CYclone Amphan

কোথায় বিদ্যুৎ? বিক্ষোভ চলছে, সিইএসসি-কে দুষলেন ফিরহাদ

দক্ষিণ শহরতলির এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘কল খুললেই জল, সুইচে হাত দিলেই আলো জ্বলে ওঠা বোধ হয় এখন স্বপ্ন!’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২০ ০৪:৩৬
Share:

আমপানের দাপটে ভেঙে পড়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। ছবি: পিটিআই।

কেটে গিয়েছে ১২০ ঘণ্টার বেশি।

Advertisement

কিন্তু ফের কবে আলো জ্বলবে, জল আসবে কবে, তা এখনও জা‌নেন না শহর, শহরতলি ও জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা। তাই বিদ্যুৎ ও জলের দাবিতে সোমবারও সকাল থেকে বিক্ষোভে ফুঁসল শহর থেকে জেলা। এ দিন সকাল থেকেই দক্ষিণ কলকাতার বেহালা, যাদবপুর, প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড, সন্তোষপুর, টালিগঞ্জ, বাঘাযতীন মোড়, হরিদেবপুর বাদামতলা, ঠাকুরপুকুর কালীতলা, ডায়মন্ড পার্ক, গড়িয়া, গরফা সাঁপুইপাড়া-সহ বেশ কিছু জায়গায় রাস্তা অবরোধ করেন স্থানীয়েরা। ঘেরাও হয় পর্ণশ্রী থানা।

হুগলির ভদ্রেশ্বর স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে প্রায় ৮ ঘণ্টা অবরোধ করেন স্থানীয়েরা। শেষে এ দিন বিকেলে সিইএসসি ওই এলাকায় কাজ শুরু করে। পূর্ব মেদিনীপুরের হেঁড়িয়া খেজুরি-১ ব্লক, উত্তর ২৪ পরগনার কার্তিকপুরে বারাসত-টাকি রোড অবরোধ করেও চলে বিক্ষোভ। নদিয়ার চাকদহের গোরপাড়া মোড়ে মানুষ ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করলে মন্ত্রী রত্না ঘোষ গিয়ে পরিস্থিতি সামলান। এখনও অন্ধকারে ডুবে, সুন্দরবন-সহ দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকা। জেলার ৬২টি সাব স্টেশনের মধ্যে ১৫টি অচল। প্রায় ৪৬ হাজার খুঁটি উপড়ে গিয়েছে।

Advertisement

পাঁচ দিন ধরে বিদ্যুৎ না-থাকায় সব থেকে সমস্যা হচ্ছে বয়স্ক, অসুস্থ ও শিশুদের। বিদ্যুৎ বিপর্যয় প্রসঙ্গে এ দিনও সিইএসসিকে দোষারোপ করেন কলকাতা পুরসভার প্রশাসক মণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, ‘‘মানুষের বিক্ষোভ মূলত জল ও আলো না-থাকার কারণেই। এর জন্য সিইএসসি-ই দায়ী। এনাফ ইজ এনাফ।’’ বাসিন্দাদেরও অভিযোগ, সিইএসসি-র কাস্টমার কেয়ার নম্বরে ফোন করলেও লাইন মিলছে না।

আবার সেনা, পুরসভা, বন দফতর মিলে ভেঙে পড়া গাছ কেটে রাস্তা পরিষ্কারের কাজ চালিয়ে গেলেও বিদ্যুৎসংযোগ ফেরাতে দেরি হচ্ছে কেন, তার সদুত্তর সিইএসসি-র কাছে নেই, ধৈর্য হারানো গ্রাহকদের তা বোধের অগম্য। বন দফতর সূত্রের খবর, যোধপুর পার্ক, শোভাবাজার, আলিপুর-সহ কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় ভেঙে পড়া গাছ কাটা হয়েছে। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ভাঙা গাছ সরাতে দফতরের ১৫০০ কর্মীকে ২৩টি দলে ভাগ করে কাজে নামিয়েছে পূর্ত দফতর। সোমবার রাতের মধ্যে উত্তর কলকাতার স্বামীজির বসত ভিটে থেকে ময়দান পর্যন্ত এবং প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের গাছ সরিয়ে ফেলা হবে বলে দফতর সূত্রের খবর। এ ছাড়া, এ দিনও বিভিন্ন জায়গায় ভেঙে পড়া গাছ কেটে সরিয়েছে সেনা। বেহালায় পাঁচ দিনের মাথায় গাছ কেটে সরানোয় স্থানীয় বাসিন্দারা বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানান। কাজ করছে এনডিআরএফ-এর ৩৯টি দল।

