Cyclone Amphan

এখনও পলিথিনের নীচেই পড়তে হচ্ছে মানবী-প্রিয়াঙ্কাদের

ভর দুপুরে পলিথিনের নীচে বই মুখে বসেছিল মানবী বেরা। আগামী বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে।

Advertisement

নির্মল বসু

হিঙ্গলগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০২০ ০৫:১৩
Share:

এ ভাবেই চলছে পড়াশোনা

পলিথিনের ছাউনির নীচে বেজায় গরম। দিনে তো বটেই, রাতেও বড্ড ঘাম হয়। আমপানের পরে দু’মাস কেটে গেলেও এখনও হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের রূপমারি পঞ্চায়েতের গৌড়েশ্বর নদীর বাঁধের উপরে এই ছাউনির নীচে বসেই পড়াশোনা করতে হচ্ছে মানবী- প্রিয়াঙ্কাদের।

Advertisement

ভর দুপুরে পলিথিনের নীচে বই মুখে বসেছিল মানবী বেরা। আগামী বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। বাবা অভিজিৎ গাড়ি চালক। এক মাত্র মেয়ের মা জয়শ্রী স্বপ্ন দেখেন মেয়ে বড় হয়ে নার্স হবে। গ্রামের গরিব মানুষের সেবা করবে। কিন্তু এখন সংসারের যা হাল, তাতে জীবন কবে স্বাভাবিক হবে, জানেন না কেউই। করোনার ফলে রোজগার বন্ধ। ঘরবাড়িও ভেসে গিয়েছে। সরকারি ক্ষতিপূরণের টাকা তাঁরা পাননি বলেই জানিয়েছেন।

মানবীর কথায়, ‘‘অন্যের বাড়িতে গিয়ে বিদ্যুতের আলোয় পড়াশোনা করা সব সময়ে সম্ভব হয় না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং থাকে। তখন পড়াশোনার একমাত্র উপায় হ্যারিকেন। পলিথিনের নীচে বসে পড়তে গিয়ে ঘেমেনেয়ে একসা হতে হয়।’’ এর আগেও ঝড়ে ঘর ভেঙেছে পরিবারটির।

Advertisement

একই অবস্থা পলিথিনের নীচে বাস করা নবম শ্রেণির ছাত্রী প্রিয়াঙ্কা বেরার। পড়াশোনা করে শিক্ষিকা হয়ে গ্রামের গরিব ছেলেমেয়ের পড়ানোর স্বপ্ন দেখে সে। কয়েক বিঘা জমি চাষের ফসলের উপরে নির্ভর করেই দিন চলে তাদের। কিন্তু আমপানের ধাক্কায় বাঁধ ভাঙা নোনা জলের তলায় চলে যাওয়া জমি চাষের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় আগামী দিন কী ভাবে কাটবে, সেই চিন্তায় বিপর্যস্ত প্রিয়াঙ্কার মা প্রণতি। তাঁর কথায়, ‘‘মনে হয়, সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দাদের স্বপ্ন দেখা মানায় না।’’

মানবী এবং প্রিয়াঙ্কা দু’জনেই স্থানীয় রূপমারি হালদা বাঁশতলার গোবর্ধন বিদ্যালয়ের ছাত্রী। একসঙ্গে সাইকেলে যাতায়াত করত স্কুলে। কবে ফের ঘর বাঁধতে পারবে, তা-ও জানে না তাদের পরিবার। স্থানীয় পঞ্চায়েতের প্রধান সনাতন সর্দার বলেন, ‘‘আমপানের ক্ষতির টাকা কিছু মানুষ ইতিমধ্যে পেয়ে গিয়েছেন। বাকিরা যাতে দ্রুত পেতে পারেন, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।’’ প্রধানের কথায়, ‘‘পড়ুয়াদের পড়াশোনার যাতে ক্ষতি না-হয়, সেই জন্য ঘরে ঘরে যাতে দ্রুত বিদ্যুৎ পৌঁছয়, তা সংশ্লিষ্ট দফতরকে বলা হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement