জলমগ্ন একাধিক গ্রাম।
২০ মার্চ মহাঝড় বয়ে গিয়েছিল রাজ্যের উপর দিয়ে। সেই আমপানের ক্ষতস্থান এখনও শুকোয়নি অনেক গ্রামে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল দুই ২৪ পরগনা। বাঁধ ভেঙে, ঘর ভেঙে, গাছপালা উপড়ে, চাষজমি ভাসিয়ে, লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন ওলটপালট হয়ে গিয়েছিল কয়েক ঘণ্টা ধরে চলা ভয়ঙ্কর সাইক্লোনে।
তার পর তিন সপ্তাহের উপর কেটে গিয়েছে। বড় ক্ষয়ক্ষতির গ্রামগুলোর কোনওটাই পুরোপুরি স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে আসতে পারেনি এখনও। তবে এর মধ্যে অনেক গ্রামের অবস্থা বেশ শোচনীয় হয়ে রয়েছে এখনও।
আরও পড়ুন: ফের দাম বাড়ল পেট্রল-ডিজেলের, এই নিয়ে পর পর আট দিন
উত্তরের তুলনায় দক্ষিণ ২৪ পরগনায় জলমগ্ন গ্রামের সংখ্যা এখন অনেকটা কমেছে। তবে সেখানেও, গোসাবার সাতজেলিয়ার মতো গ্রাম এখনও অনেকটাই জলের তলায়। “মথুরাপুরের রায়দিঘিতে কোটালে নতুন করে বাঁধ ভেঙেছে। গোসাবার ছোটমোল্লাখালির কালিদাসপুরে আট এবং নয় নম্বর ব্লকে কোনও কোনও অংশের অবস্থা বেশ বেহাল। নিচু জমিতে জল রয়ে গিয়েছে এখনও”— জানাচ্ছেন দু’দিন আগেই সেখানে ত্রাণ নিয়ে যাওয়া শমিক চক্রবর্তী। এখানে প্রায় ২ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। আপাতত জোড়াতালি দেওয়া হয়েছে, স্থায়ী মেরামত বাকি রয়েছে।
উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদ, মিনাখাঁর বেশ কিছু গ্রামের অবস্থা এখনও খুবই বেহাল। কোথাও কোথাও ২০ মে-র পর থেকে জল নামেনি। কোথাও কোথাও ক’দিন আগের ভরা কোটালে নতুন করে জল ঢুকে পড়েছে। এখনও বাঁধে ঝুপড়ি বেঁধে রয়েছেন সুন্দরবনের অনেক গ্রামের মানুষ।
হাসনাবাদ ব্লকে পাটলিখানপুরের চকপাটলি, মহিষপুকুর, ঘুনির মতো গ্রামগুলো জলে ডোবা। টিয়ামারিও তাই। তার উপর নতুন করে বাঁধ ভাঙার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে এখানে।
গৌরেশ্বর আর ডাঁসা নদীর বাঁধ ভেঙে হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের রূপমারি গ্রাম পঞ্চায়েত অঞ্চল ভেসে গিয়েছিল। ভেসে যাওয়া গ্রামগুলোর মধ্যে ছিল হলদা, বাঁশতলি, রূপমারি, কুমিরমারি। এখনও জলমগ্ন এই গ্রাম পঞ্চায়েতের অনেক এলাকা।
হাসনাবাদ ব্লকের ভবানীপুর এক নম্বর অঞ্চলের শুলকুনি গ্রামে আমপানের ১৮ দিন পর গিয়ে দেখা গিয়েছিল, গ্রামের একটা বড় অংশ তখনও জলের তলায়। এই গ্রাম ডাঁশা নদীর ধারে। তার পরের দিন সাতেকে পরিস্থিতি একটু ভাল হয়েছে।
বিদ্যাধরীর শাখানদী বুড়ির পাশে মিনাখাঁ ব্লকের আটঘড়ার কোকিলপুর গ্রাম। বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়ে গিয়েছিল আমপানে। অবস্থা খুব একটা বদলায়নি এখনও। আমপান রিলিফ নেটওয়ার্কের সদস্য বিশ্বজিৎ হাজরা গিয়েছিলেন কোকিলপুর গ্রামে। তিনি জানালেন, “কোকিলপুরে এখনও জল আছে। কিন্তু বিদ্যাধরীর উল্টো পারে মোহনপুর বলে একটা গ্রামের খবর পাচ্ছি যার অবস্থা নাকি আরও সঙ্গীন। আমাদের কিছু বন্ধু সেখানে রিলিফ নিয়ে পৌঁছেছেন। কিন্তু গ্রামের বেশি ভিতরে ঢুকতে পারেননি জলের কারণেই। এর পর আর একটু প্রস্তুতি নিয়ে ওখানে যাওয়ার কথা ভাবছি আমরা।”
১৩ মে হিঙ্গলগঞ্জের সাহেবখালি পঞ্চায়েতের রমাপুর গ্রামে গিয়েছিল একটি রিলিফ টিম। তাদের একজন তথাগত মুন্সি জানাচ্ছেন, “ভাঙা বাঁধ কোনও রকমে তোলা হয়েছে আবার। ফলে রোজকার জোয়ারের জল আর ঢুকছে না। কিন্তু এখনও গ্রামের ভিতরে অনেকগুলো বাড়ি জলে ভেসে রয়েছে দেখে এলাম।” এই গ্রামে আমপানের তাণ্ডবে ৫০টার মতো বাড়ি ভেঙেছিল। বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়ে গিয়েছিল গোটা গ্রাম। আপাতত বাঁধ তোলা হলেও তাতে নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না গ্রামবাসীরা। “অনেকেই আমাদের কাছে আশঙ্কা প্রকাশ করলেন, বড় জোয়ারে ফের ভেঙে পড়তে পারে এই ঠেকনা দেওয়া বাঁধ”— বললেন রিলিফ টিমের কিংশুক চৌধুরী।
আরও পড়ুন: ‘নিগ্রো’ শব্দ ব্যবহার করা যাবে না কোনও মামলায়, পঞ্জাব পুলিশকে নির্দেশ আদালতের
বাঁধ নিয়ে এই আশঙ্কার কথা শোনা যাচ্ছে আরও অনেক গ্রামেই। জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ মেরামত হয়েছে নদীর জল আটকানোর জন্য। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তা শক্তপোক্ত হয়নি। ভাল ভাবে মেরামতির ব্যাপারে দ্রুত সরকারি নজর না পড়লে, ফের বাঁধ ভেঙে জলপ্লাবনের সম্ভবনা থাকছে।
ছবি ও ভিডিয়ো সৌজন্য: বিশ্বজিৎ হাজরা