হাওয়ার বেগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায় গাছ উপড়ে, মাটির ঘর ভেঙেছে পড়েছে ঠিকই, কিন্তু বুলবুলের প্রভাবে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। —নিজস্ব চিত্র।
পূর্বাভাস ছিল ভয়ঙ্কর ঘূ্র্ণিঝড় আছড়ে পড়ার পর লন্ডভন্ড হবে উপকূলের এলাকা। তার জেরে রবিবারও কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস ছিল। ভয়ঙ্কর রূপে যে ভাবে বুলবুল পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছিল, তা অনুমান করেই আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা এমনই সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবে বুলবুল যতটা ‘গর্জাল’ তত ‘বর্ষাল’ না! আছড়ে পড়ার পাঁচ ঘণ্টার মধ্যেই দ্রুত শক্তিক্ষয় হয় বুলবুলের। একই সঙ্গে দ্রুত গতিতে বাংলাদেশেও প্রবেশ করে বুলবুল।
পূর্বাভাসকে ভুল প্রমাণ করে রবিবার সকাল থেকে বৃষ্টি উধাও। হাওয়ার গতিবেগও তেমন একটা নেই। আকাশ পরিষ্কার। আকাশে কিছুটা মেঘ থাকলেও রোদ উঠেছে। দ্রুত এই আবহাওয়ার উন্নতি বুলবলের শক্তি ক্ষয়ের জন্যেই হয়েছে বলে জানাচ্ছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর।
হাওয়া অফিস সূত্রে খবর, ঘণ্টায় ১১০-১২০ কিলোমিটার গতি নিয়ে এগিয়ে উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছিল বুলবুল। আছড়ে পড়ার ঠিক আগেই অতি ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় (ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম) থেকে শুধুমাত্র ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ে (সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম) পরিণত হয়। আছড়ে পড়ার পর তা আরও শক্তি হারিয়ে এখন ঘূর্ণিঝড়ের (সাইক্লোনিক স্ট্রম) আকার নিয়ে বাংলাদেশের স্থলভাগে ঢুকে পড়েছে বুলবুল। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শক্তি ক্ষয় হয়ে নিম্নচাপের রূপ নিতে চলেছে।
আরও পড়ুন: বুলবুল বিদায়ের পর পারদ পতনের আশা
ফ্রেজারগঞ্জ, সাগরদ্বীপ, দিঘা, বকখালির দিকে বুলবুল প্রবল বেগে ধেয়ে এলেও, ঘূর্ণিঝড় ছোবলটা দিয়েছে সুন্দরবনের জনমানবহীন দ্বীপগুলিতে। ফলে বুলবুলের দাপটে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায় গাছ উপড়ে গিয়েছে, মাটির ঘর ভেঙেছে পড়েছে ঠিকই, কিন্তু তেমন বিপর্যয় হয়নি।
বিপর্যয় বেশি না হওয়ার আর একটি কারণ, আবহাওয়া দফতরের সঙ্গে রাজ্য প্রশাসনের সঠিক সমন্বয়, সঠিক সময়ে ঝড়ের গতিবিধির আগাম তথ্য পেয়ে যাওয়া। নবান্ন সূত্রে খবর, ঝড়ের আগেই পূর্ব মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনার উপকূলের এলাকা থেকে এক লক্ষ ৬৪ হাজার ৩১৫ জনকে সরানো হয়েছে নিরাপদ স্থানে। তাঁদের মধ্যে ১ লক্ষ ১২ হাজার ৩৬৫ জন ত্রাণ শিবিরে ছিলেন। উপকূলবর্তী এলাকায় ঝড়ের সময়েও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং পুলিশ-প্রশাসনের কর্তা ব্যাক্তিরাও ছিলেন।
আরও পড়ুন: দেওয়ালের মাটি ধুয়ে বেরিয়ে গিয়েছে বাঁশ-কাঠ
যদিও পশ্চিমবঙ্গ না বাংলাদেশ — বুলবুল কোথায় ছোবল মারবে, সুন্দরবন বদ্বীপ এলাকায় আছড়ে পড়ার চার ঘণ্টা আগেও তা নিশ্চিত করে বলতে পারছিলেন না আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা। ঘন ঘন গতি পথ বদলানোর কারণে বুলবুলের ‘মন পড়তে’ হিমশিম খাচ্ছিলেন তাঁরা। শেষ মুহূর্তে বোঝা যায় সুন্দরবনেই আছড়ে পড়তে চলেছে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়টি। আছড়ে পড়ার পর দ্রুত শক্তি ক্ষয়ের কারণেই বড়সড় বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়া গিয়েছে বলেই মনে করছেন আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা। যদিও রবিবার দক্ষিণবঙ্গে বিক্ষিপ্ত ভাবে বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর।