কয়েক ঘণ্টার তাণ্ডবে বাংলাকে তছনছ করে গিয়েছে ঘূর্ণিঝড় আমপান (প্রকৃত উচ্চারণ উম পুন)। গত বুধবার আমপান আছড়ে পড়েছিল। তার পর যত দিন এগোচ্ছে, পরিস্থিতির ভয়াবহতা ততই প্রকট হচ্ছে। শুধুমাত্র গাছপালা ভেঙে পড়া এবং বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে যাওয়ার মধ্যেই ক্ষয়ক্ষতি সীমাবদ্ধ নেই।
ওই দিন প্রবল ঝড়বৃষ্টির পরে সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতির দিকেই মূলত নজর ছিল সকলের। প্রাথমিক ভাবে মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা একেবারেই বিকল হয়ে গিয়েছিল। সে সব পরিষেবা যত স্বাভাবিক হচ্ছে, ক্ষয়ক্ষতির সামগ্রিক চিত্রটাও ধীরে ধীরে সামনে আসছে।
সুন্দরবনের বাইরে হাসনাবাদ-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বাড়িঘর সমেত সর্বস্ব হারিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছেন সাধারণ মানুষ।
সুন্দরবনের মূল জঙ্গল লাগোয়া যোগেশগঞ্জের মাধবকাঠিতে ঘূর্ণিঝড়ের মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। আড়াইশোর বেশি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেখানে। জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে বাড়িঘর।
জল যেখানে উঠতে পারেনি, সেখানে আবার ঝড়ের দাপটে উড়ে গিয়েছে অগুনতি কাঁচাবাড়ির চাল। দরমার দেওয়াল সমেত খড়ের চাল ভেঙে পড়ার ছবিও সামনে এসেছে।
এর আগে ২০০৯ সালে আয়লার সময়ও একই অবস্থা দেখা দিয়েছিল মাধবকাঠিতে। সেইসময় রিং বাঁধ নির্মাণ করে জল আটকানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
কিন্তু বাঁধ বানালে ভেড়িতে নোনাজল ঢুকতে পারবে না, এই কারণে বাঁধ তৈরিই আটকে দেন স্থানীয় ভেড়ির মালিকরা, অভিযোগ স্থানীয়দের। এঁদের মধ্যে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারাও ছিলেন বলে অভিযোগ।
খারাপ অবস্থা হাসনাবাদের খাঁপুকুরের। সেখানে ১৬টি গ্রামসভার মধ্যে ৮টিই জলমগ্ন হয়ে গিয়েছে। কোথাও কোথাও একবুক পর্যন্ত জল জমেছে। বহু বাড়িঘর ভেঙে পড়েছে সেখানে। তাতে ছ’হাজারের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
হাসনাবাদের ঘুনিও একই ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাটলি খানপুরে ১০ থেকে ১২টি গ্রাম জলমগ্ন হয়ে রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের পর ছ’দিন কাটতে চললেও, এখনও ভাঙা বাঁধের মেরামত হয়নি সেখানে।
ন্যাজাটেও প্রচুর গাছপালা ভেঙে পড়েছে। জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে বহু বাড়িঘর ও দোকানপাট। তার মধ্যেই ত্রিপল খাটিয়ে কোনও রকমে মাথা গুঁজে রয়েছেন সাধারণ মানুষ।
এই সমস্ত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছে দিতে ইতিমধ্যেই সরকারের তরফে পদক্ষেপ করা হয়েছে। তবে ত্রাণ কম বলে অভিযোগ আসছে অনেক এলাকা থেকেই। ত্রাণ কাজে নেমেছে অনেক বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক সংগঠন।