাই নিজ উদ্যোগে তা সাফ করছেন— এমন ছবি সচরাচর দেখা যায় না। সে দিক থেকে শনিবার রাজপথে ডিএ আন্দোলনকারীদের ‘সাফাই অভিযান’ ব্যতিক্রমী হয়ে রইল বলেই মনে করছেন অনেকে।
মিছিল শেষে যাঁরা আবর্জনা পরিষ্কার করতে হাত লাগালেন, তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ শিক্ষকও ছিলেন। কোনও কিছু না ভেবেই রাস্তায় পড়ে থাকা আবর্জনা পরিষ্কার করতে শুরু করেন পশ্চিম মেদিনীপুরের শিক্ষক শিবপ্রসাদ মণ্ডল, হুগলির প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কল্লোল দে’রা। তাঁদের কথায়, ‘‘আমরাই তো নোংরা করেছি। তাই আমরাই পরিষ্কার করে দিচ্ছি। শহিদ মিনারে অবস্থান চলছে, সেখানেও আমরা রোজ পরিষ্কার করছি।’’ কলকাতার রাস্তায় ডিএ আন্দোলনকারীদের এহেন দৃশ্য মনে করিয়েছে বিশ্বকাপ ফুটবলের একটি ম্যাচে জাপানি সমর্থকদের কথা। জার্মানির বিরুদ্ধে একটি ম্যাচ ছিল জাপানের। সেই ম্যাচ জার্মানিকে হারিয়েছিল জাপান। ম্যাচ শেষের পর স্টেডিয়াম পরিষ্কার করেছিলেন জাপানের সমর্থকেরা।
মিছিল শেষে রাস্তায় আবর্জনা সাফ করলেন ডিএ আন্দোলনকারীরা। নিজস্ব চিত্র।
শুধু রাস্তাই নয়! রাস্তার পাশে নর্দমায় পড়ে থাকা কাগজ, বোতলও নির্দ্বিধায় হাত দিয়ে সাফ করেছেন ডিএ আন্দোলনকারীরা। মিছিল শেষের সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কারের জন্য অবশ্য মাইকিং-ও করা হচ্ছিল। সকলেই কোনও রকম সঙ্কোচ না করে রাস্তা সাফ করলেন।
হাজরা মোড়ে দুপুর ১টায় শুরু হয়েছিল মিছিল। সেই মিছিল হরিশ মুখার্জি রোড ধরে এগিয়ে আবার হাজরা মোড়ে ফিরে আসে। মিছিল যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশের পাড়া এবং তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির সামনে দিয়ে। এ জন্য নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল। অভিষেকের বাড়ির সামনে মিছিল থেকে ওঠে ‘চোর-চোর’ স্লোগান। তবে মিছিল ঘিরে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। মিছিল শেষে হাজরা মোড়ে সভা হয়। কর্মসূচি শেষ হয় বিকেল ৪টেয়। আর তার পরই সাফাইয়ের কাজে হাত লাগান ডিএ আন্দোলনকারীরা।