আমপানের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড।দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি গ্রামেয় ছবি: পিটিআই।
শহরে বিদ্যুৎ ও জলের দাবিতে বিক্ষোভ-অবরোধ অব্যাহত। জেলায় সেই সমস্যা থাকলেও বিক্ষোভ তেমন ছড়ায়নি। বরং কোনও কোনও অঞ্চলে ত্রাণ সরবরাহ নিয়ে অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে। কোথাও পানীয় জলে টান। কোথাও খাবারের অভাব। কোথাও বা ত্রিপলের অভাবে খোলা আকাশের নীচে দিন কাটছে দুর্গতদের।
আমপানে সবচেয়ে বিধ্বস্ত দুই ২৪ পরগনার একাংশ। ঘর ভেঙেছে ঝড়ে। ফসল জলের তলায়। সব হারানোর ছবি চারপাশে। অধিকাংশের ঠাঁই হয়েছে ত্রাণ শিবিরে। এরই মধ্যে উত্তর ২৪ পরগনায় ঝড় কবলিত এলাকার মানুষজন নতুন করে ঘর বাঁধছেন। কেউ বা ফসল বাঁচাতে ছুটছেন খেতে। আবার বিকেল হলেই সবাই ফিরছেন শিবিরে। আমপানের পরে ছ’দিন কেটে গেলেও ত্রাণ শিবিরে ভিড় কমেনি। পানীয় জল ও খাবার মিলছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়া মানুষজন। দেগঙ্গার শিবিরে আশ্রয় নেওয়া পায়েল দে বলেন, ‘‘ছ’দিন শিবিরে আছি। ঠিক মতো খাবার পাচ্ছি না। কখনও কখনও একবেলা খাবার মিলছে।’’
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে বলে স্বীকার করে নিয়েছে প্রশাসন। উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তী সোমবার জানান, বহু ঘরবাড়ি ভেঙেছে। মানুষ নিজের ঘরে ফিরতে না পারায় ভিড় রয়েছে কিছু শিবিরে। তাঁদের পানীয় জল ও খাবারের ব্যবস্থার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে এখনও সময় লাগবে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ, নামখানা, পাথরপ্রতিমা, গোসাবা, বাসন্তী এলাকায় ট্যাঙ্ক বসিয়ে পানীয় জলের পাউচের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অধিকাংশ নলকূপে নোনাজল ঢুকে গিয়েছে। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ত্রাণ শিবিরে ও আশপাশের এলাকায় পানীয় জল সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে তা পর্যাপ্ত নয়। সুন্দরবন এলাকার অধিকাংশ জায়গায় পানীয় জল পৌঁছয়নি বলে অভিযোগ। চাষের জমিতেও নোনা জল ঢুকে গিয়েছে।
তুলনায় দুই মেদিনীপুরের ছবি কিছুটা ভাল। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের বেশির ভাগ ত্রাণ শিবিরই এখন ফাঁকা। অধিকাংশ এলাকায় ত্রাণও পৌঁছে গিয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলবর্তী এলাকার কাঁথি পুরসভা, কাঁথি-১ ব্লক ও রামনগরের কয়েকটি আয়লা কেন্দ্রে ২৫-৩০ জন লোক রয়েছেন বলে মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
নদিয়ার শিবচন্দ্রপুরের শ্রীমতি মণ্ডলের ঘরের চাল উড়ে গিয়েছে আমপানে। প্রতিবেশীর বাড়িই আশ্রয়। তাঁরা কোনও ত্রিপল এখনও পাননি। প্রশাসন সূত্রের খবর, ঝড়ের পরে ত্রাণের জন্য রাজ্য সরকারের কাছে চাল চাওয়া হয়েছে। তা এখনও এসে পৌঁছয়নি। জেলা থেকে ৫০ হাজার ত্রিপল চাওয়া হয়েছে। দুই দফায় ৭ হাজার ত্রিপল পাওয়া গিয়েছে। মঙ্গলবারের মধ্যে আরও ১৫ হাজার ত্রিপল আসার কথা। অনেকেই খোলা আকাশের নীচে দিন কাটাচ্ছেন।