প্রতীকী ছবি।
সরকারি কর্মীদের মহার্ঘভাতা (ডিএ) সংক্রান্ত মামলায় আবার ধাক্কা খেল রাজ্য সরকার। চলতি বছরে ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে ডিএ বাবদ যাবতীয় বকেয়া মিটিয়ে দিতে সরকারকে নির্দেশ দিল রাজ্য প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল (স্যাট)।
ডিএ নিয়ে সরকারের সঙ্গে কর্মীদের এই টানাপড়েন ২০১৭ সাল থেকে চলছে। স্যাট এবং কলকাতা হাইকোর্ট একাধিক বার কর্মীদের পক্ষে রায় দিয়েছে। স্যাটের সর্ব শেষ নির্দেশ ছিল যে, ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করার আগে বকেয়া ডিএ মেটাতেই হবে। কিন্তু সে নির্দেশ না মেনেই রাজ্য তখন বেতনক্রম চালু করে দেওয়ায় আদালত অবমাননার মতো গুরুতর অভিযোগ উঠে গিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বুধবার কঠোর অবস্থান নিল স্যাট। তারিখ নির্দিষ্ট করে জানিয়ে দিল কত দিনের মধ্যে মেটাতে হবে কর্মীদের বকেয়া প্রাপ্য।
কেন্দ্রীয় সরকার যে হারে ডিএ ঘোষণা করছে, রাজ্য তা দিচ্ছে না— এই অভিযোগে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে কর্মচারী সংগঠনগুলো একটি মামলা করে। সেই মামলার রায়ে স্যাট বলেছিল, ডিএ কর্মীদের অধিকার নয়, রাজ্য সরকারের উপর নির্ভরশীল। এটা দয়ার দান। তখন কর্মী সংগঠনগুলো হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। হাইকোর্ট তখন স্যাটের রায়কে খারিজ করে দিয়ে বলে, ডিএ দয়ার দান নয়। এটা অধিকার। পাশাপাশি জানিয়ে দেয়, স্যাট ঠিক করুক কত হারে ডিএ দেওয়া হবে। স্যাট তখন সরকারকে জানিয়ে দেয়, কেন্দ্রীয় হারে বছরে দু’বার ডিএ দিতে হবে। স্যাটের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ফের হাইকোর্টে যায় রাজ্য সরকার। কিন্তু আদালত স্যাটের রায়কেই বহাল রাখে।
বুধবার স্যাটের রায় প্রসঙ্গে সিপিএমের রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজয় শংকর সিংহ বলেন, “মহার্ঘভাতা আমাদের আইনি অধিকার। বামফ্রন্ট সরকারই স্বীকৃতি দিয়েছে। বর্তমান রাজ্য সরকার আইনকানুন, সংবিধান কিছু মানে না। প্রায় দশ বছরের মধ্যে প্রায় ২৪টি মামলায় হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্ট ভর্ৎসনা ও জরিমানা করেছে। কিন্তু এই সরকার কোনও রায়কে পরোয়া করে না। কোর্ট নির্দেশ দিতে পারে, আদায় করে দিতে পারে না। আদায় করতে হলে বা সরকারকে বাধ্য করতে হলে সব অংশের কর্মচারীদের সঙ্গে নিয়ে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হবে। নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রামই পারে দাবি পূরণে সরকারকে বাধ্য করতে।”
আরও পড়ুন: ছিল গরু, হয়ে যাচ্ছে বাছুর, কোটি কোটি টাকা ঘুষে অভিযুক্ত বিএসএফ, শুল্ক কর্তারা
সরকারি কর্মীদের বিজেপি প্রভাবিত সংগঠন কর্মচারী পরিষদের রাজ্য আহ্বায়ক দেবাশিস শীলের কথায়, “আমরা আইনি লড়াইয়ের পক্ষে। যে আইনি লড়াই রাজ্য সরকারের সঙ্গে আমরা চালাচ্ছি, তা যত দিন দরকার তত দিনই চালাব। তবে সরকার পরিবর্তন না হলে কর্মীদের কোনও সুরাহা হবে বলে আমাদের মনে হয় না। ২০২১-য় রাজ্যে বিজেপির সরকার এলে রাজ্য সরকারি কর্মীরা যে কেন্দ্রীয় হারেই মহার্ঘভাতা পাবেন, সে কথা বিজেপি নেতৃত্ব আগেই ঘোষণা করেছেন।”
রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের ছাতার তলায় থাকা কর্মী সংগঠন ফেডারেশনের প্রবীণ নেতা মনোজ চক্রবর্তী বলছেন, “আদালতের নির্দেশ সবার মানা উচিত। এই নির্দেশের বিরোধিতা করার জায়গায় আমি নেই।”