আরও পড়ুন: দুর্ভোগের শেষ নেই, চলছে শুধুই দায় ঠেলাঠেলি

আরও পড়ুন: উচ্চচাপের ঠেলাতেই দক্ষিণবঙ্গে আছড়াল আমপান, বলছেন আবহবিদরা

বেহালা কালীচরণ দত্ত রোডের বাসিন্দাদের অভিযোগ, এ দিন সেনাবাহিনী গাছ কেটে দিলেও, সিইএসসি কর্মীরা কখন আসবে, সে সম্পর্কে সারা দিনেও কোনও তথ্য মেলেনি। তবে রাত পর্যন্ত সার্ভে পার্ক, নাকতলা, যাদবপুর, রিজেন্ট এস্টেট, পর্ণশ্রী এলাকার এক অংশে মেরামতির কাজে দৌড়ঝাঁপ করতে দেখা গিয়েছে সিইএসসি কর্মীদের। হাওড়ার আন্দুলের মধ্য ঝোড়হাটে দুই সিইএসসি কর্মীকে বাসিন্দারা ঘেরাও করেছেন শুনে সেখানে যায় পুলিশ ও র‌্যাফ। অভিযোগ, স্থানীয়দের উপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ।

যদিও সিইএসসি-র দাবি, তাঁদের পরিষেবা এলাকায় ৯৫% জায়গায় বিদ্যুৎ চলে এসেছে। বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু জায়গায় লোকবল বাড়িয়ে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ চলছে। জেনারেটরও দেওয়া হচ্ছে জরুরি পরিষেবার ক্ষেত্রে। সিইএসি-র বক্তব্য, ঝড়ে গাছ পড়ে, তাদের বিদ্যুৎ পরিকাঠামোয় যে বিপুল ক্ষতি হয়েছে, তা দ্রুত সামলানোই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলিতে গ্রাহকদের ঘরে সাময়িক ভাবে বিদ্যুৎ পরিষেবা চালুর চেষ্টা করা হচ্ছে। গ্রাহকদের বড় অংশ অবশ্য তার প্রমাণ পাননি।

টানা বিদ্যুৎ না পেয়ে এ দিন সকালে প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের তালতলা মাঠের কাছে রাস্তা অবরোধ করেন স্থানীয় মহিলারা। চারু মার্কেট থানার সামনে টালিগঞ্জ রোড অবরোধ হয়। সন্তোষপুরের ১০৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, সিইএসসি-র গাড়ি তাঁদের এলাকায় আসার সময় সেটিকে অন্য ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাঁশদ্রোণীর বাসিন্দা পরভেজ মহম্মদ বলেন, ‘‘এলাকায় চারটে তার ছিঁড়ে পড়ে রয়েছে। ভেঙে পড়া গাছও নিজেরা কেটে সরিয়েছি।’’ এলাকার বহুতলে জল তোলার জন্য একটি জেনারেটর পাঠিয়ে প্রাক্তন কাউন্সিলর দায় সেরেছেন বলেও অভিযোগ। পুরসভার পানীয় জলের গাড়ি থেকে জল নিয়ে তিন-চার তলায় ওঠা সম্ভব হচ্ছে না অনেক বাসিন্দার পক্ষেই। বেহালার বড়বাগানের এক বৃদ্ধার কথায়, ‘‘কোমরে সমস্যা রয়েছে। রাস্তা থেকে জল নিয়ে আর দোতলায় ওঠানামা করতে পারছি না। বাইরে এক ব্যারেল জলের দাম ৫০ টাকা!’’

দক্ষিণ শহরতলির এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘কল খুললেই জল, সুইচে হাত দিলেই আলো জ্বলে ওঠা বোধ হয় এখন স্বপ্ন!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement