৬ এপ্রিল রাজ্য আবারও কর্মবিরতির ডাক দিলেন ডিএ আন্দোলনকারীরা। ফাইল চিত্র।
বকেয়া মহার্ঘ ভাতা (ডিএ)-র দাবিতে আন্দোলন চলছিলই। এ বার সরকারি কর্মচারীদের সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আপত্তিকর’ মন্তব্যের প্রতিবাদে কর্মবিরতির ডাক দিলেন সরকারি কর্মচারীদের একাংশ। আগামী ৬ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার রাজ্য জুড়ে যাবতীয় প্রশাসনিক কাজ বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ এবং যৌথ সংগ্রামী মঞ্চ— মূলত এই দু’টি সংগঠন কর্মবিরতির ডাক দিলেও সব কর্মচারী সংগঠনকেই এই কর্মসূচিতে যোগ দিতে আহ্বান জানানো হয়েছে।
এর আগে বকেয়া ডিএ-র দাবিতে আন্দোলনের ঝাঁজ বাড়াতে গত ২০ এবং ২১ ফেব্রুয়ারি কর্মবিরতির ডাক দিয়েছিলেন সরকারি কর্মচারীদের একাংশ। গত ১০ মার্চ প্রশাসনিক ধর্মঘটেরও ডাক দেওয়া হয়। তবে আগাম অনুমতি ব্যতীত কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে বলে আগেই হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছিল রাজ্য প্রশাসন। সেই মোতাবেক ওই দিনগুলিতে অনুপস্থিত সরকারি কর্মীদের শোকজ় করে অনুপস্থিতির কারণ জানাতে বলা হয়। উত্তর ‘সন্তোষজনক’ না হলে উপযুক্ত পদক্ষেপেও কথাও জানিয়ে রাখা হয়। ডিএ নিয়ে সরকারের শীর্ষ স্তর থেকে যখন ‘অনমনীয়তা’র বার্তা দেওয়া হচ্ছে, তখনই ডিএ আন্দোলনের গতি আরও বাড়াতে চলেছেন সরকারি কর্মচারীরা।
বৃহস্পতিবার যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের তরফে বকেয়া ডিএ মেটানো, শূন্যপদে নিয়োগ-সহ একাধিক দাবিতে শহিদ মিনার ময়দানে ‘মহাসমাবেশ’-এর ডাক দেওয়া হয়েছিল। ওই সমাবেশে যোগ দিয়ে বাম-কংগ্রেস নেতারা আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়ানোর কথা জানান। পাশে দাঁড়ানোর কথা জানান বিরোধী দলনেতা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারীও। ওই সমাবেশ শেষ হওয়ার পর বৈঠকে বসেন সংগঠনের নেতারা। সেখানেই ঠিক হয় মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের বিরুদ্ধে রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করবেন সরকারি কর্মসূচিরা। ওই প্রতিবাদের অঙ্গ হিসাবেই ৬ এপ্রিল কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়েছে।
বুধবার রেড রোডের ধর্না মঞ্চ থেকে ডিএ-র দাবিতে বিক্ষোভরত রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ‘চোর-ডাকাত’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। বলেছিলেন, ‘‘এরা সব চিরকুটে চাকরি পেয়েছিল। সেই চোর-ডাকাতগুলোই গিয়ে বসে আছে ডিএ-র মঞ্চে।’’ মু্খ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যে শোরগোল পড়ে। বিরোধী দলগুলি একসুরে আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রীকে। বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘‘আগে সরকারি কর্মচারীদের কুকুর-বেড়াল বলেছিলেন। এখন চোর-ডাকাত বলছেন! খেতে দিতে না পারেন, সম্মান তো দিন! এরাই তো আপনার সরকার চালায়।” সিপিএমের নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “যে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর নিজের সরকারের কর্মচারীদের চোর-ডাকাত বলে দাগিয়ে দিতে পারেন, তাঁর তালজ্ঞান হারানোর লক্ষণ স্পষ্ট!’’ কংগ্রেসের প্রদীপ ভট্টাচার্যও বলেন, ‘‘সরকারি কর্মচারীদের সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীর মুখে এমন মন্তব্য কল্পনাই করা যায় না!’’
বিভিন্ন সরকারি কর্মচারীদের সংগঠনও মুখ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্যের সমালোচনা করে। আন্দোলনকারী যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের তরফে তাপস চক্রবর্তী বলেন, “আমরা দাবি আদায়ের জন্য লড়াই করছি। অথচ মুখ্যমন্ত্রী আমাদের চোর-ডাকাত বলে দেগে দিচ্ছেন। এটা দুর্ভাগ্যজনক।” মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য বৃহস্পতিবারেও বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার ৩৫ শতাংশ ডিএ দেয়নি। কিন্তু তাঁর সরকার প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ১০৬ শতাংশ ডিএ দিয়েছে। কেন্দ্রীয় হারে ডিএ পাওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরিতে যোগ দেওয়ারও পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “ষষ্ঠ বেতন কমিশন করে সমস্ত এরিয়ারের (বকেয়া) টাকা আমরা দিয়েছি। কমিশন যা বলেছিল, সব করেছি। আর কী চাই বাবু?”