আমপান আছড়ে পড়ার পর পাঁচ দিন হতে চলল। এখনও জলে ডুবে রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বহু গ্রাম। ত্রাণের অপেক্ষায় হাজার হাজার মানুষ। অনেকেরই জায়গা হয়নি সরকারি ত্রাণ শিবিরে। গ্রামের উঁচু জায়গাতেই আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা। এই বিধ্বস্ত এবং জলে ডুবে থাকা ছবি রবিবার তোলা হয়েছে যোগেশগঞ্জের মাধবকাঠি গ্রামে।
উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদ, ন্যাজাট, সন্দেশখালি এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবা থেকে শুরু করে পাথরপ্রতিমা পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় আমপানের দিনই ঝড়ের তাণ্ডবে ভেঙে গিয়েছে বাঁধ। ঘরবাড়ি তো ভেঙেইছে, নদীর নোনা জলে প্লাবিত চাষের জমি, পুকুর। ভেসে গিয়েছে মানুষের জিনিস পত্র, গবাদি পশু। এই ছবি উত্তর ২৪ পরগনার চকপাটলি প্রামের।
হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের অন্যতম প্রত্যন্ত এলাকা যোগেশগঞ্জ হেমনগর। যোগেশগঞ্জের সরদারপাড়া ঘাটের কাছে মাধবকাঠি গ্রামে বাঁধ ভেঙে রায়মঙ্গলের জল ভাসিয়ে দিয়েছে গোটা গ্রাম।
বেসরকারি উদ্যোগে ত্রাণকাজে যাওয়া স্বেচ্ছাসেবীরা জানাচ্ছেন, শুধু মাধবকাঠিতেই সব হারিয়ে পথে বসেছে প্রায় আড়াইশো পরিবার। কোথাও কোমর জল, কোথাও হাঁটু জল। নদীর ধারে থাকা বাড়িগুলো পুরো ভেসে গিয়েছে ঝড়ের দাপটে এবং জলের তোড়ে।
হিঙ্গলগঞ্জেরই লাগোয়া রূপমারি গ্রাম। একই রকম আধডোবা গোটা বসতি। প্রায় ৬০টি পরিবার প্রায় নিরাশ্রয় এবং নিঃস্ব। আমফান এবং নদীর জলের জোড়া তাণ্ডবে ভেসে গিয়েছে তাঁদের সর্বস্ব।
আমপানের তাণ্ডবে প্রায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে চকপাটলী, মহিষপুকুর, পাটলি খানপুর এলাকা। বিস্তীর্ণ এলাকার কাঁচা বাড়ি ধসে গিয়েছে। জলের তোড়়ে ভেসে গিয়েছে। প্রায় ৫০০ পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন কাছের ফ্লাড সেন্টারে। এখানেও গবাদি পশু ভেসে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
নিঃস্ব মানুষদের কাছে চাল ডালের পাশাপাশি চিড়ে গুড়ের মতো শুকনো খাবার পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। সরকারি ত্রাণ সর্বত্র যথেষ্ট পরিমাণে পৌঁছনো যায়নি এখনও। এ ছবি চকপাটলি এলাকার।
খাবারদাবার ছাড়াও এ সব এলাকায় এখন ভীষণ রকম প্রয়োজন পানীয় জল, ওষুধ, জামাকাপড়। বেসরকারি উদ্যোগেও ত্রাণ নিয়ে এলাকায় যেতে শুরু করেছেন স্বেচ্ছাসেবীরা।
অধিকাংশ পরিবারই প্রায় এক কাপড়ে আশ্রয় নিয়েছেন ত্রাণ শিবিরে। জামাকাপড় নেই। অন্য দিকে এখনও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন এলাকার পর এলাকা। এই ছবি দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবার।
গোসাবা ব্লকের পুঁইজালি, জটিরামপুর, রানিপুর, মন্মথনগর এলাকাতেও ভয়াবহ ছবি। জায়গায় জায়গায় বাঁধ ভেঙেছে। সড়কপথে এই এলাকাগুলোতে পৌঁছনোর উপায় নেই। জলপথই একমাত্র ভরসা। অধিকাংশ জায়গাতেই জলের তলায় গ্রামের নলকূপগুলো। এই ছবি গোসাবার।
রাজ্য সরকারের জনস্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে বিভিন্ন জায়গায় পাউচে করে জল পৌঁছনো হচ্ছে। কিছু জায়গায় ভ্রাম্যমান জলপরিশোধনের গাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জেনারেটর দিয়ে সেই গাড়ি দিয়ে জল পরিশোধন করে গ্রামবাসীদের দেওয়া হচ্ছে।
মন্মথনগরে বাঁধ ভেঙেছে প্রায় ১ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে। নোনা জলের তলায় চলে গিয়েছে প্রায় ৬ হাজার বিঘে জমি। নষ্ট হয়ে গিয়েছে জমির ফসল।
সব মিলিয়ে কয়েক লক্ষ মানুষ অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। টেলি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। এখনও অনেক জায়গা দুর্গম। ফলে পৌঁছতে দেরি হচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ। এ ছবি পাটলি-খানপুর এলাকার।
বেশিরভাগ জায়গাতেই মানুষের হাহাকার একটা ত্রিপলের জন্য। চাল ডাল পেলেও সেই খাবার রান্না করার মতো পরিস্থিতি নেই। জ্বালানি নেই। জলমগ্ন বাড়িঘর। ফলে রান্না খাবার পৌঁছনো অনেক এলাকাতেই প্রয়োজন। এ ছবি চকপাটলি এলাকার। ত্রাণকাজে গিয়ে রবিবার এই ছবিগুলি তুলেছেন বিশ্বজিত্ হাজরা এবং শমিক চক্রবর্তী।