ফাইল চিত্র।
ত্রাণ-দুর্নীতি নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের নতুন তালিকা তো হচ্ছেই। সেই সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় আমপানে যাঁদের আংশিক ক্ষতি হয়েছে, তাঁদেরও তথ্য সংগ্রহ শুরু করল রাজ্য সরকার। প্রাশাসনিক সূত্রের খবর, ‘ভুয়ো’ ক্ষতিগ্রস্তদের নাম বাদ দিয়ে ব্লক স্তরে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা টাঙানোর কাজ চলছে। এখন পুরোপুরি বাদ যাওয়া ক্ষতিগ্রস্তদের নতুন তালিকা চূড়ান্ত করার আগে আমপানে যাঁদের বাড়ি আংশিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাঁদেরও তালিকা চাওয়া হয়েছে। তবে ‘ভুয়োদের’ চিহ্নিত করে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হলেও তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের কোনও সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
আমপানে ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি পুনর্গঠন বাবদ ক্ষতিপূরণ বিলি নিয়ে অভিযোগ ওঠা শুরু হতেই পদ্ধতিতে বদল এনেছিল রাজ্য। মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন, ক্ষতিপূরণ প্রাপকদের তালিকা থেকে ‘ভুয়োদের’ নাম বাদ দিয়ে সাত দিনের মধ্যে নির্ভুল তালিকা প্রকাশ করতে হবে। বঞ্চিত প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের নাম রাখতে হবে তালিকায়। সাত দিনের সময়সীমা শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার। নবান্নের নির্দেশ অনুযায়ী বিডিওদের কার্যালয়ে তালিকা টাঙানোর কাজও শুরু করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। তাতে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে নতুন সংযোজন হিসেবে থাকছে আংশিক ক্ষতিগ্রস্তদের নাম। ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় নতুন সংযোজিত বাসিন্দাদের দাবি আদৌ ঠিক কি না, তার যাচাই প্রক্রিয়া
চলছে প্রশাসনিক স্তরে। পুর এলাকাগুলিতে পুরসভার কর্মীরা ঘুরে ঘুরে তা যাচাই করছেন। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “প্রথমে বলা হয়েছিল, যাঁদের সামগ্রিক ক্ষতি হয়েছে, তাঁদের নামের তালিকা তৈরি করতে হবে। পরে বলা হয়, যাঁদের বাড়ির আংশিক ক্ষতি হয়েছে, তাঁদেরও নাম রাখতে হবে তালিকায়। সেই অনুযায়ী কাজ হচ্ছে।”
পর্যবেক্ষক শিবির ও প্রশাসনের অনেকের ধারণা, আমপান-তাণ্ডবে যাঁদের বাড়ি পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত, প্রথমে তাঁদেরই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ক্ষতিপূরণ বিলিবণ্টন নিয়ে পরের পর অভিযোগ এবং শোরগোল সরকারের ভাবমূর্তিতে ধাক্কা দিয়েছে। সেই ক্ষত সারাতেই এখন আংশিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের বিষয়টিও বিবেচনা করতে হচ্ছে সরকারকে। তবে প্রশাসনের এক কর্তার বক্তব্য, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতি হলেই সরকারি ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা। তাই এর পিছনে অন্য কোনও যুক্তি খোঁজা ঠিক হবে না।
আমপান-তাণ্ডবের পরে প্রায় দেড় মাস কেটে গিয়েছে। ‘ভুয়ো’ এবং আসল তালিকার টানাপড়েনে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের অনেকেই সময়মতো প্রাপ্য অর্থ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বলে অভিযোগ। যে-সব অসাধু লোকের জন্য তাঁদের এই দুর্ভোগ, সেই ‘দোষীদের’ বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি বলেই জানাচ্ছেন বিভিন্ন জেলার প্রশাসনিক কর্তারা। অনেকের বক্তব্য, জেলা-ভিত্তিক টাস্ক ফোর্সের যাচাই প্রক্রিয়া শেষ হলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে। “কেউ কেউ নিশ্চয়ই অসাধু কাজ করেছেন। তবে কারও কারও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ভুল করেও তো টাকা ঢুকে যেতে পারে! তাই হয়তো প্রশাসন এই বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে নিতে চাইছে,” বলেন জেলা প্রশাসনের এক কর্তা।