এ বারের পরিস্থিতি বঙ্কিম হাজরার কাছে ঠিক অগ্নিপরীক্ষারই মতো। ফাইল চিত্র।
সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সুন্দরবন উন্নয়ন দফতরের পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন সাগরের তৃণমূল বিধায়ক বঙ্কিম হাজরা। মন্ত্রিত্ব পাওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই গুরুদায়িত্ব চাপল তাঁর কাঁধে। আবহাওয়া দফতরের পক্ষ থেকে সুন্দরবন উপকূলে ঘূর্ণিঝড় 'ইয়াস' আছড়ে পড়ার কথা ঘোষণা হতেই চাপ বড়ল তাঁর উপর। দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও উত্তর ২৪ পরগনা মিলিয়ে মোট ১৯ টি ব্লক রয়েছে সুন্দরবনে। আয়লা এবং আমপানের মতো বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে এক লহমায় লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল গাঙ্গেয় উপকূলবর্তী অঞ্চল। সুন্দরবনের সেই ক্ষত মিটতে না মিটতে ফের নয়া আতঙ্ক 'ইয়াস'। উদ্ভূত বিপর্যয়ের মোকাবিলা করাটাই প্রশাসনের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আর সেই কাজের পরিকল্পনায় জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি বড় ভূমিকা পালন করে সুন্দরবন উন্নয়ন দফতর। তাই এ বারের পরিস্থিতি বঙ্কিম হাজরার কাছে ঠিক অগ্নিপরীক্ষারই মতো।
গত দু’দিন আগে ‘ইয়াস' ঘূর্ণিঝড় নিয়ে সরকারি চিঠি হাতে আসে বঙ্কিম বাবুর। চিঠি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মতো দুই ২৪ পরগনার জেলাশাসকদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন তিনি। প্রশাসনের পাশাপাশি পুলিশ, জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি, সেচ, বিপর্যয় মোকাবিলা-সহ বিভিন্ন জরুরি বিভাগের আধিকারিকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স-এর মাধ্যমেও চলে বৈঠক। এমনকি মহকুমা স্তরেও চলছে ম্যারাথন বৈঠক। বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কায় প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় ঝড় মোকাবিলায় সব ধরনের ব্যবস্থাপনা তৈরি রাখা হচ্ছে। আমপানের পর ক্ষতিগ্রস্ত ১৪২ জায়গায় নদী ও সমুদ্র বাঁধ মেরামতির কাজ চলছিল। ঝড়ের আগে প্রায় সবকটি জায়গায় কাজ শেষ করতে চাইছেন মন্ত্রী। আপতত বড় বাঁধ সংস্কারের ক্ষেত্রে সেচ দফতরকে দায়িত্ব দেওয়া হলেও ছোট ছোট বাঁধগুলি মেরামত করার জন্য ১০০ দিনের কাজের মাধ্যমে স্থানীয়দের নিযুক্ত করতে বলা হয়েছে ৷ ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয় কেন্দ্র এবং ফ্লাড সেন্টারগুলি ছাড়াও এ বার সুন্দরবনের প্রত্যেক মহকুমায় শতাধিক স্কুল এবং আইসিডিএস কেন্দ্রগুলিতে উপকূলের মানুষদের নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
কোভিড স্বাস্থ্যবিধির উপরেও সমান তালে নজরদারি চালানো হচ্ছে৷ সেই সব কাজ তদারকি করতে নাওয়া খাওয়া ভুলে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় চষে বেড়াচ্ছেন মন্ত্রী বঙ্কিম।
এ বারে যে কঠিন দায়িত্ব তাঁর ঘাড়ে চেপেছে তা কার্যত স্বীকারই করে নিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘ঝড়ের কথা মাথায় রেখেই প্রশাসনের সাহায্যে সুন্দরবন জুড়ে সবধরনের ব্যবস্থাপনা নিয়ে রাখা হয়েছে। তবে কোভিডের ভয়ঙ্কর সংক্রমণের মাঝেই ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়লে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা রীতিমতো চ্যালেঞ্জ-এর বিষয়। এই প্রথমবার সুন্দরবন উন্নয়ন দফতরের দায়িত্ব পেয়েছি, যতটা সম্ভব মানুষের জন্য ব্যবস্থা করছি৷ আশাকরি উপকূলের মানুষকে আমরা নিরাপদে রাখতে পারব৷’’
এক সময় সুন্দরবন উন্নয়ন বোর্ড এবং গঙ্গাসাগর বকখালি উন্নয়ন পর্ষদের (জিবিডিএ) চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকাকালীন অনেকবারই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সামনে থেকে কাজ করেছেন। সাগরের বিধায়ক হিসেবে বুলবুল ও আমপান ঘূর্ণিঝড়ের সময়েও বিপর্যয় মোকাবিলায় কাজ চালিয়েছেন তিনি। ফলে পূর্ব অভিজ্ঞতা দিয়েই 'ইয়াস' মোকাবিলায় নেমে পড়েছেন সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা।